নফল নামায কিংবা ফরয নামায পড়ার জন্য কি তাওয়াফ কর্তন করা যায়?

প্রশ্ন হিজর বা হাতীমের বাইরে দিয়ে তাওয়াফের সাথে হাতীমের ভেতরে নামায পড়া কী: উল্লেখ্য, হাতীমে প্রবেশ করা হবে অপর পার্শ্ব থেকে যেটা কাবার অভ্যন্তর হিসেবে গণ্য নয়। এভাবে নামায পড়লে কি তাওয়াফ কর্তিত হবে? এবং এভাবে নামায পড়া কি জায়েয? হিজর বা হাতীমের বাইরে দিয়ে তাওয়াফের সাথে হাতীমের ভেতরে নামায পড়া কী: উল্লেখ্য, হাতীমে…

প্রশ্ন

হিজর বা হাতীমের বাইরে দিয়ে তাওয়াফের সাথে হাতীমের ভেতরে নামায পড়া কী: উল্লেখ্য, হাতীমে প্রবেশ করা হবে অপর পার্শ্ব থেকে যেটা কাবার অভ্যন্তর হিসেবে গণ্য নয়। এভাবে নামায পড়লে কি তাওয়াফ কর্তিত হবে? এবং এভাবে নামায পড়া কি জায়েয?

হিজর বা হাতীমের বাইরে দিয়ে তাওয়াফের সাথে হাতীমের ভেতরে নামায পড়া কী: উল্লেখ্য, হাতীমে প্রবেশ করা হবে অপর পার্শ্ব থেকে যেটা কাবার অভ্যন্তর হিসেবে গণ্য নয়। এভাবে নামায পড়লে কি তাওয়াফ কর্তিত হবে? এবং এভাবে নামায পড়া কি জায়েয?

আলহামদু লিল্লাহ।.

হিজর কাবা শরীফের একটি অংশ। এর ভেতরে দিয়ে তাওয়াফ করা সহিহ নয়। কেননা তাওয়াফকারী গোটা বায়তুল্লাহ্‌ শরীফ তাওয়াফ করার আদিষ্ট; অর্থাৎ বায়তুল্লাহ্‌র বাহিরে দিয়ে। এ বিষয়ে 46597 নং প্রশ্নোত্তরে আলোচনা করা হয়েছে।

সহিহ মতানুযায়ী, তাওয়াফের জন্য পরম্পরা থাকা শর্ত। এটি মালেকী ও হাম্বলি মাযহাবের অভিমত। কিঞ্চিৎ সময়ের বিরতি ক্ষমাযোগ্য। তবে, ফরয নামাযের ইকামত হলে কিংবা জানাযার নামায শুরু হলে নামাযে যোগ দিবে। এরপর বাকী তাওয়াফ শেষ করবে। জানাযার নামাযের জন্য তাওয়াফ কর্তন করার ক্ষেত্রে কোন কোন ফিকাহবিদ আলেম দ্বিমত করেছেন। আর কিছু কিছু আলেম বিতির কিংবা তারাবীর মত নফল নামায শুরু হলে, কিংবা ফজরের সুন্নত নামাযের মত কোন সুন্নতে মুয়াক্কাদা ছুটে যাওয়ার ভয় হলে এবং তাওয়াফটি নফল তাওয়াফ হলে তাওয়াফ কর্তন করাকে জায়েয বলেছেন। আর ফরয তাওয়াফ কেবল ফরয নামায ও জানাযার নামায ছাড়া অন্য কোন কারণে কর্তন করা যাবে না।

আল-হাত্তাব (রহঃ) বলেন: “ফরয তাওয়াফ ফরয নামায ছাড়া অন্য কোন কারণে কর্তন করা যাবে না। যদি কেউ ওয়াজিব তাওয়াফ পালনে রত থাকেন এবং ফজরের নামায শুরু হওয়ার উপক্রম হয় এবং ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামায ছুটে যাওয়ার ভয় হয় তদুপরি সে ব্যক্তি তাওয়াফ কর্তন করবেন না। হ্যাঁ, আশহাবের শ্রুতিলিপিতে কিছুটা শিথিলতার কথা আছে যে, নফল তাওয়াফ হলে এবং ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামায ছুটে যাওয়ার আশংকা করলে সে ব্যক্তি ফজরের নামায পড়ে নিবেন; এরপর অবশিষ্ট তাওয়াফ শেষ করবেন।”[মাওয়াহিবুল জালিল (৩/৭৭) থেকে সমাপ্ত]

আর যারা তাওয়াফ শুদ্ধ হওয়ার জন্য পরম্পরার শর্ত করেননি -যেমন শাফেয়ি মাযহাবের আলেমগণ- তারাও কোন ওজর ছাড়া তাওয়াফ কর্তন করাকে মাকরূহ বলেছেন; যেহেতু পরম্পরার শর্ত করার ব্যাপারে আলেমদের মতভেদ রয়েছে।

‘ক্বালয়ুবী ও উমাইরা’ রচিত হাশিয়া (পার্শ্বটীকা) তে রয়েছে: “তাওয়াফকালে পানাহার করা, থুথু ফেলা, আঙ্গুল ফুটানো, আঙ্গুলের ভেতর আঙ্গুল ঢুকানো, দুই হাত পেছনে নিয়ে পিঠ মোড়া দেওয়া, পায়খানা-পেশাব আটকে রাখা…ফরযে কিফায়া নামায, নফল নামায, তেলাওয়াতের সেজদা কিংবা কৃতজ্ঞতাস্বরূপ সেজদার জন্য তাওয়াফ কর্তন করা মাকরূহ। এ বিধান প্রযোজ্য হবে যদি কোন ওজর না থাকে।”[সমাপ্ত] [আরও দেখুন: “আল-মাজমু (৮/৬৫), আল-মুগনী (৩/১৯৭), মাতালিবু উলিন নুহা (২/৩৯৯)]

