খুলা তালাকের পরিচয় ও পদ্ধতি

প্রশ্ন খুলা তালাক বলতে কী বুঝায়? খুলা তালাক প্রয়োগ করার পদ্ধতি কী? যদি স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দিতে না চায় তা সত্ত্বেও কী তালাক সংঘটিত হতে পারে? আমেরিকান সোসাইটি সম্পর্কে কি বলবেন? যদি স্ত্রীর কাছে তার স্বামী মনপূত না হয় (কোন কোন ক্ষেত্রে; যেহেতু স্বামী দ্বীনদার)। স্ত্রী ধারণা করে যে, তার তালাক দেয়ার স্বাধীনতা রয়েছে।…

প্রশ্ন

খুলা তালাক বলতে কী বুঝায়? খুলা তালাক প্রয়োগ করার পদ্ধতি কী? যদি স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দিতে না চায় তা সত্ত্বেও কী তালাক সংঘটিত হতে পারে? আমেরিকান সোসাইটি সম্পর্কে কি বলবেন? যদি স্ত্রীর কাছে তার স্বামী মনপূত না হয় (কোন কোন ক্ষেত্রে; যেহেতু স্বামী দ্বীনদার)। স্ত্রী ধারণা করে যে, তার তালাক দেয়ার স্বাধীনতা রয়েছে।

খুলা তালাক বলতে কী বুঝায়? খুলা তালাক প্রয়োগ করার পদ্ধতি কী? যদি স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দিতে না চায় তা সত্ত্বেও কী তালাক সংঘটিত হতে পারে? আমেরিকান সোসাইটি সম্পর্কে কি বলবেন? যদি স্ত্রীর কাছে তার স্বামী মনপূত না হয় (কোন কোন ক্ষেত্রে; যেহেতু স্বামী দ্বীনদার)। স্ত্রী ধারণা করে যে, তার তালাক দেয়ার স্বাধীনতা রয়েছে।

আলহামদু লিল্লাহ।.

খুলা হচ্ছে: কোন কিছুর বিনিময়ে স্ত্রী বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া। এক্ষেত্রে স্বামী সে বিনিময়টি গ্রহণ করে স্ত্রীকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে; এ বিনিময়টি স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে প্রদত্ত মোহরানা হোক কিংবা এর চেয়ে বেশি সম্পদ হোক কিংবা এর চেয়ে কম হোক।

এ বিধানের দলিল হচ্ছে, আল্লাহ্‌র বাণী: “আর তাদেরকে যা কিছু দিয়েছো (বিদায় করার সময়) তা থেকে কিছু ফিরিয়ে নেয়া তোমাদের জন্য বৈধ নয়। তবে এটা স্বতন্ত্র, স্বামী-স্ত্রী যদি আল্লাহ নির্ধারিত সীমারেখা রক্ষা করে চলতে পারবে না বলে আশংকা করে, তাহলে এমতাবস্থায় যদি তোমরা আশংকা করো, তারা উভয়ে আল্লাহ্‌ নির্ধারিত সীমার মধ্যে অবস্থান করতে পারবে না, তাহলে স্ত্রীর কিছু বিনিময় দিয়ে তার স্বামী থেকে বিচ্ছেদ লাভ করায় উভয়ের কোন গুনাহ নেই।”[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ২২৯]

সুন্নাহ্‌ থেকে এর দলিল হচ্ছে, সাবেত বিন ক্বাইস বিন শাম্‌মাস এর স্ত্রী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে বললেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আমি সাবেত বিন ক্বাইসের উপর চারিত্রিক বা দ্বীনদারির কোন দোষ দিব না। কিন্তু, আমি মুসলিম হয়ে কুফরিতে লিপ্ত হতে অপছন্দ করি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তুমি কি তার বাগানটি ফিরিয়ে দিবে? সাবেত মোহরানা হিসেবে তাকে বাগান দিয়েছিল। সে বলল: জ্বি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: বাগানটি গ্রহণ করে তাকে বিচ্ছিন্ন করে দাও”[সহিহ বুখারী (৫২৭৩)]

এই ঘটনা থেকে আলেমগণ গ্রহণ করেন যে, কোন নারী যদি তার স্বামীর সাথে অবস্থান করতে না পারে সেক্ষেত্রে বিচারক স্বামীকে বলবেন তাকে তালাক দিয়ে দিতে; বরং স্বামীকে তালাক দেয়ার নির্দেশ দিবেন।

