পরপর গর্ভধারণের প্রেক্ষিতে চল্লিশ দিনের আগে ভ্রূণ নষ্ট করার হুকুম

প্রশ্ন জনৈক নারী দ্বিতীয় সপ্তাহ বা তৃতীয় সপ্তাহেই পরীক্ষা করে জেনেছেন যে, তিনি গর্ভবতী। এ সময় তিনি চার মাসের বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছেন। তার জন্যে কি গর্ভপাত করা জায়েয হবে; যেহেতু এ গর্ভের কারণে তার ক্ষতি হবে (চার মাসের মাথায় গর্ভধারণ)। এবং দুগ্ধপানকালীন সময়ে তার সন্তানেরও ক্ষতি হবে। যেহেতু সে নারী গর্ভধারণকালীন সময়ে দুগ্ধপান বন্ধ রাখতে…

প্রশ্ন

জনৈক নারী দ্বিতীয় সপ্তাহ বা তৃতীয় সপ্তাহেই পরীক্ষা করে জেনেছেন যে, তিনি গর্ভবতী। এ সময় তিনি চার মাসের বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছেন। তার জন্যে কি গর্ভপাত করা জায়েয হবে; যেহেতু এ গর্ভের কারণে তার ক্ষতি হবে (চার মাসের মাথায় গর্ভধারণ)। এবং দুগ্ধপানকালীন সময়ে তার সন্তানেরও ক্ষতি হবে। যেহেতু সে নারী গর্ভধারণকালীন সময়ে দুগ্ধপান বন্ধ রাখতে বাধ্য হবেন।

জনৈক নারী দ্বিতীয় সপ্তাহ বা তৃতীয় সপ্তাহেই পরীক্ষা করে জেনেছেন যে, তিনি গর্ভবতী। এ সময় তিনি চার মাসের বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছেন। তার জন্যে কি গর্ভপাত করা জায়েয হবে; যেহেতু এ গর্ভের কারণে তার ক্ষতি হবে (চার মাসের মাথায় গর্ভধারণ)। এবং দুগ্ধপানকালীন সময়ে তার সন্তানেরও ক্ষতি হবে। যেহেতু সে নারী গর্ভধারণকালীন সময়ে দুগ্ধপান বন্ধ রাখতে বাধ্য হবেন।

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

চল্লিশ দিনের পূর্বে গর্ভপাত করার হুকুম নিয়ে ফিকাহবিদ আলেমগণ মতভেদ করেছেন। একদল হানাফি ও শাফেয়ি মাযহাবের আলেমদের অভিমত হচ্ছে: এটি জায়েয এবং এটি হাম্বলি মাযহাবের অভিমত।

ইবনুল হুমাম (রহঃ) ‘ফাতহুল কাদির’ গ্রন্থে (৩/৪০১) বলেন: ‘গর্ভধারণ করার পর কি গর্ভপাত করা বৈধ? আকৃতি তৈরী হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বৈধ। এরপর তারা (আলেমরা) একাধিক স্থানে বলেছেন যে: ১২০ দিন এর আগে আকৃতি হয় না। এ কথার দাবী হলো: তারা আকৃতি তৈরী দ্বারা রূহ ফুঁকে দেয়াকে বুঝিয়েছেন। অন্যথায় এটি ভুল কথা। কারণ সচক্ষে দেখার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত যে, এই সময়ের পূর্বেই আকৃতি হয়ে যায়।”[সমাপ্ত]

আর-রামলী ‘নিহায়াতুল মুহতাজ’ গ্রন্থে (৮/৪৪৩) বলেন: “অগ্রগণ্য হলো রূহ ফুঁকে দেয়ার পর শর্তহীনভাবে তা হারাম। আর রূহ ফুঁকে দেয়ার পূর্বে জায়েয।”

ক্বালয়ুবী এর পার্শ্বটীকাতে (৪/১৬০) বলা হয়েছে: “রূহ ফুঁকে দেয়ার পূর্বে তা (ভ্রুণ) ফেলে দেয়া জায়েয; এমনকি ঔষধ ব্যবহারের মাধ্যমে হলেও। তবে গাজালীর দ্বিমত রয়েছে।”

