বাসার খরচপাতি নিয়ে বিবাদমান দম্পতির প্রতি উপদেশ

প্রশ্ন প্রশ্নকারী বোন বলছেন: তিনি কয়েক বছর ধরে সৌদি আরবে শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত আছেন। আগে তার ভাই তার সাথে সৌদিতে আসত। তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর তার ভাইয়ের বদলে তার স্বামী তার সাথে সৌদিতে এসেছেন। আল্লাহ্‌ আমাদেরকে একটি সন্তান দিয়েছেন, আলহামদু লিল্লাহ্। আমার স্বামী তার শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী চাকুরি পাওয়ার চেষ্টা করেছেন; কিন্তু কোন…

প্রশ্ন

প্রশ্নকারী বোন বলছেন: তিনি কয়েক বছর ধরে সৌদি আরবে শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত আছেন। আগে তার ভাই তার সাথে সৌদিতে আসত। তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর তার ভাইয়ের বদলে তার স্বামী তার সাথে সৌদিতে এসেছেন। আল্লাহ্‌ আমাদেরকে একটি সন্তান দিয়েছেন, আলহামদু লিল্লাহ্। আমার স্বামী তার শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী চাকুরি পাওয়ার চেষ্টা করেছেন; কিন্তু কোন চাকুরি পাননি। অবশেষে আমরা যেখানে থাকি পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের একটি মার্কেটে চাকুরি নেন। আর পরিবারের খরচ নিয়ে মতবিরোধ শুরু হয়। আমার উপর কি আবশ্যকীয় যে, আমি পরিবারের খরচ বহন করব? যেহেতু আমার স্বামী বলছেন যে, যদি আমি পরিবারের খরচ না দিই তাহলে আমি কোন ধরণের চাকুরি করতে পারব না? আমি চাকুরি করার বিনিময়ে যে বেতন পাই সেটাতে কি আমার স্বামীর কোন অধিকার আছে? যদি আমাকে পারিবারিক খরচ বহন করতে হয় তাহলে আমি কত পারসেন্ট বহন করব, আর আমার স্বামী কত পারসেন্ট বহন করবে?

আলহামদু লিল্লাহ।.

যদি আপনাদের মাঝে এ ধরণের কোন শর্তারোপ না ঘটে থাকে তাহলে পরিবারের খরচ বহন করার দায়িত্ব পুরুষের উপর। ঘরের খরচ বহন করার দায়িত্ব নারীর ওপর নয়। পুরুষই খরচ করবে। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “বিত্তবান ব্যক্তি তার বিত্ত অনুযায়ী ব্যয় করবে”।[সূরা ত্বালাক; আয়াত: ৭] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী তাদের ভরণ-পোষণ দেয়া তোমাদের উপর আবশ্যকীয়”। সুতরাং খরচাদির দায়িত্ব স্বামীর উপর। স্বামীই ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও জীবনোপকরণ নিজের জন্য, স্ত্রীর জন্য ও সন্তানদের জন্য সংগ্রহ করবে। স্ত্রীর উপার্জন ও বেতন তার নিজের জন্য। কেননা স্ত্রী তার কর্ম ও পরিশ্রমের বিনিময়ে বেতন পায়। স্বামী তো তার সাথে এমন কোন শর্ত করেনি যে, খরচাদির দায়িত্ব তার উপরে, কিংবা খরচাদির অর্ধেকের দায়িত্ব তার উপরে কিংবা এ রকম অন্য কোন শর্ত। আর যদি এ রকম কোন শর্ত করে থাকে তাহলে ইতিপূর্বে যেমনটি উল্লেখ করা হয়েছে মুসলমানেরা তাদের শর্তের উপর অটল। আর যদি তিনি আপনার সাথে এর ভিত্তিতে সম্পর্ক করে থাকেন যে, আপনি শিক্ষিকা, আপনাকে পাঠদান করতে হবে এবং এতে তিনি রাজি হয়ে থাকেন তাহলে তাকে এটা মেনে যেতে হবে, এটা নিয়ে বিবাদ করতে পারবেন না। আপনার বেতন আপনারই। তবে আপনি যদি খুশি মনে বেতনের কিছু অংশ তাকে দেন তাহলে সেটা হতে পারে। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “তারা যদি খুশিমনে তোমাদেরকে তার কিছু অংশ ছেড়ে দেয় তাহলে তোমরা তা স্বাচ্ছন্দ্যে খেতে পার।”[সূরা নিসা, আয়াত: ৪]

আপনার উচিত বেতনের কিছু অংশ তাকে দেওয়া। আমি আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছি যে, আপনি আপনার স্বামীর সন্তুষ্টির জন্য বেতনের কিছু অংশ তাকে দিন; যাতে করে বিবাদ মিটে যায় এবং সমস্যা নিরসন হয়। যাতে করে আপনারা দুইজন স্বস্তিতে, আনন্দে ও নিশ্চিন্ত মনে জীবন যাপন করতে পারেন। আপনারা দুইজন বেতনের অর্ধেক বা এক তৃতীয়াংশ বা এক চতুর্থাংশ বা অন্য কোন অংশের উপর একমত হতে পারেন; যাতে করে সংকট মিটে যায়, আপনাদের মাঝে বিবাদের পরিবর্তে ঐক্য, স্বস্তি ও মানসিক প্রশান্তি ফিরে আসে।

যদি এভাবে সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে কোর্টের শরণাপন্ন হতে পারেন। আপনারা যে দেশে অবস্থান করছেন সে দেশে মামলা দায়ের করতে কোন বাধা নেই। শরিয়া কোর্ট যে রায় দিবে ইনশাআল্লাহ্‌ সেটা যথেষ্ট।

কিন্তু, আপনাদের উভয়ের জন্য আমার পরামর্শ হচ্ছে—আপনারা সমঝোতা করুন, বিবাদ বর্জন করুন এবং মামলা দায়ের করা থেকে বিরত থাকুন। আপনি আপনার স্বামীকে কিছু সম্পদ দিতে রাজি হয়ে যান; যাতে করে সমস্যা মিটে যায়। কিংবা আপনার স্বামী যেন মেনে যায়। আল্লাহ্‌ তার কিসমতে যা রেখেছেন সেটার উপর সন্তুষ্ট থেকে তার সামর্থ্য অনুযায়ী খরচ করে এবং আপনার বেতনের পুরাটুকু আপনারই সেটা মেনে যায়, আপনার বেতনের প্রতি নজর না দেয়। আপনাদের দুইজনের মাঝে এমনটাই হওয়া উচিত। কিন্তু, আমি পরামর্শ দিচ্ছি এবং বারবার বলছি আপনি আপনার বেতনের কিছু অংশ তাকে দিতে সম্মত হোন; যাতে করে সে খুশি হয় এবং আপনারা পরস্পর কল্যাণের কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারেন। ঘর তো আপনাদের উভয়ের ঘর, সন্তানেরা তো আপনাদের উভয়ের সন্তান। সব জিনিস তো আপনাদের দুইজনেরই। তাই আপনার জন্য বাঞ্ছনীয় হবে বেতনের কিছু অংশ তাকে দেওয়া; যাতে করে সমস্যা মিটে যায়। আল্লাহ্‌ সকলকে তাওফিক দিন।[সমাপ্ত]

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.