আগে উমরার তাওয়াফ করবে; নাকি তারাবী পড়বে?

প্রশ্ন যে ব্যক্তি এশার আযানের কয়েক মিনিট আগে উমরা করার উদ্দেশ্যে মক্কার হারামে প্রবেশ করেছে সে কি জামাতের সাথে তারাবীর নামায আদায় করার পর উমরা পালন করতে পারবে; যাতে করে সে ইমামের সাথে কিয়ামুল লাইল আদায় করার সওয়াব থেকে বঞ্চিত না হয়; যতক্ষণ না ইমাম সমাপ্ত করে? যে ব্যক্তি এশার আযানের কয়েক মিনিট আগে উমরা…

প্রশ্ন

যে ব্যক্তি এশার আযানের কয়েক মিনিট আগে উমরা করার উদ্দেশ্যে মক্কার হারামে প্রবেশ করেছে সে কি জামাতের সাথে তারাবীর নামায আদায় করার পর উমরা পালন করতে পারবে; যাতে করে সে ইমামের সাথে কিয়ামুল লাইল আদায় করার সওয়াব থেকে বঞ্চিত না হয়; যতক্ষণ না ইমাম সমাপ্ত করে?

যে ব্যক্তি এশার আযানের কয়েক মিনিট আগে উমরা করার উদ্দেশ্যে মক্কার হারামে প্রবেশ করেছে সে কি জামাতের সাথে তারাবীর নামায আদায় করার পর উমরা পালন করতে পারবে; যাতে করে সে ইমামের সাথে কিয়ামুল লাইল আদায় করার সওয়াব থেকে বঞ্চিত না হয়; যতক্ষণ না ইমাম সমাপ্ত করে?

আলহামদু লিল্লাহ।.

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ হচ্ছে সবকিছুর আগে তাওয়াফ শুরু করা; যেমনটি দ্ব্যর্থহীনভাবে উল্লেখ করেছেন ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) তাঁর ‘মানসাক’-এ। তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করার পর তাওয়াফ দিয়ে শুরু করেন। তাওয়াফের আগে তিনি তাহিয়্যাতুল মাসজিদও পড়েননি। বরং মসজিদে হারামের তাহিয়্যা হচ্ছে তাওয়াফ।

উরওয়া (রহঃ) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন আগমন করলেন তখন প্রথম তিনি যা করলেন সেটা হল ওযু করে তাওয়াফ করা।”[সহিহ বুখারী (১৬১৪) ও সহিহ মুসলিম (১২৩৫)]

হাফেয ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন:

এই হাদিসে দলিল রয়েছে যে, আগন্তুকের জন্য তাওয়াফ দিয়ে শুরু করা মুস্তাহাব। কেননা সেটাই হচ্ছে মসজিদে হারামের তাহিয়্যা বা সম্ভাষণ। কোন কোন শাফেয়ি আলেম ও তার সাথে একমত পোষণকারীগণ এই হুকুম থেকে সুন্দরী ও সম্ভ্রান্ত নারীকে বাদ রেখেছেন, যে নারী পুরুষের মাঝে বের হয় না। এমন নারী যদি দিনের বেলায় আগমন করেন তাহলে তার জন্য বিলম্বে রাতে তাওয়াফ করা মুস্তাহাব।

অনুরূপভাবে কেউ যদি ফরয নামায কিংবা ফরয জামাত কিংবা মুয়াক্কাদা জামাত কিংবা কাযা নামাযের জামাত ছুটে যাওয়ার আশংকা করেন তবে এ সব আমলকে তাওয়াফে কুদুম (আগমনী তাওয়াফ)-এর উপর প্রাধান্য দিবে।”[ফাতহুল বারী (৩/৪৭৯) থেকে সমাপ্ত]

এর থেকে জানা যায় যে, জামাতের সাথে নামায সুন্নতে মুয়াক্কাদা হলেও সেটাকে তাওয়াফের উপরে প্রাধান্য দেওয়া হবে।

ইবনে কুদামা বলেন:

“মসজিদে প্রবেশ করার পর যদি কোন ফরয নামাযের কথা কিংবা কাযা নামাযের কথা স্মরণে আসে কিংবা ফরয নামাযের ইকামত হয়ে যায় তাহলে তাওয়াফের উপর এগুলোকে অগ্রাধিকার দিবে। যেহেতু নামায হচ্ছে ফরয; আর তাওয়াফ হচ্ছে তাহিয়্যা। এবং যেহেতু তাওয়াফের মাঝে যদি ইকামত হয়ে যায় তাহলে নামাযের জন্য তাওয়াফ কর্তন করতে হয়। তাই নামায দিয়ে শুরু করা যুক্তিযুক্ত। আর যদি ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামায কিংবা বিতির নামায ছুটে যাওয়ার আশংকা করে কিংবা লাশ হাযির থাকে সেক্ষেত্রে এ আমলগুলোকে প্রাধান্য দিবে। যেহেতু এগুলো এমন সুন্নত আমল যেগুলো ছুটে যাবে; কিন্তু তাওয়াফ তো আর ছুটে যাবে না।”[আল-মুগনী (৩/৩৩৭) সমাপ্ত]

এ কারণ দর্শানো থেকে গ্রহণ করা যায় যে, ইমামের সাথে তারাবীর নামায পড়াকে তাওয়াফের উপর প্রাধান্য দেয়া হবে। যেহেতু সেটা এমন সুন্নত যা ছুটে যাওয়ার ভয় আছে।

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) কে প্রশ্ন করা হয়েছিল: হজ্জকারী ও উমরাকারীর উপর নামাযের জন্য তাওয়াফ বা সায়ী স্থগিত করা কি আবশ্যক?

জবাবে তিনি বলেন: “যদি ফরয নামায হয় তাহলে নামায পড়ার জন্য তাওয়াফ বা সায়ী স্থগিত করা আবশ্যক। কেননা জামাতের সাথে নামায আদায় করা ওয়াজিব। এর জন্য সায়ী স্থগিত করার রুখসত বা অবকাশ দেওয়া হয়েছে। তাই তার সায়ী বা তাওয়াফ থেকে বের হওয়াটা হবে বৈধ বের হওয়া। আর জামাতে প্রবেশ করাটা হবে ওয়াজিব প্রবেশকরণ।

পক্ষান্তরে যদি নফল নামায হয়; যেমন রমযানের তারাবীর নামায; তাহলে সেজন্য সায়ী ও তাওয়াফ স্থগিত করবে না।

তবে, উত্তম হচ্ছে এভাবে চেষ্টা করা যাতে করে তাওয়াফ তারাবীর পরে পড়ে; যেন জামাতের সাথে তারাবীর নামায আদায় করার ফযিলত থেকে নিজেকে বঞ্চিত না করে।”[মাজমুউ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়িলিস শাইখ ইবনে উছাইমীন (২২/৩৪৯-৩৫০)]

পূর্বোল্লেখিত আলোচনার ভিত্তিতে:

যে ব্যক্তি উমরা করার উদ্দেশ্যে এশার আযানের কয়েক মিনিট আগে মসজিদে হারামে প্রবেশ করেছে সে ব্যক্তি ইমামের সাথে তারাবীর নামায আদায় করে তারপর উমরা আদায় করবেন; যাতে করে তিনি মর্যাদাপূর্ণ উভয় আমল পালন করতে পারেন।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.