বোবা ধরা কী?

প্রশ্ন আমরা অনেক সময় “জাছুম” (বোবা ধরা) এর কথা শুনে থাকি যে, সে একটি জ্বিন; কেউ নামায বা অন্য কোন ইবাদত ছেড়ে দিলে সে জ্বিন মানুষের বুকের উপর চেপে বসে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ-তে এমন কিছুর উল্লেখ আছে কি? নাকি এটি কুসংস্কার ও রূপকথা? আমরা অনেক সময় “জাছুম” (বোবা ধরা) এর কথা শুনে…

প্রশ্ন

আমরা অনেক সময় “জাছুম” (বোবা ধরা) এর কথা শুনে থাকি যে, সে একটি জ্বিন; কেউ নামায বা অন্য কোন ইবাদত ছেড়ে দিলে সে জ্বিন মানুষের বুকের উপর চেপে বসে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ-তে এমন কিছুর উল্লেখ আছে কি? নাকি এটি কুসংস্কার ও রূপকথা?

আমরা অনেক সময় “জাছুম” (বোবা ধরা) এর কথা শুনে থাকি যে, সে একটি জ্বিন; কেউ নামায বা অন্য কোন ইবাদত ছেড়ে দিলে সে জ্বিন মানুষের বুকের উপর চেপে বসে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ-তে এমন কিছুর উল্লেখ আছে কি? নাকি এটি কুসংস্কার ও রূপকথা?

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

জাছুম হচ্ছে কাবুস (বোবা ধরা); যা ঘুমের মধ্যে মানুষের ওপর ভর করে।

ইবনে মানযুর বলেন:

الجُثامُ (জুছাম) ও الجاثُومُ (জাছুম): الكابُوس (কাবুস), যা মানুষের উপর চেপে বসে।… ঘুমন্ত অবস্থায় মানুষের ওপর যা পতিত হয় সেটাকে বলা হয় “الجاثُومُ”।[লিসানুল আরব (১২/৮৩)]

তিনি আরও বলেন:

الكابُوس (কাবুস): রাতের বেলায় ঘুমন্ত ব্যক্তির ওপর যা পড়ে। বলা হয়: এটি খিঁচুনি হওয়ার সূচনা। কোন কোন ভাষাবিদ বলেন: আমার ধারণায় এটি আরবী নয়; বরং সেটাকে বলা হয়: النِّيدلان। আর তা হচ্ছে- الباروك (বারুক) ও الجاثوم (জাছুম)।[লিসানুল আরব (৬/১৯০)]

দুই:

জাছুম কখনও শরীরের কোন অঙ্গগত বৈষয়িক কারণেও হতে পারে; যেমন কোন খাবার বা ঔষধের প্রভাবে। আবার কখনও জ্বিনের প্রভাবেও হতে পারে। প্রথমটির চিকিৎসা শিঙ্গা লাগানো, খারাপ রক্ত বের করা, খাবার কম খাওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে। আর দ্বিতীয়টির চিকিৎসা কুরআনে কারীম ও যিকির-আযকারের মাধ্যমে।

ইবনে সিনা তাঁর চিকিৎসা গ্রন্থ “আল-ক্বানুন” এ বলেন:

“কাবুস পরিচ্ছেদ:

এটাকে “খানেক্ব” ও বলা হয়। আরবীতে কখনও কখনও “জাছুম” ও “নিদলান”ও বলা হয়।

এটি এমন এক রোগ যার কারণে মানুষ ঘুমে প্রবেশকালে অনুভব করে যে, ভারী কাল্পনিক কিছু তার উপরে পড়ছে। তাকে চাপ দিচ্ছে, তার নিঃশ্বাস বন্ধ করে ফেলছে। যার ফলে তার শব্দ আটকে যাচ্ছে, সে নড়াচড়া করতে পারছে না। যেন সে শ্বাস আটকে মারা যাবে। যখন এই অবস্থা কেটে যায় তখন আচমকা জেগে ওঠে। এটি তিনটি রোগের সূচনা: খিঁচুনি, স্ট্রোক করা কিংবা ম্যানিয়া; যদি এটি বিভিন্ন পদার্থের জট পাকানোগত কারণে হয় এবং কোন অবৈষয়িক কারণে না হয়।”[সমাপ্ত]

একই ধরণের কথা আধুনিক ডাক্তারেরাও বলেন। ড. হাস্‌সান শামছি পাশা কাবুসকে দুইভাগে ভাগ করেছেন: অস্থায়ী কাবুস ও পুনরাবৃত্তিমূলক কাবুস। প্রথম প্রকারটি বৈষয়িক কারণে ঘটে। আর দ্বিতীয়টি জ্বিনের প্রভাবে ঘটে।

তিনি তাঁর “আন-নাওম ওয়াল আরাক্ব ওয়াল আহলাম” গ্রন্থে বলেন:

১। অস্থায়ী কাবুস:

দুটো কারণে ঘটে থাকে:

ক. ঘুমে প্রবেশকালে শ্বাসনালীতে কিছু বাষ্প জমে সেটা মস্তিস্কের দিকে উঠতে থাকা কিংবা মস্তিস্ক থেকে বাষ্প এক ধাপে নীচে নামা। তখন আক্রান্ত ব্যক্তির নড়াচড়া ও কথা বলায় ভারী অনুভুত হয় কিংবা ভয় অনুভুত হয়। এটি স্নায়ুবিক খিঁচুনির সূচনা। আবার কখনও মানসিক প্রেসারের কারণেও ঘটতে পারে।

খ. কিছু কিছু ঔষধ সেবনের কারণেও কাবুস ঘটতে পারে। সেগুলো হচ্ছে:

(i) Arazrabine

(ii) Beta blockers

(iii) Lifod B

(iv) Antidepressants

(v) valium এর মত অস্থিরতা দূরকারী ঔষধ খাওয়া হঠাৎ বন্ধ করার পর।

২। পুনরাবৃত্তিমূলক কাবুস: এ ধরণের কাবুস প্রমাণ করে যে, মানুষের ওপর দুষ্ট আত্মাগুলো আছর করেছে এবং মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে।”[সমাপ্ত]

সারকথা: জাছুম-ই হলো কাবুস। এটি কুসংস্কার বা রূপকথা নয়। বরং এটি বাস্তব সত্য। এটি বৈষয়িক কারণে ঘটতে পারে। আবার জ্বিনের প্রভাবেও ঘটতে পারে।

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.