আল-মিরদাওয়ী ‘আল-ইনসাফ’ গ্রন্থে (১/৩৮৬) বলেন: “ভ্রুণ ফেলে দেয়ার জন্য ঔষধ সেবন করা জায়েয। আল-ওয়াজিয গ্রন্থে এটি উল্লেখ করা হয়েছে এবং আল-ফুরু গ্রন্থে এটাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। ইবনুল জাওযি ‘আহকামুন নিসা’ গ্রন্থে বলেন: ‘তা হারাম’। আল-ফুরু গ্রন্থে বলেছেন: আল-ফুনুন গ্রন্থে ইবনে আকীলের বক্তব্যের প্রত্যক্ষ মর্ম হচ্ছে: রূহ ফুঁকে দেয়ার পূর্বে ফেলে দেয়া জায়েয। তিনি বলেন: এ কথার পক্ষে যুক্তি রয়েছে।”[সমাপ্ত]

ইবনে রজব হাম্বলি ‘জামেউল উলুমি ওয়াল হিকাম’ গ্রন্থে বলেন: রিফাআ বিন রাফে’ থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন: ‘আমার কাছে উমর (রাঃ), আলী (রাঃ), সাদ (রাঃ) এবং একদল সাহাবী বসা ছিলেন। তখন তারা ‘আযল’ (যৌনাঙ্গের বাহিরে বীর্যপাত) নিয়ে আলোচনা করলেন এবং বললেন: এতে কোন আপত্তি নেই। তখন এক লোক বলল: তারা দাবী করে যে, এটি কণ্যাশিশুকে জীবন্ত কবর দেয়ার লঘু রূপ। তখন আলী (রাঃ) বললেন: এটি কণ্যাশিশুকে জীবন্ত কবর দেয়া হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না সাতটি ধাপ অতিক্রম না করে: মাটির নির্যাস, তারপর শুক্রাণুতে পরিণত হওয়া, তারপর জমাট বাঁধা, তারপর গোশতের টুকরায় পরিণত হওয়া, তারপর হাড্ডিতে পরিণত হওয়া, এরপর গোশততে পরিণত হওয়া, এরপর স্বতন্ত্র একটি সৃষ্টি হওয়া। তখন উমর (রাঃ) বললেন: আপনি সত্য বলেছেন; আল্লাহ্‌ আপনাকে দীর্ঘজীবি করুন।[এটি দারা কুতনী ‘আল‑মু’তালিফ ওয়াল মুখতালিফ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন]

এরপর ইবনে রজব বলেন: আমাদের আলেমগণ স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছেন যে, জমাট‑বাঁধা রক্ত হয়ে যাওয়ার পর কোন নারীর জন্য গর্ভপাত করা নাজায়েয। কেননা তখন সেটি শিশু হওয়া শুরু হয়ে গেছে। ভ্রূণ অবস্থায় থাকাটি এর বিপরীত। যেহেতু তখনও সেটি শিশু হওয়া শুরু হয়নি।[সমাপ্ত]

মালেকি মাযহাবের মতে, সাধারণভাবে এটি নাজায়েয। এটি কিছু হানাফি, কিছু শাফেয়ি ও কিছু হাম্বলী আলেমেরও বক্তব্য। আল-দিরদীদ ‘আল-শারহুল কাবীর’ গ্রন্থে (২/২৬৬) বলেন: “গর্ভায়শের অভ্যন্তরে স্থান করে নেয়া বীর্যকে বের করা নাজায়েয; এমনকি সেটা চল্লিশ দিনের পূর্বে হলেও। আর যদি রূহ ফুঁকে দেয়ার পরে হয় তাহলে তা ইজমার ভিত্তিতে (সর্বসম্মতিক্রমে) হারাম।”[সমাপ্ত]

