দুনিয়াবী কোন

প্রশ্ন খাঁটি নেক আমলের ওসিলা দিয়ে দোয়া করলে সেই দোয়া কবুলের কথা উদ্ধৃত হয়েছে। আমার প্রশ্ন হলো: যদি কোন মানুষ তার কোন নেক আমলের ওসিলা দিয়ে তার প্রভুর কাছে দোয়া করে; তাহলে এর মাধ্যমে কি সে তার নেক আমলের প্রতিদান দুনিয়াতে পেয়ে গেল; নাকি কিয়ামতের দিন তাকে সওয়াব দেয়া হবে? অনুরূপভাবে একই নেক আমল দিয়ে…

প্রশ্ন

খাঁটি নেক আমলের ওসিলা দিয়ে দোয়া করলে সেই দোয়া কবুলের কথা উদ্ধৃত হয়েছে। আমার প্রশ্ন হলো: যদি কোন মানুষ তার কোন নেক আমলের ওসিলা দিয়ে তার প্রভুর কাছে দোয়া করে; তাহলে এর মাধ্যমে কি সে তার নেক আমলের প্রতিদান দুনিয়াতে পেয়ে গেল; নাকি কিয়ামতের দিন তাকে সওয়াব দেয়া হবে? অনুরূপভাবে একই নেক আমল দিয়ে একাধিকবার কি দোয়া করা যায়?

খাঁটি নেক আমলের ওসিলা দিয়ে দোয়া করলে সেই দোয়া কবুলের কথা উদ্ধৃত হয়েছে। আমার প্রশ্ন হলো: যদি কোন মানুষ তার কোন নেক আমলের ওসিলা দিয়ে তার প্রভুর কাছে দোয়া করে; তাহলে এর মাধ্যমে কি সে তার নেক আমলের প্রতিদান দুনিয়াতে পেয়ে গেল; নাকি কিয়ামতের দিন তাকে সওয়াব দেয়া হবে? অনুরূপভাবে একই নেক আমল দিয়ে একাধিকবার কি দোয়া করা যায়?

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

নেক আমল দিয়ে আল্লাহ্‌র কাছে ওসিলা দেয়া মুস্তাহাব এবং এটি কবুলের সম্ভাবনাময়; যেমনটি গুহাবাসীদের ঘটনায় উদ্ধৃত হয়েছে।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন:

“আর আল্লাহ্‌র নির্দেশিত নেক আমলের মাধ্যমে তাঁর কাছে ওসিলা দেয়া ও তাঁর অভিমুখী হওয়া; গুহাতে আশ্রয় নেয়া ঐ তিন ব্যক্তির দোয়ার মত যারা তাদের নেক দিয়ে, নবী ও নেককারদের দোয়া ও শাফায়াত দিয়ে ওসিলা দিয়েছিলেন— এ ব্যাপারে কোন মতভেদ নেই। বরং এটি আল্লাহ্‌র এ বাণীতে আদেশকৃত ওসিলা গ্রহণের অন্তর্ভুক্ত। তিনি বলেন: “হে ঈমানদারেরা! তোমরা আল্লাহ্‌কে ভয় কর এবং তাঁর নৈকট্য লাভের জন্য ওসিলা অনুসন্ধান কর।”[সূরা মায়িদা, আয়াত: ৩৫] এবং তাঁর বাণী: “তারা যাদেরকে ডাকে তারাই তো তাদের রবের নৈকট্য লাভের ওসিলা সন্ধান করে যে, তাদের মধ্যে কে কত নিকটতর হতে পারে এবং তারা তাঁর দয়া প্রত্যাশা করে ও তাঁর শাস্তিকে ভয় করে।”[সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ৫৭]

আল্লাহ্‌র কাছে ওসিলা সন্ধান করা: অর্থাৎ যেটার মাধ্যমে আল্লাহ্‌র কাছে ও নিকটে পৌঁছা যাবে; সেটি কল্যাণ আনয়ন ও অকল্যাণ প্রতিরোধের উদ্দেশ্য নিয়ে তাঁর ইবাদত, আনুগত্য ও নির্দেশ পালনের ভিত্তিতে হোক কিংবা তাঁকে ডাকা, তাঁর কাছে আশ্রয় চাওয়ার মাধ্যমে হোক।”[ইক্বতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকীম (২/৩১২)]