এর পদ্ধতি হচ্ছে- স্বামী বিনিময় গ্রহণ করবেন কিংবা তারা দুইজন এ বিষয়ে একমত হবেন; এরপর স্বামী তার স্ত্রীকে বলবেন: আমি তোমাকে বিচ্ছিন্ন করে দিলাম কিংবা আমি তোমাকে খুলা তালাক দিলাম, কিংবা এ জাতীয় অন্য কোন শব্দ।

তালাক হচ্ছে স্বামীর অধিকার। স্বামী তালাক দিলেই তালাক সংঘটিত হবে। দলিল হচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “তালাক তারই অধিকার যার রয়েছে সহবাস করার অধিকার” অর্থাৎ স্বামীর। [সুনানে ইবনে মাজাহ (২০৮১), আলবানী ‘ইরওয়াউল গালিল’ গ্রন্থে (২০৪১) হাদিসটিকে ‘হাসান’ আখ্যায়িত করেছেন]

এ কারণে আলেমগণ বলেন: যে ব্যক্তিকে তালাক দেয়ার জন্য অন্যায়ভাবে জবরদস্তি করা হয়েছে; সে ব্যক্তি যদি এ জবরদস্তি থেকে বাঁচার জন্য তালাক দেয় তাহলে সে তালাক সংঘটিত হবে না।[দেখুন আল-মুগনী (১০/৩৫২)]

আপনাদের সেখানে মানবরচিত আইনে স্ত্রী নিজেই নিজেকে তালাক দিতে পারার যে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন: যদি সেটা এমন কোন কারণে হয় যে কারণে মহিলার জন্য তালাক চাওয়া জায়েয আছে; যেমন- স্ত্রী তার স্বামীকে অপছন্দ করা, স্বামীর সাথে একত্রে থাকতে না পারা, কিংবা স্বামীর দ্বীনদারির ঘাটতি ও হারামে লিপ্ত হওয়ার স্পর্ধাকে অপছন্দ করা ইত্যাদি, তাহলে স্ত্রীর তালাক চাওয়াতে কোন দোষ নেই। তবে, এ অবস্থাতে স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে যে মোহরানা গ্রহণ করেছে সেটা ফেরত দিতে হবে।

আর যদি যথাযথ কারণ ছাড়া স্ত্রী তালাক চায় তাহলে সেটা নাজায়েয। এমতাবস্থায় কোর্ট যদি তালাক কার্যকর করে তাহলে সেটা ইসলামি শরিয়তে গ্রাহ্য হবে না। বরং এ মহিলা এ পুরুষের স্ত্রী হিসেবে বলবৎ থাকবে। এখানে হচ্ছে সমস্যা। সমস্যাটা হলো- এ নারী আইনের দৃষ্টিতে তালাকপ্রাপ্তা; ইদ্দত শেষ হলে সে হয়ত অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। অথচ প্রকৃতপক্ষে সে তালাকপ্রাপ্ত নয়; সে অন্য একজনের স্ত্রী।

শাইখ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উছাইমীন এ ধরণের মাসয়ালার ক্ষেত্রে বলেন:

আমরা এখন একটা সমস্যা সংকুল মাসয়ালার সামনে আছি। এ নারী তার স্বামীর বিবাহাধীনে থাকায় অন্য কোন পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে না। কিন্তু, বাহ্যতঃ কোর্টের রায়ের ভিত্তিতে সে তালাকপ্রাপ্তা নারী; যখনি তার ইদ্দত পূর্ণ হবে তার জন্য অন্য স্বামী গ্রহণ করা বৈধ। এ সমস্যা নিরসনে আমার দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে কিছু দ্বীনদার ও ভাল মানুষকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে; যাতে করে তারা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সমঝোতা করতে পারে। সমঝোতা না হলে, স্ত্রী তার স্বামীকে বিনিময় দিতে হবে; যাতে করে এটি ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে খুলা তালাক হিসেবে গণ্য হয়।

শাইখ উছাইমীনের লিকাউল বাব আল-মাফতুহ; নং ৫৪, (৩/১৭৪) দারুল বাছিরা প্রকাশনী, মিশর

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.