ফিকাহবিদদের মধ্যে কেউ কেউ বৈধ হওয়ার জন্য ওজরগ্রস্ত হওয়ার শর্তযুক্ত করেছেন।[দেখুন: আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা (২/৫৭)]

উচ্চ উলামা পরিষদের সিদ্ধান্তে এসেছে:

“১। যথাযথ শরয়ি কারণ ও সীমাবদ্ধ গণ্ডির মধ্যে ছাড়া গর্ভস্থিত ভ্রুণ যে ধাপের হোক না কেন সেটা নষ্ট করা নাজায়েয।

২। যদি গর্ভস্থিত ভ্রুণটি প্রথম ধাপে থাকে; প্রথম ধাপ হলো চল্লিশ দিনের সময়সীমায়; এবং গর্ভপাত করার মধ্যে কোন শরয়ি কল্যাণ থাকে কিংবা কোন ক্ষতি রোধকরণ থাকে তাহলে গর্ভপাত করা জায়েয হবে। পক্ষান্তরে এই সময়সীমার মধ্যে গর্ভপাতের কারণ যদি হয় সন্তানদের প্রতিপালনের কষ্ট কিংবা তাদের জীবিকা ও শিক্ষার ব্যয়ভার বহনের ভয় কিংবা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশংকা কিংবা স্বামী-স্ত্রীর যে কয়জন সন্তান আছে তারাই যথেষ্ট এগুলো; তাহলে গর্ভপাত করা নাজায়েয।”[আল-ফাতাওয়া আল-জামিআ’ (৩/১০৫৫) থেকে সমাপ্ত]

স্থায়ী কমিটির ফতোয়াতে (২১/৪৫০) এসেছে: “মূলবিধান হলো: কোন শরয়ি কারণ ছাড়া কোন নারীর গর্ভপাত করা নাজায়েয। যদি গর্ভস্থিত ভ্রূণটি বীর্যের অবস্থায় থাকে; আর তা থাকে চল্লিশদিন বা তার চেয়ে কম সময়ের মধ্যে এবং সেটি ফেলে দেয়ার মধ্যে কোন শরয়ি কল্যাণ থাকে কিংবা মায়ের উপর থেকে সম্ভাব্য কোন ক্ষতি রোধ করার বিষয় থাকে; তাহলে এমতাবস্থায় সেটি ফেলে দেয়া জায়েয আছে। তবে সন্তানদের প্রতিপালনের কষ্ট, তাদের ব্যয়ভার বহন বা প্রতিপালনের অক্ষমতা কিংবা যে কয়জন সন্তান আছে তারাই যথেষ্ট ইত্যাদি অ-শরয়ি কারণগুলো এর মধ্যে পড়বে না।

আর যদি ভ্রুণের বয়স চল্লিশ দিন পার হয়ে যায় তাহলে সেটি নষ্ট করা হারাম। কেননা চল্লিশ দিন পর সেটি জমাট-বাঁধা রক্তে পরিণত হয়; যা মানবাকৃতির সূচনা। তাই এ স্তরে পৌঁছার পর বিশ্বস্ত কোন ডাক্তারদের টীম ‘গর্ভধারণ চলমান রাখা মায়ের জীবনের জন্য বিপদজনক ও চলমান রাখলে মায়ের জীবন বিপন্ন হতে পারে’ মর্মে সিদ্ধান্ত দেয়া ব্যতীত সেটি নষ্ট করা জায়েয নয়।”[সমাপ্ত]

প্রশ্নে উল্লেখিত অবস্থার ক্ষেত্রে যেটি অগ্রগণ্য মত প্রতীয়মান হয় তা হলো: যদি এই গর্ভধারণ চালিয়ে গেলে লাগাতর গর্ভধারণের প্রেক্ষিতে মায়ের শারীরিক ক্ষতির আশংকা হয় কিংবা দুগ্ধপায়ী সন্তানের শারীরিক ক্ষতির আশংকা হয় তাহলে গর্ভপাত করতে কোন আপত্তি নেই।

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.