প্রভুর ভোজ/খ্রীষ্টিয়ান সহভাগিতা কি কারণে গুরুত্বপূর্ণ?

প্রশ্ন প্রভুর ভোজ/খ্রীষ্টিয়ান সহভাগিতা কি কারণে গুরুত্বপূর্ণ? উত্তর প্রভুর ভোজ আলোচনা একদিকে প্রাণের উদ্দীপনার বিষয়, কারণ এতে রয়েছে খুবই গভীর অর্থপূর্ণ বিষয়। এই বিষয়টি যীশুর মৃত্যুর শেষ মুহূর্তে উদ্ধার-পর্ব পালনের সময়ে তাঁর স্থাপিত এক গুরুত্বপূর্ণ সহভাগিতার ভোজের অনুষ্ঠান, যা আজও আমরা পালন করে থাকি। খ্রীষ্টিয়ানদের উপাসনার ক্ষেত্রেও এই অনুষ্ঠান একটি অখন্ড অংশ। এই অনুষ্ঠানের দ্বারা…

প্রশ্ন

প্রভুর ভোজ/খ্রীষ্টিয়ান সহভাগিতা কি কারণে গুরুত্বপূর্ণ?

উত্তর

প্রভুর ভোজ আলোচনা একদিকে প্রাণের উদ্দীপনার বিষয়, কারণ এতে রয়েছে খুবই গভীর অর্থপূর্ণ বিষয়। এই বিষয়টি যীশুর মৃত্যুর শেষ মুহূর্তে উদ্ধার-পর্ব পালনের সময়ে তাঁর স্থাপিত এক গুরুত্বপূর্ণ সহভাগিতার ভোজের অনুষ্ঠান, যা আজও আমরা পালন করে থাকি। খ্রীষ্টিয়ানদের উপাসনার ক্ষেত্রেও এই অনুষ্ঠান একটি অখন্ড অংশ। এই অনুষ্ঠানের দ্বারা আমরা প্রভুর মৃত্যু ও পুনরুত্থান এবং ভবিষ্যতে তাঁর মহিমাপূর্ণ দ্বিতীয় আগমন স্মরণ করে থাকি।

যিহূদীদের ধর্মীয় বছরের হিসাবে উদ্ধার-পর্ব ছিল এক পবিত্র ভোজের উৎসব। এই স্মরণীয় ঘটনাটি ছিল মিসরীয়দের জন্য সর্বশেষ মহা আঘাত, যার মধ্য দিয়ে তারা তাদের প্রথমজাত পুত্রসন্তান হারিয়েছিল এবং ইস্রায়েলীয়েরা ভেড়ার রক্ত তাদের দরজার বাজুতে ও চৌকাঠে ছিটিয়ে দেওয়ায় রক্ষা পেয়েছিল। তারা সেই ভেড়ার মাংস পুড়িয়ে খামিহীন রুটির সাথে খেয়েছিল। ঈশ্বর তাদের এই আদেশ দিয়েছিলেন, যেন তারা বংশের পর বংশ ধরে এই অনুষ্ঠান পালন করে। সম্পূর্ণ ঘটনাটি যাত্রা পুস্তক ১২ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ আছে।

উদ্ধার-পর্বের অনুষ্ঠান পালনের সময়ে- শেষ ভোজে- যীশু একটা রুটি নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন। তারপর, তিনি সেই রুটি ভেংগে তাঁর শিষ্যদের দিয়ে বললেন, “এটা আমার দেহ যা তোমাদের জন্য দেওয়া হবে। আমাকে মনে করবার জন্য এই রকম কোরো”। একইভাবে রুটি খাবার পরে তিনি পেয়ালা নিয়ে বললেন, “আমার রক্তের দ্বারা ঈশ্বরের যে নতুন ব্যবস্থা বহাল করা হবে সেই ব্যবস্থার চিহ্ন হল এই পেয়ালা। আমার এই রক্ত তোমাদের জন্য দেওয়া হবে” (লূক ২২:১৯-২০)। তিনি এই অনুষ্ঠান একটা গান গেয়ে শেষ করেছিলেন (মথি ২৬:৩০ পদ দ্রষ্টব্য), এবং সেই রাতে জৈতুন পাহাড়ে গিয়েছিলেন। এখানেই ভবিষ্যত বাণীতে বলা কথামত যিহূদা বেইমানী করে তাঁকে ধরিয়ে দিয়েছিল। পরদিন তাঁকে ক্রুশে দেওয়া হয়েছিল।

