ধর্তব্য হল চাঁদ দেখা; জ্যোর্তিবিদ্যার হিসাব নয়

প্রশ্ন কোন মুসলিমের জন্য রোযা শুরু করা ও শেষ করার ক্ষেত্রে জ্যোর্তিবিদ্যার উপর নির্ভর করা কি জায়েয? নাকি অবশ্যই চাঁদ দেখতে হবে? কোন মুসলিমের জন্য রোযা শুরু করা ও শেষ করার ক্ষেত্রে জ্যোর্তিবিদ্যার উপর নির্ভর করা কি জায়েয? নাকি অবশ্যই চাঁদ দেখতে হবে? আলহামদু লিল্লাহ।. ইসলামী শরিয়া (আইন) সহজ। এর বিধিবিধান সাধারণ ও সর্বস্তরের মানুষ…

প্রশ্ন

কোন মুসলিমের জন্য রোযা শুরু করা ও শেষ করার ক্ষেত্রে জ্যোর্তিবিদ্যার উপর নির্ভর করা কি জায়েয? নাকি অবশ্যই চাঁদ দেখতে হবে?

কোন মুসলিমের জন্য রোযা শুরু করা ও শেষ করার ক্ষেত্রে জ্যোর্তিবিদ্যার উপর নির্ভর করা কি জায়েয? নাকি অবশ্যই চাঁদ দেখতে হবে?

আলহামদু লিল্লাহ।.

ইসলামী শরিয়া (আইন) সহজ। এর বিধিবিধান সাধারণ ও সর্বস্তরের মানুষ ও জ্বিনকে অন্তর্ভুক্তকারী; তারা শিক্ষিত হোক, অশিক্ষিত হোক, শহরবাসী হোক কিংবা গ্রামবাসী হোক। এ কারণে আল্লাহ্‌ তাদের জন্য ইবাদতসমূহের সময় জানার পদ্ধতি সহজ করেছেন। তিনি ইবাদতসমূহের শুরু ও শেষের সময় জানার জন্য এমন কিছু আলামত নির্ধারণ করেছেন যে আলামতগুলো জানা সবার নাগালে। উদাহরণস্বরূপঃ সূর্যাস্তকে মাগরিবের ওয়াক্ত শুরু ও আসরের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার আলামত হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। লালিমা অস্ত যাওয়াকে এশার ওয়াক্ত প্রবেশের আলামত হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। মাসের শেষদিকে চন্দ্র অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার পর নতুন চাঁদ দেখা যাওয়াকে নতুন চন্দ্র মাস শুরু হওয়া ও আগের মাসের সমাপ্তির আলামত হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তিনি মাসের শুরু জানার জন্য আমাদেরকে এমন কিছু জানার দায়িত্ব দেননি যেটা গুটি কয়েক মানুষ ছাড়া অন্যেরা জানে না; আর তা হচ্ছে— জ্যোর্তিবিদ্যা কিংবা নক্ষত্র গণনাশাস্ত্র। নতুন চাঁদ দেখাকে মুসলমানদের রোযা শুরু করা ও রোযা ভঙ্গ করার আলামত হিসেবে নির্ধারণ করে কুরআন ও সুন্নাহতে অনেক দলিল উদ্ধৃত হয়েছে। ঈদুল আযহা ও আরাফার দিন নির্ধারণের বিষয়টিও অনুরূপ। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এই মাস পাবে সে যেন এই মাসে সিয়াম পালন করে।”[সূরা বাক্বারা; ২:১৮৫]। তিনি আরও বলেন: “তারা আপনাকে নতুন চন্দ্রসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে; বলুন: সেগুলো মানুষের (কাজকর্ম) ও হজ্জের সময় নির্ধারক।”[সূরা বাক্বারা, ২:১৮৯] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যখন তোমরা সেটা (চাঁদ) দেখবে তখন রোযা রাখবে এবং যখন তোমরা সেটা (চাঁদ) দেখবে তখন রোযা ভঙ্গ করবে। আর যদি মেঘাচ্ছন্ন হয় তাহলে তোমরা ত্রিশদিন পূর্ণ করবে।” অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোযা রাখাকে রমযান মাসের নব চাঁদ দেখার সাথে সম্পৃক্ত করেছেন এবং রোযা ভাঙ্গাকে শাওয়াল মাসের নব চাঁদ দেখার সাথে সম্পৃক্ত করেছেন; তিনি নক্ষত্র গণনা কিংবা গ্রহসমূহের পরিভ্রমণের সাথে সম্পৃক্ত করেননি। এভাবেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যামানায়, খুলাফায়ে রাশেদীনের যামানায়, চার ইমামের যামানায় এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে তিন প্রজন্মের উত্তমতার ব্যাপারে সাক্ষ্য দিয়েছেন সে যামানায় আমল হয়েছে। তাই চন্দ্রমাস সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে চাঁদ দেখা বাদ দিয়ে জ্যোর্তিবিদ্যার শরণাপন্ন হওয়া বিদাতের অন্তর্ভুক্ত; যাতে কোন কল্যাণ নাই এবং এর সপক্ষে শরিয়তে কোন দলিল নাই…। কল্যাণ হচ্ছে যার গত হয়েছেন দ্বীনি বিষয়ে তাদের অনুসরণ করা। অকল্যাণ হচ্ছে দ্বীনি বিষয়ে নব প্রচলিত বিদাতের অনুসরণ; আল্লাহ্‌ আমাদেরকে, আপনাদেরকে ও সকল মুসলমানকে প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত যাবতীয় ফিতনা থেকে রক্ষা করুন।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.