দুই:

নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহ্‌র কাছে ওসিলা দেয়া এটি ঐ নেক আমলের সওয়াব কমাবে না; চাই সেটা কোন দুনিয়াবী বিষয় হাছিলের জন্য ওসিলা দেয়া হোক কিংবা আখিরাতের বিষয় হাছিলের জন্য ওসিলা দেয়া হোক। কেননা সেটি একটি নেক আমল; যা নৈকট্য হিসেবে পালিত হয়েছে, এর মাধ্যমে দুনিয়াবী কিছুকে উদ্দেশ্য করা হয়নি।

শাইখ আব্দুর রহমান আল-বার্‌রাককে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:

নেক আমলের মাধ্যমে ওসিলা দান কি সেই আমলের সওয়াবকে কমিয়ে ফেলবে?

জবাবে তিনি বলেন: নেক আমলের মাধ্যমে ওসিলা দেয়া অর্থাৎ নেক আমলের মাধ্যমে দোয়াতে ওসিলা দেয়া— এটি আখিরাতে উক্ত নেক আমলের সওয়াব কমাবে না। কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা নেক আমলকে দুনিয়া ও আখিরাতে সুখের উপকরণ বানিয়েছেন। তিনি বলেন: “আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ভীতি অবলম্বন করে আল্লাহ্‌ তার জন্য তার বিষয়কে সহজ করে দেন।”[সূরা ত্বালাক্ব, আয়াত: ৪] তিনি আরও বলেন: “আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ভীতি অবলম্বন করে তিনি তার পাপসমূহ মোচন করে দেন এবং তাকে মহাপুরস্কার দেন।”[সূরা ত্বালাক্ব, আয়াত: ৫] তিনি আরও বলেন: “আর যে কেউ আল্লাহ ভীতি অবলম্বন করে আল্লাহ তার জন্য (উত্তরণের) পথ করে দেন এবং তিনি তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে রিযিক দেন।”[সূরা ত্বালাক্ব, আয়াত: ২-৩]।

ব্যাপক অর্থবোধক দোয়ার মধ্যে এসেছে:

رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

(হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন এবং আখিরাতেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।)[সূরা বাকারা, আয়াত: ২০১]

তিনি তাঁর খলিল ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের ব্যাপারে বলেন:

وَآتَيْنَاهُ فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَإِنَّهُ فِي الْآخِرَةِ لَمِنَ الصَّالِحِينَ

(আর আমরা তাঁকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিয়েছিলাম এবং নিশ্চয় তিনি আখিরাতে সৎকর্মপরায়ণদের দলভুক্ত)[সূরা নাহল, আয়াত: ১২২]

কিন্তু একজন মুসলিমের কর্তব্য আখিরাতে সওয়াবপ্রাপ্তির জন্য নেক আমল করা। কেননা আখিরাতই হলো মহান লক্ষ্য। এর সাথে নেক আমলকারীদেরকে আল্লাহ্‌ তাআলা সহজায়ন ও রিযিকে প্রশস্ততার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেই আশা রাখা।

কোন মানুষের জন্য এটি জায়েয নয় যে, নেক আমলের মাধ্যমে তার চিন্তাচেতনা ও উদ্দেশ্য হবে কেবল দুনিয়াবী কল্যাণ লাভ; আখিরাতের সওয়াবপ্রাপ্তি ব্যতিরেকে। কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা সে সব ব্যক্তিদের নিন্দা করেছেন যারা বলে: رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا (হে আমাদের প্রভু, আমাদেরকে দুনিয়াতে দিন)। তিনি বলেন:

فَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَقُولُ رَبَّنَآ ءَاتِنَا فِي ٱلدُّنۡيَا وَمَا لَهُۥ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنۡ خَلَٰق

