মুখস্তশক্তি মজবুত করা ও ভুলে যাওয়ার সমস্যা কাটিয়ে উঠার উপায়সমূহ

প্রশ্ন প্রশ্ন: আমি আমার প্রাত্যহিক জীবনের অনেক কাজ ও তৎপরতার কথা ভুলে যাই। আপনি কি আমাকে কুরআন-সুন্নাহ থেকে এমন কোন আমলের দিক-নির্দেশনা দিতে পারেন যাতে এ সমস্যা কাটিয়ে উঠা আমার জন্য সহায়ক হয়। আলহামদু লিল্লাহ।. ইনসানকে ইনসান (ভুলকারী) নাম দেয়া হয়েছে যেহেতু সে ভুলে যায়। আর কলব (অন্তর) কে কলব (পরিবর্তনশীল) নাম দেয়া হয়েছে যেহেতু…

প্রশ্ন

প্রশ্ন: আমি আমার প্রাত্যহিক জীবনের অনেক কাজ ও তৎপরতার কথা ভুলে যাই। আপনি কি আমাকে কুরআন-সুন্নাহ থেকে এমন কোন আমলের দিক-নির্দেশনা দিতে পারেন যাতে এ সমস্যা কাটিয়ে উঠা আমার জন্য সহায়ক হয়।

আলহামদু লিল্লাহ।.

ইনসানকে ইনসান (ভুলকারী) নাম দেয়া হয়েছে যেহেতু সে ভুলে যায়।

আর কলব (অন্তর) কে কলব (পরিবর্তনশীল) নাম দেয়া হয়েছে যেহেতু সে পরিবর্তিত হয়।

আগেকার লোকেরা বলত: প্রথম ভুলকারী ব্যক্তি হচ্ছেন- প্রথম মানব। উদ্দেশ্য হচ্ছে- আদম (আঃ)। তবে ভুলে যাওয়ার সমস্যা প্রবৃত্তি অনুযায়ী এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির ক্ষেত্রে তারতম্য হয়ে থাকে। কিছু লোকের মাঝে ভুলে যাওয়ার সমস্যা প্রবল; আর কারো মধ্যে কম। ভুলে যাওয়ার সমস্যাকে মোকাবিলা করার উপায়সমূহ নিম্নরূপ:

এক: গুনাহ থেকে দূরে থাকা। কারণ গুনাহর কারণে মুখস্তশক্তিতে দুর্বলতা আসে; ইলম অর্জনে ঘাটতি আসে। ইলমের আলোর সাথে অজ্ঞতার অন্ধকার একত্রিত হয় না। ইমাম শাফেয়ীর একটি পংক্তি উল্লেখ করা হয়-

আমি ওকীর নিকট অভিযোগ করলাম আমার মুখস্তশক্তির দুর্বলতার

তিনি আমাকে গুনাহ পরিহার করার পরামর্শ দিলেন এবং বললেন:

আল্লাহর ইলম হচ্ছে- নূর; আল্লাহর নূর গুনাহগারকে দেয়া হয় না।

খতীব আল-জামে নামক গ্রন্থে (২/৩৮৭) ইয়াইয়া বিন ইয়াহইয়া থেকে বর্ণনা করেন যে, এক লোক মালেক বিন আনাসকে বললেন: হে আবু আব্দুল্লাহ! মুখস্তশক্তি বাড়ানোর কোন কিছু আছে কি? তিনি বলেন: যদি কোন কিছু থাকে তাহলে সেটা হল: গুনাহ পরিত্যাগ করা। যখন কোন মানুষ গুনাহ করে তখন এ গুনাহটি তাকে ঘিরে রাখে এবং গুনাহর ফলে তাকে দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনা পেয়ে বসে। সে গুনাহর কারণে তার চিন্তাধারা মশগুল হয়ে থাকে। এভাবে এ দুশ্চিন্তা তার অনুভূতির উপর আধিপত্য বিস্তার করে থাকে এবং তাকে অনেক কল্যাণকর কাজ থেকে দূরে রাখে। এর মধ্যে মুখস্তশক্তি অন্যতম।

দুই: অধিক হারে আল্লাহর যিকির করা। যেমন- সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার ইত্যাদি পড়া। আল্লাহ তাআলা বলেন: “যখন ভুলে যান তখন আল্লাহর যিকির করুন”[সূরা কাহাফ, আয়াত: ২৪]

তিন: বেশি না খাওয়া। যেহেতু বেশি খাওয়া বেশি ঘুম, নির্বুদ্ধিতা, স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নির্জীবতা ও অলসতার কারণ। এগুলো ছাড়া বেশি খাওয়া অনেক শারীরিক রোগের কারণ। যেমনটি বলা হয়:

অধিকাংশ রোগের কারণ হচ্ছে- পানাহার।

চার: কোন কোন আলেম এমন কিছু খাবারের কথা উল্লেখ করেছেন যেগুলো মুখস্তশক্তি বৃদ্ধি করে। যেমন- মধু ও কিসমিস খাওয়া এবং বিশেষ কিছু সুইংগাম চিবানো।

ইমাম যুহরী বলেন: তুমি মধু খাবে; কারণ এটি স্মৃতিশক্তির জন্য ভাল।

তিনি আরও বলেন: যে হাদিস মুখস্ত করতে চায় সে যেন কিসমিস খায়।[খতীব আল-বাগদাদীর ‘আল-জামে’ (২/৩৯৪)]

ইব্রাহিম বলেন: তোমরা সুইংগাম খাবে। এটি অন্তরকে উদ্বুদ্ধ করে, ভুলে যাওয়াকে বিদূরিত করে।[খতীব এর আল-জামে (২/৩৯৭)]

আলেমগণ আরও বলেন: অম্লজাতীয় খাবার স্মৃতিশক্তির জড়তা ও মুখস্তশক্তির দুর্বলতা বাড়ায়।

পাঁচ: মুখস্তশক্তি বৃদ্ধি ও ভুলে যাওয়ার সমস্যা প্রতিরোধে আরও যে জিনিসটি সাহায্য করে সেটি হচ্ছে- মাথায় শিংগা লাগানো। এটি পরীক্ষিত। (আরও বিস্তারিত জানতে ইবনুল কাইয়্যেম এর ‘আততিব্ব আন-নাবাবি’ পড়ুন।

আল্লাহই ভাল জানেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.