যিহোবা সাক্ষী কারা এবং তাদের বিশ্বাসের বিষয়গুলো কী কী?

প্রশ্ন যিহোবা সাক্ষী কারা এবং তাদের বিশ্বাসের বিষয়গুলো কী কী? উত্তর একটি ধর্মীয় দল যেটি বর্তমানে যিহোবা সাক্ষী নামে পরিচিত এবং এটি ১৮৭০ খ্রীষ্টাব্দে পেনসিলভানিয়ায় চার্লস তেজে রাসেল কর্তৃক পরিচালিত যেটি একটি বাইবেল স্কুল হিসাবে শুরু হয়েছিল। রাসেল তার দলের নাম দিয়েছিলেন “মিলেনিয়াল ডোন বাইবেল স্টাডি” (Millennial Dawn Bible Study)। রাসেল ধারাবাহিকভাবে সিরিজ আকারে বই…

প্রশ্ন

যিহোবা সাক্ষী কারা এবং তাদের বিশ্বাসের বিষয়গুলো কী কী?

উত্তর

একটি ধর্মীয় দল যেটি বর্তমানে যিহোবা সাক্ষী নামে পরিচিত এবং এটি ১৮৭০ খ্রীষ্টাব্দে পেনসিলভানিয়ায় চার্লস তেজে রাসেল কর্তৃক পরিচালিত যেটি একটি বাইবেল স্কুল হিসাবে শুরু হয়েছিল। রাসেল তার দলের নাম দিয়েছিলেন “মিলেনিয়াল ডোন বাইবেল স্টাডি” (Millennial Dawn Bible Study)। রাসেল ধারাবাহিকভাবে সিরিজ আকারে বই লেখা শুরু করেন এবং নাম দিলেন “দ্যা মিলেনিয়াল ডোন।” তার মৃত্যুর আগে এটির ছয়টি ভলিউম লেখা শেষ হয়েছিল এবং এর মধ্যে বর্তমানে যিহোবা সাক্ষীরা যে ধর্মতত্ত্ব নিজেদের মধ্যে ধারণ করে সেগুলোর পরিমাণ অনেক বেশী ছিল। ১৯১৬ খ্রীষ্টাব্দে রাসেলের মৃত্যুর পর তার বন্ধু ও তার উত্তরাধিকারী বিচারক জে, এফ, র‌্যাদারফোর্ড “মিলেনিয়াল ডোন” সিরিজের সপ্তম তথা শেষ ভলিউমটি ১৯১৭ খ্রীষ্টাব্দে লেখেন যেটির নাম ছিল “The Finished Mystery”. ১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দে The watchtower Bible and Tract Society প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি খুব দ্রুতই একটি যোগাযোগ মাধ্যমে পরিণত হয় যার মধ্য দিয়ে অন্যদের কাছে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গিগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য “মিলেনিয়াল ডোন” আন্দোলন শুরু হয়েছিল। এই দলটি ১৯৩১ খ্রীষ্টাব্দের আগ পযন্ত “রাসেলস” নামে পরিচিত ছিল। এর পর পরই এটি “যিহোবা সাক্ষী” নামে পরিচিতি লাভ করে। ঐ দল ভেঙ্গে বেরিয়ে যাওয়া একটি দল এখন “বাইবেল স্টুডেন্টস” নামে পরিচিত।

যিহোবা সাক্ষীরা কী কী বিশ্বাস করে? তাদের মতবাদগুলো খুবই সতর্কতার সাথে অনুসন্ধান করে তাদের অবস্থানের বিষয়ে বলা যায় যে, খ্রীষ্টের ঈশ্বরত্ব, ত্রিত্ববাদ (পিতা-পুত্র-পবিত্র আত্মা), পবিত্র আত্মা এবং প্রায়শ্চিত্ত কাজের বিষয়ে তাদের যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে এবং এই কারণে তারা এই সব বিষয়ে আদিম বা প্রৈরিতিক খ্রীষ্টিয়ান অবস্থান ধারণ করে না। যিহোবা সাক্ষীরা বিশ্বাস করে যে, যীশু হলেন প্রধান স্বর্গদূত মিখায়েল এবং সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। এই মতভেদ বা বিতর্কের বিপক্ষে এমন অনেক শাস্ত্রাংশ রয়েছে যেগুলো স্পষ্টভাবে ঘোষণা করে যে, যীশুই হলেন ঈশ্বর (যোহন ১:১,১৪; ৮:৫৮; ১০:৩০ পদ)। যিহোবা সাক্ষীরা আরও বিশ্বাস করে যে, বিশ্বাস, ভাল কাজ এবং বাধ্যতার সংমিশ্রণেই পরিত্রাণ বা উদ্ধার লাভ করা যায়। এর বিপরীতে অসংখ্য শাস্ত্রাংশ এই কথা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করে যে, পরিত্রাণ কেবলমাত্র বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে অনুগ্রহেই লাভ করা যায় (যোহন ৩:১৬; ইফিষীয় ২:৮-৯; তীত ৩:৫ পদ)। যিহোবা সাক্ষীরা ত্রিত্ব-ঈশ্বরকে অস্বীকার করার মধ্য দিয়ে তারা এটি বিশ্বাস করে যে, যীশু হলেন একজন সৃষ্টি করা মানুষ এবং পবিত্র আত্মা হলেন আবশ্যিকভাবে ঈশ্বরের একটি নির্জীব শক্তি। যিহোবা সাক্ষীরা মানুষের পরিবর্তে করা যীশুর প্রায়শ্চিত্ত কাজকে প্রত্যাখ্যান করে এবং এর পরিবর্তে তারা বন্দিত্ব-মোচন বা মুক্তিপণ তত্ত্ব নিজেদের মধ্যে ধারণ করে বিশ্বাস করে যে, যীশুর মৃত্যু ছিল আদমের পাপের জন্য দেওয়া মুক্তিপণ স্বরূপ।