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন: মাসয়ালা: যদি তাওয়াফকালে ফরয নামাযের ইকামত হয়? আমরা বলব: এক্ষেত্রে আলেমগণ মতভেদ করেছেন: যদি নফল তাওয়াফ হয় তাহলে তাওয়াফ কর্তন করে নামাযে দাঁড়িয়ে যাবে। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যখন নামাযের ইকামত হবে তখন ফরয নামায ছাড়া আর কোন নামায নেই”। যেহেতু এ তাওয়াফের সর্বোচ্চ মর্যাদা হচ্ছে- এটি নফলের অধিভুক্ত। সুতরাং ফরয নামাযের ইকামত হলে তাওয়াফ কর্তন করে ফরয নামায পড়বে, এরপর বাকী তাওয়াফ শেষ করবে। আর যদি ফরয তাওয়াফ হয় তাহলে তাওয়াফ চালিয়ে যাবে; এমনকি তার ফরয নামায যদি ছুটে যায় তবুও।

অপর একদল আলেম বলেন: তাওয়াফে পরম্পরা শর্ত নয়। তাওয়াফ কর্তন করা এবং তাওয়াফের চক্করগুলোর মাঝে পরম্পরা কর্তন করা জায়েয; এতে কোন অসুবিধা নেই।

কিন্তু, আমাদের জেনে রাখা উচিত একটি ইবাদতের অংশগুলোর মধ্যে পরম্পরা থাকা ওয়াজিব; যেন এটি একটি ইবাদত হয়; যদি অংশগুলোর মাঝে বিচ্ছেদ থাকার পক্ষে দলিল থাকে সেটা আলাদা কথা। এ ধরণের ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য অভিমত হল: ফরয নামাযের ইকামত হলে নামাযের শেষে অবশিষ্ট তাওয়াফ সম্পাদন করার নিয়তে তাওয়াফ কর্তন করবে।

যদি তাওয়াফ কর্তন করে: আমরা ধরে নিই যে, হিজর (হাতীম) অতিক্রমকালে তাওয়াফ কর্তন করল। নামায শেষ হওয়ার পর যে স্থানে তাওয়াফ স্থাগিত করেছিল সে স্থান থেকে তাওয়াফ শুরু করবে; নাকি নতুনভাবে তাওয়াফ শুরু করবে?

এ ব্যাপারে আলেমগণ মতভেদ করেছেন। মাযহাবের মশহুর মতানুযায়ী: চক্করটি নতুনভাবে শুরু করতে হবে। অগ্রগণ্য অভিমত হল: এটি শর্ত নয়। তিনি যেখানে স্থগিত করেছেন সেখান থেকে শুরু করতে পারবেন। কেননা স্থগিত করার আগের অংশ আদায় হয়ে গেছে। যেটা আদায় হয়ে গেছে সেটার পুনরাবৃত্তি করা ওয়াজিব নয়। কেননা আমরা যদি পুনরাবৃত্তিকে ওয়াজিব বলি তাহলে আমরা একটা ইবাদত দুইবার পালন করা ওয়াজিব করে দিলাম। এমন কোন নজির নাই।

মাসয়ালা: জানাযার নামাযের জন্য তাওয়াফ কর্তন করা?

আপাতঃ অভিমত হচ্ছে: হ্যাঁ। কেননা জানাযার নামায সংক্ষিপ্ত। তাই বিরতির সময় বেশি নয় বিধায় এটি ক্ষমার্হ।[আল-শারহুল মুমতি (৭/২৭৬) থেকে সমাপ্ত]

সংক্ষিপ্ত বিরতির ব্যাপারে সালাফ থেকে যা এসেছে: জামিল বিন যায়েদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি ইবনে উমর (রাঃ) কে দেখেছি এক গরমের দিন তিনি তিন তাওয়াফ (তিন চক্কর) করলেন; এরপর গরমে আক্রান্ত হয়ে হিজরে প্রবেশ করে বসলেন। এরপর আগে যতটুকু তাওয়াফ করেছেন তারপর থেকে বাকী তাওয়াফ শেষ করলেন। আতা (রহঃ) থেকে বর্ণিত আছে: তাওয়াফের মাঝে বিশ্রাম নেয়ার জন্য বসতে কোন অসুবিধা নাই।[দেখুন: মুসান্নিফে ইবনে আবি শায়বা (৪/৪৫৪), ইবনে হাযম রচিত “আল-মুহাল্লা” (৫/২১৯)]

সারকথা:

তাওয়াফের মধ্যে পরম্পরা আবশ্যক। ফরয নামায কিংবা জানাযার নামায না হলে নামাযের জন্য তাওয়াফ কর্তন করবেন না। যদি নফল তাওয়াফ হয় আর তাওয়াফকারী বিতিরের নামায ছুটে যাওয়ার আশংকা করেন তাহলে এক রাকাত বিতিরের জন্য তাওয়াফ কর্তন করার শিথিলতা আছে। যেহেতু এটি সামান্য বিষয়।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.