জনৈক খ্রিস্টানের উত্থাপিত সংশয়: তার দাবী হচ্ছে যে, কুরআনে এম

প্রশ্ন জনৈক খ্রিস্টান আমার কাছে এ প্রশ্নটি উত্থাপন করেছে। আমি এই প্রশ্নটির জবাব চাই; যাতে করে তাকে পাঠাতে পারি। সে বলে: কুরআনের সূরা বাক্বারাতে আছে: “ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ব্যাপারে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই”। এরপর আমরা কুরআনের অন্যান্য স্থানে পাই যে, কুরআন মুশরিকদেরকে হত্যা করার প্রতি মুসলিমদেরকে উদ্বুদ্ধ করছে। “মুশরিকদেরকে যেখানে পাও সেখানে হত্যা কর”। এ আয়াত…

প্রশ্ন

জনৈক খ্রিস্টান আমার কাছে এ প্রশ্নটি উত্থাপন করেছে। আমি এই প্রশ্নটির জবাব চাই; যাতে করে তাকে পাঠাতে পারি। সে বলে: কুরআনের সূরা বাক্বারাতে আছে: “ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ব্যাপারে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই”। এরপর আমরা কুরআনের অন্যান্য স্থানে পাই যে, কুরআন মুশরিকদেরকে হত্যা করার প্রতি মুসলিমদেরকে উদ্বুদ্ধ করছে। “মুশরিকদেরকে যেখানে পাও সেখানে হত্যা কর”। এ আয়াত ছাড়াও অন্যান্য অনেক আয়াতে বিধর্মীদেরকে হত্যা করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এটি কি সবিরোধিতা নয়?!!

জনৈক খ্রিস্টান আমার কাছে এ প্রশ্নটি উত্থাপন করেছে। আমি এই প্রশ্নটির জবাব চাই; যাতে করে তাকে পাঠাতে পারি। সে বলে: কুরআনের সূরা বাক্বারাতে আছে: “ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ব্যাপারে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই”। এরপর আমরা কুরআনের অন্যান্য স্থানে পাই যে, কুরআন মুশরিকদেরকে হত্যা করার প্রতি মুসলিমদেরকে উদ্বুদ্ধ করছে। “মুশরিকদেরকে যেখানে পাও সেখানে হত্যা কর”। এ আয়াত ছাড়াও অন্যান্য অনেক আয়াতে বিধর্মীদেরকে হত্যা করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এটি কি সবিরোধিতা নয়?!!

আলহামদু লিল্লাহ।.

আলহামদু লিল্লাহ্‌; ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ব্যাপারে জোর-জবরদস্তিকে নাকচ করা এবং মুশরিকদের সাথে লড়াই করার নির্দেশ দেয়ার মধ্যে কোন সবিরোধিতা নেই। মুশরিকদের বিরুদ্ধে লড়াই করার নির্দেশ তাদেরকে ইসলাম ধর্মে প্রবেশ করতে জবরদস্তি করার উদ্দেশ্য নয়। যদি তাই হত তাহলে ইহুদী, খ্রিস্টান ও অন্যান্যদেরকে ইসলাম ধর্মে প্রবেশে জবরদস্তি করা হত; যখন তাদের উপর ইসলাম বিজয়ী হয়েছে এবং তারা শাসকের আনুগত্য মেনে নিয়েছে। ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে যার ছিটেফোঁটাও জানা রয়েছে এমন প্রত্যেক ব্যক্তি জানে যে, এটি ঘটেনি। কেবল ইহুদী-খ্রিস্টানেরা ইসলামী রাষ্ট্রের শাসকের অধীনে বসবাস করেছে এবং তারা সেই রাষ্ট্রে তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করেছে।

আয়াতে কিতাল (লড়াই) দ্বারা উদ্দেশ্য দুটো বিষয়:

এক: যারা মুসলমান রাষ্ট্রের উপর হামলা করতে চায়, মুসলমানদের দেশে কুফর ও কাফেরদের আধিপত্য বিস্তার করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা। এটি ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর পক্ষে প্রতিরক্ষামূলক লড়াই। এ লড়াই প্রত্যেক দেশেই রয়েছে ইতিহাস যার সাক্ষী; সেই দেশের ধর্ম যেটাই হোক না কেন। এটা যদি না হত তাহলে কোন রাষ্ট্র থাকত না, কোন সুলতানও থাকত না।

দুই: সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করা; যেই ব্যক্তি মানুষকে আল্লাহ্‌র ধর্ম থেকে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে এবং মুসলিমদেরকে তাদের প্রভুর ধর্মের দিকে ডাকতে না দেয়, ইসলামের নূর প্রচার করতে না দেয়; যাতে করে হেদায়েত সন্ধানী তা দেখতে পারে এবং অমুসলিমদেরকে এই ধর্ম সম্পর্কে জানতে না দেয়। এটাকে বলে আক্রমনাত্মক জিহাদ। এই উভয় জিহাদই ইসলামী শরিয়তে অনুমোদিত।

