কোন নারী রমযান মাসে রান্নাবান্নায় থেকে সময়কে কিভাবে কাজে লাগাতে পারেন?
প্রশ্ন আমি জানতে আগ্রহী মর্যাদাপূর্ণ রমযান মাসে বেশি নেকি হাছিল করার জন্য কোন আমল করা মুস্তাহাব… যিকির-আযকার, ইবাদত-বন্দেগী, মুস্তাহাব বিষয়াবলি। আমি যেগুলো জানি: তারাবীর নামায পড়া, বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা, বেশি বেশি ইস্তিগফার করা, কিয়ামুল লাইল পড়া…। কিন্তু আমি এমন কিছু কথা জানতে চাই যেগুলো আমি প্রতিদিন আওড়াতে পারব; যখন আমি রান্নাবান্নায় কিংবা পারিবারিক…
প্রশ্ন
আমি জানতে আগ্রহী মর্যাদাপূর্ণ রমযান মাসে বেশি নেকি হাছিল করার জন্য কোন আমল করা মুস্তাহাব… যিকির-আযকার, ইবাদত-বন্দেগী, মুস্তাহাব বিষয়াবলি। আমি যেগুলো জানি: তারাবীর নামায পড়া, বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা, বেশি বেশি ইস্তিগফার করা, কিয়ামুল লাইল পড়া…। কিন্তু আমি এমন কিছু কথা জানতে চাই যেগুলো আমি প্রতিদিন আওড়াতে পারব; যখন আমি রান্নাবান্নায় কিংবা পারিবারিক অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকব তখন। আমি নেকি লাভের সুযোগ নষ্ট করতে চাই না।
আলহামদু লিল্লাহ।.
এই মহান মাসে নেক আমল ও ভাল কাজের প্রতি এই আগ্রহের জন্য আল্লাহ্ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।
আপনি যে নেক আমলগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন সেগুলোর সাথে আরও যে সব আমল যোগ করা যেতে পারে: দান করা, খাবার খাওয়ানো, উমরা করতে যাওয়া, যার সুযোগ আছে ইতিকাফ করা।
আর কাজ করার সময় যে কথাগুলো আওড়ানো যেতে পারে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: সুবহানাল্লাহ্, লা ইলাহ ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার বলা। ইস্তিগফার করা, দোয়া করা, মুয়াজ্জিনের আযানের জবাব দেয়া। আপনার জিহ্বা যেন আল্লাহ্র যিকির দিয়ে সতেজ থাকে। সামান্য কিছু কথা উচ্চারণ করে মহা সওয়াব প্রাপ্তির সুযোগ গ্রহণ করুন। প্রতিবার সুবহানাল্লাহ্ বলা একটি দান, প্রতিবার আলহামদু লিল্লাহ্ বলা একটি দান, প্রতিবার আল্লাহু আকবার বলা একটি দান, প্রতিবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলা একটি দান।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “প্রত্যেক হাড় (নিরাপদে) ভোর করায় সদকা করা আবশ্যক। প্রতিবার সুবহানাল্লাহ্ বলা একটি দান। প্রতিবার আলহামদু লিল্লাহ্ বলা একটি দান। প্রতিবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা একটি দান। প্রতিবার আল্লাহু আকবার বলা একটি দান। সৎ কাজের আদেশ দেয়া একটি দান। অসৎ কাজের নিষেধ করা একটি দান। দুই রাকাত সালাতুদ দোহা (চাশতের নামায) পড়লে এ সবকিছুর বদলে যথেষ্ট হয়ে যাবে।”[সহিহ মুসলিম (৭২০)]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “দুটো বাণী উচ্চারণে হালকা, মিযানে ভারী এবং আর-রহমানের কাছে প্রিয়:
سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ ، سُبْحَانَ اللَّهِ الْعَظِيمِ
(সুবহানাল্লাহি ওয়াবি হামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আযীম)।”[সহিহ বুখারী (৬৬৮২) ও সহিহ মুসলিম (২৬৮৪)]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি বলবে:
سُبْحَانَ اللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِحَمْدِهِ
(সুবহানাল্লাহি আযীম ওয়াবি হামদিহি) তার জন্য জান্নাতে একটি খর্জুর বৃক্ষ রোপন করা হবে।”[সুনানে তিরমিযি (৩৪৬৫); আলবানী হাদিসটিকে ‘সহিহ’ বলেছেন]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি বলবে:
أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الْعَظِيمَ الَّذِي لا إِلَهَ إِلا هُوَ الْحَيَّ الْقَيُّومَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
আস্তাগফিরুল্লাহাল আযীম আল্লাযি লা ইলাহা ইল্লাহু ওয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম ওয়া আ-তুবু ইলাইহি) তার গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে; এমনকি সে যদি জিহাদ থেকে পলায়ন করে থাকে তবুও।[সুনানে আবু দাউদ (১৫১৭), সুনানে তিরমিযি (৩৫৭৭); আলবানী সহিহ আবু দাউদ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “পৃথিবীতে কোন মুসলিম যদি কোন দোয়া করে আল্লাহ্ তাকে তার প্রার্থিত বিষয় দান করেন কিংবা অনুরূপ কোন মন্দ তার থেকে দূর করে দেন; যতক্ষণ পর্যন্ত না সে কোন পাপের দোয়া করে কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নের দোয়া করে। তখন এক লোক বলল: তাহলে আমরা অধিক দোয়া করব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: আল্লাহ্ও অধিক দিবেন।”[সুনানে তিরমিযি (৩৫৭৩); আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যখন তোমরা মুয়াজ্জিনকে আযান দিতে শুনবে তখন মুয়াজ্জিন যা যা বলে তোমরাও তা তা বলবে। এরপর আমার উপর দরুদ পড়বে। কেননা যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ পড়ে আল্লাহ্ তার উপর দশবার রহমত বর্ষণ করেন। এরপর আমার জন্য ওসিলা প্রার্থনা করবে। ওসিলা জান্নাতের এমন একটি মর্যাদা যা কেবল আল্লাহ্র বান্দাদের মধ্যে কেবল একজন বান্দার জন্য সমীচীন। আমি আশা করছি, আমিই হব সেই ব্যক্তি। যে ব্যক্তি আমার জন্য ওসিলার প্রার্থনা করবে তার জন্য আমার শাফায়াতপ্রাপ্তি অবধারিত হয়ে যায়।”[সহিহ মুসলিম (৩৮৪)]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন: “কোন ব্যক্তি আযান শুনে যদি বলে:
اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ ، وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ ، آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ ، وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ
আল্লাহুম্মা রাব্বা হাযিহিদ্ দাওয়াতিত্ তাম্মাহ, ওয়াস সালাতিল কায়িমা। আতি মুহাম্মাদানিল ওসিলাতা ওয়াল ফাযিলাত; ওয়াব আছহু মাকামাম মাহমুদানিল্লাযি ওয়াদতাহ) তার জন্য আমার শাফায়াত অবধারিত হয়ে যায়।”[সহিহ বুখারী (৬১৪)]
আরও জানতে দেখুন: 4156 নং প্রশ্নোত্তর।
আল্লাহ্ আমাদেরকে ও আপনাকে উপকারী ইল্ম ও নেক আমলের রিযিক দান করুন।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।