(মানুষের মধ্যে যারা বলে: ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে দুনিয়াতেই দিন’। আখিরাতে তার জন্য কোনও অংশ নেই।)[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ২০০]

তিনি আরও বলেন:

مَنْ كَانَ يُرِيدُ الْعَاجِلَةَ عَجَّلْنَا لَهُ فِيهَا مَا نَشَاءُ لِمَنْ نُرِيدُ ثُمَّ جَعَلْنَا لَهُ جَهَنَّمَ يَصْلَاهَا مَذْمُومًا مَدْحُورًا وَمَنْ أَرَادَ الْآخِرَةَ وَسَعَى لَهَا سَعْيَهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَئِكَ كَانَ سَعْيُهُمْ مَشْكُورًا

(কেউ আশু সুখ-সম্ভোগ কামনা করলে আমরা যাকে যা ইচ্ছে এখানেই সত্ত্বর দিয়ে থাকি; পরে তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত করি যেখানে সে শাস্তিতে দগ্ধ হবে নিন্দিত ও অনুগ্রহ হতে দূরীকৃত অবস্থায়। আর যারা মুমিন হয়ে আখিরাত কামনা করে এবং সেটার জন্য যথাযথ চেষ্টা করে তাদের প্রচেষ্টা পুরস্কারযোগ্য।)[সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত: ১৮-১৯]

আল্লাহ্‌ তাআলা জানিয়েছেন: তিনি চান তারা যেন আখিরাতকে চায়। তিনি বলেন:

تُرِيدُونَ عَرَضَ الدُّنْيَا وَاللَّهُ يُرِيدُ الْآخِرَةَ

(তোমরা কামনা কর পার্থিব সম্পদ এবং আল্লাহ্‌ চান আখেরাত)[সূরা আনফাল, আয়াত: ৬৭]

তিনি আরও বলেন:

مَنْ كَانَ يُرِيدُ ثَوَابَ الدُّنْيَا فَعِنْدَ اللَّهِ ثَوَابُ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَكَانَ اللَّهُ سَمِيعًا بَصِيرًا

(কেউ দুনিয়ার পুরস্কার চাইলে তবে সে জেনে রাখুক; দুনিয়া ও আখিরাতের পুরস্কার আল্লাহর কাছেই রয়েছে। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।)[সূরা নিসা, আয়াত: ১৩৪] আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ। ফাতাওয়া আল-ইসলাম আল-ইয়াওম থেকে সমাপ্ত:

https://goo.gl/QV29ci

পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি নেক আমল করে আর শুরু থেকেই নিয়ত থাকে দুনিয়া কিংবা ইচ্ছা থাকে যে, পরবর্তীতে এর মাধ্যমে সে দুনিয়া হাছিলের জন্য ওসিলা দিবে; তাহলে এমন ব্যক্তির দুনিয়াপ্রাপ্তির নিয়ত ও উদ্দেশ্য আখিরাতের সওয়াবের নিয়তকে যতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত করবে ততটুকু তার সওয়াবে ঘাটতি হওয়া প্রতীয়মান হয়।

তিন:

কোন একটি নেক আমল দিয়ে একাধিকবার আল্লাহ্‌র কাছে ওসিলা দিতে আপত্তি নেই। কেননা সেটি শরিয়ত অনুমোদিত দোয়া, আল্লাহ্‌র নৈকট্য অর্জন এবং আল্লাহ্‌র এ বাণীর উপর আমল: “হে ঈমানদারেরা! তোমরা আল্লাহ্‌কে ভয় কর এবং তাঁর নৈকট্য লাভের জন্য ওসিলা অনুসন্ধান কর। আর তাঁর রাস্তায় জিহাদ কর। যাতে করে তোমরা সফলকাম হতে পার।”[সূরা মায়িদা, আয়াত: ৩৫]

আমরা আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করছি, তিনি যেন আমাদের ও আপনার আমলগুলো কবুল করে নেন।

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.