ইবনুল আরাবী আল-মালেকি (রহঃ) বলেন: আল্লাহ্‌র বাণী: فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِينَ (হত্যা কর)[সূরা তাওবা, আয়াত: ৫] সকল মুশরিককের ক্ষেত্রে আম (সামগ্রিক)। তবে সুন্নাহ্‌ এর পূর্বে যাদেরকে কথা আলোচিত হয়েছে তাদেরকে এই সামগ্রিকতা থেকে বিশেষিত করেছে। যেমন- নারী, শিশু, পুরোহিত, সাধারণ মানুষ; ইতিপূর্বে যা আলোচিত হয়েছে তার আলোকে। সুতরাং মুশরিক শব্দের আওতায় থেকে গেল: যোদ্ধা ও যে যুদ্ধের জন্য ও নির্যাতন করার জন্য প্রস্তুত। এভাবে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, আয়াতের উদ্দেশ্য হচ্ছে: ‘সেই সব মুশরিকদেরকে হত্যা কর যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর’।”[আহকামুল কুরআন (৪/১৭৭) থেকে সমাপ্ত]

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “আমি মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্‌ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহ্‌র রাসূল, নামায কায়েম করে ও যাকাত প্রদান করে।” — এর উদ্দেশ্য হচ্ছে যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা; যাদের বিরুদ্ধে আল্লাহ্‌ লড়াই করার অনুমতি দিয়েছেন। সন্ধিবদ্ধদেরকে এখানে উদ্দেশ্য করা হয়নি; যাদের সাথে কৃত সন্ধি আল্লাহ্‌ পূরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।[মাজমুউল ফাতাওয়া (২০/১৯) থেকে সমাপ্ত]

তিনি আরও বলেন: লড়াই হবে তাদের সাথে যারা আমরা আল্লাহ্‌র ধর্মকে বিজয়ী করতে চাইলে আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে। যেমনটি আল্লাহ্‌ তাআলা বলেছেন: “আর যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তোমরাও আল্লাহ্‌র পথে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর; কিন্তু সীমালংঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সীমালংঘনকারীদেরকে ভালবাসেন না।”[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ১৯০][মাজমুউল ফাতাওয়া (২৮/৩৫৪)]

এর পক্ষে আরও প্রমাণ বহন করে যা বুরাইদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোন সৈন্যদলের উপর কিংবা অভিযানের উপর কাউকে আমীর বানাতেন তখন তিনি তাকে তাকওয়া অবলম্বন করার এবং তার সাথে থাকা মুসলিমদের কল্যাণের ব্যাপারে সবিশেষ উপদেশ দিতেন। এরপর তিনি বলতেন:… যখন তুমি তোমার শত্রু মুশরিকদের মুখোমুখি হবে তখন তুমি তাদেরকে তিনটি বিষয়ের দিকে আহ্বান কর; এগুলোর মধ্যে যেটিতে তারা সাড়া দেয় তাদের কাছ থেকে সেটিই গ্রহণ কর এবং তাদের সাথে লড়াই পরিহার কর। তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিবে; যদি তারা সাড়া দেয় তাহলে সেটি গ্রহণ করবে এবং তাদের সাথে লড়াই পরিহার করবে। এরপর তাদেরকে তাদের দেশত্যাগের আহ্বান করবে। যদি তারা অস্বীকৃতি জানায় তাহলে তাদেরকে জিযিয়া দিতে বলবে। যদি তারা এতে সাড়া দেয় তাহলে তা গ্রহণ করবে এবং তাদের সাথে লড়াই করা থেকে বিরত থাকবে। আর যদি তারা এতেও অস্বীকৃতি জানায় তাহরে আল্লাহ্‌র সাহায্য চেয়ে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই-এ নেমে যাও।[সহিহ মুসলিম (১৭৩১)]

ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বুরাইদা (রাঃ) এর হাদিসের শিক্ষাগুলো উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন: এর মধ্যে রয়েছে: জিযিয়া প্রত্যেক কাফের থেকে গ্রহণ করা হবে। এটি হাদিসটির সরাসরি বাহ্যিক মর্ম। এর থেকে কোন কাফেরকে বাদ দেয়া হয়নি। এবং এমনটি বলাও যাবে না যে, এটি আহলে কিতাবদের জন্য খাস। কেননা হাদিসের ভাষ্য আহলে কিতাবদের জন্য খাস করাকে নাকচ করে। তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অভিযানগুলো ও তাঁর অধিকাংশ সেনাদল ছিল মূর্তিপূজারী আরবদের বিরুদ্ধে। এ কথাও বলা সঠিক নয় যে, কুরআনে কারীম প্রমাণ করছে যে, এটি আহলে কিতাবদের জন্য খাস। কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা আহলে কিতাবদের বিরুদ্ধে লড়াই করার নির্দেশ দিয়েছেন যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা জিযিয়া প্রদান করে। সুতরাং আহলে কিতাবদের থেকে জিযিয়া নেয়া হবে কুরআনের দলিলের ভিত্তিতে। আর সাধারণ সব কাফেরদের থেকে জিযিয়া গ্রহণ করা হবে সুন্নাহ্‌র দলিলের ভিত্তিতে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাজুসদের কাছ থেকেই জিযিয়া নিয়েছেন। তারা হচ্ছে অগ্নি উপাসক। তাদের মাঝে ও মূর্তিপূজকদের মাঝে কোন তফাৎ নেই।[আহকামু আহলিল যিম্মা (১/৮৯)]

এটি স্পষ্ট বিষয় যে, যে ব্যক্তিকে তার ধর্মে অটল থাকার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে ও তার থেকে জিযিয়া নেয়া; সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার কিংবা তাকে ইসলাম ধর্মে প্রবেশ করতে বাধ্য করার আদেশ দেয়া হয়নি।

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.