যিহোবা সাক্ষীরা কিভাবে তাদের এই সব বাইবেল বিরুদ্ধ মতবাদগুলোর ন্যায্যতা প্রমাণ করে থাকে? প্রথমেই, তারা দাবী করে যে, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মন্ডলীগুলো বাইবেলেকে কলুষিত করে আসছে; সেই কারণে তারা বাইবেলকে পুনরায় অনুবাদ করেছে যেটিকে তারা বলছে ‘New World Translation.’ ‘The Watchtower Bible and Tract Society’ নিজেদের মতবাদকে বাইবেলের প্রকৃত শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না করার চেয়ে তাদের মিথ্যা তথা ভুল মতবাদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে বাইবেলের মূলভাবকে পরিবর্তন করে এর ভিন্ন রূপ প্রদান করেছে। ফলে যিহোবা সাক্ষীরা তাদের মতবাদের সাথে বিরোধপূর্ণ শাস্ত্রের অংশগুলো যত বেশী সংখ্যায় আবিস্কার করলো তত বেশী সংখ্যায় ‘New World Translation’ তাদের নিজেদের অনুবাদ করা বাইবেলের নতুন নতুন সংস্করণ ছাপাতে থাকলো। The Watchtower চার্লস তেজে রাসেল, বিচারপতি যোষেফ ফ্রাংকলিন র‌্যাদারফোর্ড এবং তাদের উত্তরাধিকারীদের শিক্ষার উপর ভর করেই তাদের বিশ্বাসসমূহ ও মতবাদগুলোর ভিত্তি রচনা করে এবং এগুলোর প্রসার ঘটায়। ‘The Watchtower Bible and Tract Society’ –এর গভর্নিং বডি পুরো ভ্রান্ত ধর্মমত বা ধর্মগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে মাত্র একটিই যারা দাবী করে যে, শাস্ত্র অনুবাদ কিংবা তা ব্যাখ্যা করার অধিকার কেবলমাত্র তাদেরই আছে। অন্য কথায়, এই গভর্নিং বডি শাস্ত্রের কোন অনুচ্ছেদের বিষয়ে যা বলে সেটিই হচ্ছে শেষ কথা এবং এ বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে চিন্তা-ভাবনা করাকে দৃঢ়ভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়। এটি হচ্ছে তীমথিয়ের প্রতি (একই সঙ্গে আমাদের প্রতিও) পৌলের মিথ্যা বা ভ্রান্ত বিষয়ে ঈশ্বর কর্তৃক অনুমোদিত সতর্কতার বিপক্ষে একটি প্রত্যক্ষ অবস্থান গ্রহণ, সেই জন্য আমরা যেহেতু সঠিকভাবে ঈশ্বরের বাক্য নিয়ে নাড়াচড়া করছি সেহেতু আমাদের লজ্জা পাবার কিছু নেই। মিথ্যা বা ভ্রান্ত বিষয়ের প্রতি এই সতর্কবাণী ২তীমথিয় ২:১৫ পদে দেখতে পাওয়া যায়, এটি হচ্ছে ঈশ্বরের নিকট থেকে আসা তাঁর প্রত্যেকটি সন্তানের জন্য একটি সুস্পষ্ট দিক্-নির্দেশনা যেন তারা এমন খ্রীষ্টিয়ানদের মত হয় যারা প্রত্যেক দিন পবিত্র শাস্ত্র অধ্যয়ন করে ও অনুসন্ধান করে এটি দেখতে যে, তাদের যা যা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে সেগুলো শাস্ত্রাংশগুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না।

খুব সম্ভব সারা বিশ্বব্যাপী এমন আর কোন ধর্মীয় দল বা গোষ্ঠী নেই যারা এত বেশী বিশ্বস্তভাবে যিহোবা সাক্ষীদের তুলনায় তাদের বাণীগুলো বা বার্তাগুলো প্রকাশ করে থাকে। দুর্ভাগ্যবশত, তাদের এই বক্তব্যগুলো হলো বিকৃতিপূর্ণ, প্রতারণামূলক এবং মিথ্যা মতবাদে পরিপূর্ণ। আমাদের প্রার্থনা হবে এই যেন পিতা ঈশ্বর যিহোবা সাক্ষীদের চোখ খুলে দেন যেন তারা সুসমাচারের প্রকৃত সত্যের এবং ঈশ্বরের বাক্যের সঠিক ও সত্য শিক্ষার সাক্ষী হতে পারে।

[English]



[বাংলা হোম পেজে ফিরে যান]

যিহোবা সাক্ষী কারা এবং তাদের বিশ্বাসের বিষয়গুলো কী কী?

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.