প্রভুর ভোজের ঘটনার বিবরণ সব সুসমাচারে পাওয়া যায় (মথি ২৬:২৬-২৯; মার্ক ১৪:১৭-২৫; লুক ২২:৭-২২ এবং যোহন ১৩:২১-৩০)। প্রেরিত পৌল তার লেখা ১ করিন্থীয় ১১:২৩-২৯ পদে প্রভুর ভোজ সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন। এখানে পৌল এমন একটা বিষয় উল্লেখ করেছেন যা সুসমাচারে পাওয়া যায় না: “সেইজন্য যে কেউ অযোগ্য ভাবে এই রুটি আর প্রভুর পেয়ালা থেকে খায় সে প্রভুর দেহের আর রক্তের বিরুদ্ধে পাপ করেছে বলে দোষী হয়। সেই রুটি আর সেই পেয়ালা থেকে খাবার আগে মানুষ নিজেকে পরীক্ষা করে দেখুক, কারণ খাবার সময় সে যদি প্রভুর দেহের বিষয়ে না বোঝে তবে সেই খাওয়াতে সে তার নিজের উপরেই শাস্তি ডেকে আনে” (১ করিন্থীয় ১১:২৭-২৯)। আমাদের প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে রুটি ও পেয়ালা থেকে “অযোগ্য ভাবে” খাবার মানে কি? তার মানে, রুটি ও পেয়ালা থেকে খাবার সত্যিকার অর্থ তা অসম্মানিত করা এবং আমাদের উদ্ধারকর্তা আমাদের উদ্ধারের জন্য যে মহামূল্যবান দাম দিয়েছেন তা ভুলে যাওয়া। অথবা, এর অর্থ হচ্ছে একরকম মৃত ও লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা বা পাপ স্বীকার না করে প্রভুর ভোজে অংশ নেওয়া। পৌলের নির্দেশ অনুসারে আমাদের অবশ্যই রুটি ও পেয়ালা থেকে খাবার আগে নিজেদের পরীক্ষা করে দেখা উচিত।

আরও একটা বক্তব্য পৌল রেখেছেন, যা সুসমাচারে লিপিবদ্ধ নাই, যা হচ্ছে, “সেইজন্য তিনি না আসা পর্যন্ত যতবার তোমরা এই রুটি খাবে আর এই পেয়ালা থেকে খাবে ততবারই প্রভুর মৃত্যুর কথা প্রচার করবে” (১ করিন্থীয় ১১:২৬)। তার মানে, এই আনুষ্ঠানিকতায় সময় সীমার কথা বলা হয়েছে- তাহচ্ছে, প্রভু যতদিন ফিরে না আসছেন। এই বক্তব্যের মধ্য থেকে যীশু তাঁর দেহ ও রক্তের মত দুটি দুর্বল দিক চিহ্ন হিসাবে ব্যবহার করেছেন এবং তাঁর মৃত্যুর গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। এটাতো খোদাই করা মার্বেল পাথর বা গলানো ব্রোঞ্জের স্তম্ভ নয়, কিন্তু রুটি ও আংগুর-রস মাত্র।

তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে, তাঁর দেহকে ভাংগা হবে। তাঁর হাড় ভাংগা হয় নাই, কিন্তু তাঁর দেহ এমন ভীষণভাবে অত্যাচারিত হয়েছিল যে, তাঁকে চেনাই অসম্ভব হয়েছিল (গীতসংহিতা ২২:১২-১৭; যিশাইয় ৫৩:৪-৭)। আংগুর-রস তাঁর রক্তের প্রতীকী, যে ভয়ংকরতম মৃত্যু গ্রহণ করতে তিনি অগ্রসরমান, তা-ই স্মরণ করিয়ে দেয়। তিনি যীশু, ঈশ্বরের একজন নির্দোষ পুত্র, একজন মুক্তিদাতা হিসাবে পুরাতন নিয়মে অসংখ্যবার বলা ভাববাণীর পূর্ণতার প্রকাশ (আদি পুস্তক ৩:১৫; গীতসংহিতা ২২; যিশাইয় ৫৩)। তিনি যখন বলেছেন, “আমাকে মনে করবার জন্য এইরকম কোরো”, তার মানে- অনুষ্ঠান হিসাবে ভবিষ্যতেও তা চলতে থাকবে। এই অনুষ্ঠান আবার উদ্ধার-পর্বের কথাও স্মরণ করিয়ে দেয়, কারণ সেখানে নির্দোষ মেষ বলি দিতে হয়েছিল এবং পরবর্তী সময়ে ঈশ্বরের মেষ-শিশু আসার বিষয় মনে করিয়ে দিয়েছিল, যিনি এসে জগতের পাপভার বহন করবেন। এটাইতো প্রভুর ভোজের মধ্য দিয়ে পূর্ণ হয়েছিল। পুরাতন নিয়মকে বদলে দিয়ে নতুন নিয়ম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যখন নিজেকে বলিদানের মধ্য দিয়ে (ইব্রীয় ৮:৮-১৩) খ্রীষ্ট হয়েছিলেন উদ্ধার-পর্বের মেষ-শিশু (১ করিন্থীয় ৫:৭)। এখন আর কোন বলিদান প্রথার দরকার নাই (ইব্রীয় ৯:২৫-২৮)। সেজন্য, খ্রীষ্ট আমাদের জন্য যা করেছেন; তাঁর আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা যা পেয়েছি তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্মরণীয় হিসাবে পালন করা প্রভুর ভোজ/ খ্রীষ্টিয়ানদের সহভাগিতা স্বরূপ।

[English]



[বাংলা হোম পেজে ফিরে যান]

প্রভুর ভোজ/খ্রীষ্টিয়ান সহভাগিতা কি কারণে গুরুত্বপূর্ণ?

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.