একমাত্র আল্লাহ্র কাছে অভিযোগ করার ধরণ কীরূপ?

প্রশ্ন আপনারা কি ব্যাখ্যা করতে পারেন যে, কেবলমাত্র আল্লাহ্‌র কাছে অভিযোগ করার ধরণ কীরূপ? সূরা ইউসুফে আল্লাহ্‌ তাআলা ইয়াকুব আলাইহিস সালামের কথা এভাবে উল্লেখ করেছেন যে: “আমি আমার অসহনীয় বেদনা ও আমার দুঃখের অভিযোগ শুধু আল্লাহর কাছেই পেশ করছি। আমি আল্লাহর কাছ থেকে যা জানি তোমরা তা জান না।”[সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৮৫] সূরা মুজাদালাতে এসেছে:…

প্রশ্ন

আপনারা কি ব্যাখ্যা করতে পারেন যে, কেবলমাত্র আল্লাহ্‌র কাছে অভিযোগ করার ধরণ কীরূপ? সূরা ইউসুফে আল্লাহ্‌ তাআলা ইয়াকুব আলাইহিস সালামের কথা এভাবে উল্লেখ করেছেন যে: “আমি আমার অসহনীয় বেদনা ও আমার দুঃখের অভিযোগ শুধু আল্লাহর কাছেই পেশ করছি। আমি আল্লাহর কাছ থেকে যা জানি তোমরা তা জান না।”[সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৮৫] সূরা মুজাদালাতে এসেছে: “আল্লাহ সেই নারীর কথা শুনেছেন যে তার স্বামীর ব্যাপারে আপনার সাথে বাদানুবাদ করছে এবং আল্লাহর কাছে অভিযোগ করছে। আল্লাহ আপনাদের কথোপকথন শুনছেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।”

আপনারা কি ব্যাখ্যা করতে পারেন যে, কেবলমাত্র আল্লাহ্‌র কাছে অভিযোগ করার ধরণ কীরূপ? সূরা ইউসুফে আল্লাহ্‌ তাআলা ইয়াকুব আলাইহিস সালামের কথা এভাবে উল্লেখ করেছেন যে: “আমি আমার অসহনীয় বেদনা ও আমার দুঃখের অভিযোগ শুধু আল্লাহর কাছেই পেশ করছি। আমি আল্লাহর কাছ থেকে যা জানি তোমরা তা জান না।”[সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৮৫] সূরা মুজাদালাতে এসেছে: “আল্লাহ সেই নারীর কথা শুনেছেন যে তার স্বামীর ব্যাপারে আপনার সাথে বাদানুবাদ করছে এবং আল্লাহর কাছে অভিযোগ করছে। আল্লাহ আপনাদের কথোপকথন শুনছেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।”

আলহামদু লিল্লাহ।.

অভিযোগ কেবলমাত্র আল্লাহ্‌র কাছেই পেশ করা উচিত। কেননা এটি স্বীয় প্রভুর প্রতি বান্দার পরিপূর্ণ দাসত্ব, তাওয়াক্কুল (ভরসা), তাঁর মুখাপেক্ষী তাঁর ভিখারী হয়ে থাকা এবং মানুষ থেকে পরিপূর্ণভাবে বিমুখ হয়ে তাঁর অভিমুখী হওয়ার মধ্যে পড়ে।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেছেন: “অভিযোগ দিতে হবে কেবল আল্লাহ্‌র কাছে; যেমনিভাবে নেককার বান্দা বলেছিলেন: আমি আমার অসহনীয় বেদনা ও আমার দুঃখের অভিযোগ শুধু আল্লাহর কাছেই পেশ করছি [মিনহাজুস সুন্নাহ (৪/২৪৪) থেকে সমাপ্ত]

ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেছেন:

আল্লাহ্‌ সুবহানাহু তাআলা তাঁর গ্রন্থে উত্তম ধৈর্য ধরা, উত্তম ক্ষমা করা ও উত্তম বিচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছেন। আমি শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াকে বলতে শুনেছি যে তিনি বলেন: ‘উত্তম ধৈর্য হচ্ছে যাতে বা যার সাথে কোন অভিযোগ নাই। উত্তম ক্ষমা করা হচ্ছে- যার সাথে কোন তিরস্কার নেই। উত্তম বিচ্ছেদ হচ্ছে যার সাথে কোন কষ্ট দেয়া নাই’। আল্লাহ্‌র কাছে অভিযোগ করা ধৈর্যের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। কেননা ইয়াকুব আলাইহিস সালাম ধৈর্য ধরার ওয়াদা করেছেন। আর কোন নবী যখন কোন ওয়াদা করেন তিনি সেটার বরখেলাফ করেন না। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি বলেছেন: আমি আমার অসহনীয় বেদনা ও আমার দুঃখের অভিযোগ শুধু আল্লাহর কাছেই পেশ করছি । অনুরূপভাবে আইয়ুব আলাইহিস সালাম সম্পর্কে আল্লাহ্‌ তাআলা জানিয়েছেন যে, তিনি তাকে ধৈর্যশীল পেয়েছেন। অথচ তিনি বলেছেন: “আমাকে কষ্ট পেয়ে বসেছে; আর আপনি হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়াবান।”[সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ৮৩] ধৈর্যের সাথে সাংঘর্ষিক হচ্ছে আল্লাহ্‌র ব্যাপারে অভিযোগ করা; আল্লাহ্‌র কাছে অভিযোগ করা নয়। যেমনটি বর্ণিত আছে যে, এক লোক অপর এক লোককে অন্য এক লোকের কাছে দারিদ্র ও জরুরতের (নিরুপায়ের) অভিযোগ করতে দেখে বলল: যিনি তোমার প্রতি দয়া করবেন তার ব্যাপারে অভিযোগ করছ এমন ব্যক্তির কাছে যে তোমার প্রতি দয়া করবে না। এরপর পংক্তি আওড়ালো:

যদি তুমি কোন পরীক্ষার শিকার হও তাহলে তাতে ধৈর্য ধর; মহানুভব ব্যক্তির ধৈর্যের মত; যেহেতু তিনি তোমার ব্যাপারে সম্যক অবগত।

যদি তুমি কোন বনী আদমের কাছে অভিযোগ কর; তবে তুমি যেন দয়াময়ের বিরুদ্ধে নির্দয়ের কাছে অভিযোগ করছ।[মাদারিজুস সালেকীন (২/১৬০)]

তিনি আরও বলেন:

অভিযোগ দুই প্রকার। প্রথম প্রকার: আল্লাহ্‌র কাছে অভিযোগ করা। এটি ধৈর্যের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। যেমনিভাবে ইয়াকুব আলাইহিস সালাম বলেছিলেন: আমি আমার অসহনীয় বেদনা ও আমার দুঃখের অভিযোগ শুধু আল্লাহর কাছেই পেশ করছি । অথচ তিনিই বলেছেন: “উত্তম ধৈর্য ধারনই (আমার সিদ্ধান্ত)”। আইয়ুব আলাইহিস সালাম বলেছেন: আমাকে কষ্ট পেয়ে বসেছে। অথচ আল্লাহ্‌ তাআলা তাকে ধৈর্যের গুণে বিশেষিত করেছেন। ধৈর্যশীলদের নেতা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “হে আল্লাহ্‌! আমি আপনার কাছে আমার দুর্বল শক্তি ও দুর্বল উপকরণের অভিযোগ করছি”।

দ্বিতীয় প্রকার: পরীক্ষাগ্রস্ত ব্যক্তির মুখের ভাষায় কিংবা আচরণের ভাষায় অভিযোগ করা। এই অভিযোগ ও ধৈর্য একত্রিত হতে পারে না। বরং এটি ধৈর্যের বিপরীত এবং ধৈর্যকে নাকচ করে দেয়। অতএব, আল্লাহ্‌র ব্যাপারে অভিযোগ করা ও আল্লাহ্‌র কাছে অভিযোগ করা দুটোর মাঝে পার্থক্য আছে।[উদ্দাতুস সাবেরীন (পৃষ্ঠা-১৭) থেকে সমাপ্ত]

শাইখ সা’দী (রহঃ) বলেন:

“আল্লাহ্‌র কাছে অভিযোগ করা ধৈর্যের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। বরং যা ধৈর্যের সাথে সাংঘর্ষিক সেটা হল মাখলুকের কাছে অভিযোগ করা।”[তাফসিরে সা’দী (পৃষ্ঠা-৪১১)]

অতএব আল্লাহ্‌র কাছে অভিযোগ হল: কোন বান্দা কোন কিছুতে আক্রান্ত হলে কিংবা কোন বিপদ তার উপর এসে পড়লে কিংবা কোন প্রয়োজনে পড়ে গেলে: কেবলমাত্র আল্লাহ্‌র কাছে অভিযোগ পেশ করা। তাঁর কাছেই প্রয়োজনটি উত্থাপন করা ও পেশ করা। প্রয়োজন ও অভিযোগের ক্ষেত্রে যা হচ্ছে আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের বৈশিষ্ট্য। তাই বান্দা তার প্রভুকে স্মরণ করবে, তাঁকে ডাকবে, তাঁর কাছে মিনতি করবে, তওবা করবে, ফিরে আসবে এবং বিভিন্ন ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর নিকটবর্তী হবে। কেননা এটা আল্লাহর পরিপূর্ণ দাসত্ব ও তাঁর উপর তাওয়াক্কুলের অন্তর্ভুক্ত।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *