যে খেলাগুলো দৈব সুযোগ নির্ভর সেগুলো কি হারাম?

প্রশ্ন কিছু গেইম আছে যেগুলো বাচ্চারা ব্যাপকভাবে খেলে থাকে; যেমন “Rock paper scissors”, “Hangman” ইত্যাদি যে গেইমগুলো আংশিকভাবে দৈব সুযোগের উপর নির্ভরশীল সেগুলো কি দাবা খেলার হুকুমের অধিভুক্ত হবে? কিছু গেইম আছে যেগুলো বাচ্চারা ব্যাপকভাবে খেলে থাকে; যেমন “Rock paper scissors”, “Hangman” ইত্যাদি যে গেইমগুলো আংশিকভাবে দৈব সুযোগের উপর নির্ভরশীল সেগুলো কি দাবা খেলার হুকুমের…

প্রশ্ন

কিছু গেইম আছে যেগুলো বাচ্চারা ব্যাপকভাবে খেলে থাকে; যেমন “Rock paper scissors”, “Hangman” ইত্যাদি যে গেইমগুলো আংশিকভাবে দৈব সুযোগের উপর নির্ভরশীল সেগুলো কি দাবা খেলার হুকুমের অধিভুক্ত হবে?

কিছু গেইম আছে যেগুলো বাচ্চারা ব্যাপকভাবে খেলে থাকে; যেমন “Rock paper scissors”, “Hangman” ইত্যাদি যে গেইমগুলো আংশিকভাবে দৈব সুযোগের উপর নির্ভরশীল সেগুলো কি দাবা খেলার হুকুমের অধিভুক্ত হবে?

আলহামদু লিল্লাহ।.

যে খেলাগুলো দৈবতা, ধারণা ও অনুমানের উপর নির্ভরশীল সে খেলাগুলোকে পাশা (ছক্কা) খেলার উপর কিয়াস করে একদল আলেম হারাম বলেছেন।

‘আল-মাওসুআ আল-আরাবিয়্যা আল-আলামিয়্যা’-তে এসেছে: ছক্কা হচ্ছে— ছোট ছোট চতুর্ভুজ; যা কিছু কিছু দৈব-সুযোগ নির্ভর খেলায় ব্যবহৃত হয়; যেমন- ক্রেপ গেইম। সেটা হচ্ছে— এক ধরণের জুয়া খেলা যা দুটো ছক্কা দিয়ে খেলা হয়। ব্যাকগ্যামন, Monopoly সহ অন্যান্য বোর্ড খেলায়ও ছক্কা ব্যবহৃত হয়। এককভাবে চতুর্ভুজ গুটিকে ছক্কা বলা হয়। ছক্কার ছয়টি পার্শ্ব থাকে। প্রত্যেক পার্শ্বে বিন্দু থাকে; এক থেকে ছয় পর্যন্ত।”[সমাপ্ত]

ছক্কা খেলা হারাম। যেহেতু সহিহ মুসলিমে (২২৬০) আবু বুরাইদা বিন আল-হুসাইব (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি পাশা (ছক্কা) খেলল সে যেন শূকরের গোশত ও রক্তে তার হাত ডুবাল”।

এবং আবু মুসা আল-আশআরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি নারদাশির (পাশা, ছক্কা) খেলল সে আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হল।”[সুনানে আবু দাউদ (৪৯৩৮) ও সুনানে ইবনে মাজাহ (৩৭৬২), আলবানী ‘সহিহ আবু দাউদ’ গ্রন্থে হাদিসটিকে হাসান বলেছেন]

ইমাম নববী (রহঃ) ‘শারহু মুসলিম’ গ্রন্থে বলেন: আলেমগণ বলেন: نردشير (নারদাশির)-ই হল نرد (পাশা, ছক্কা)। نرد শব্দটি অনারবী; আরবীতে অনুপ্রবিষ্ট। আর شير (শির) শব্দের অর্থ মিষ্ট।

এই হাদিসটি পাশা (ছক্কা) খেলা হারাম প্রমাণে ইমাম শাফেয়ি ও জমহুর আলেমের সপক্ষে দলিল।

হাদিসের কথা: সে যেন শূকরের গোশত ও রক্তে তার হাত ডুবাল অর্থাৎ এ দুটো ভক্ষণকালে। এটি একটি উপমা। ঐ দুটো জিনিস খাওয়া হারাম হওয়াকে দিয়ে এ খেলাটি হারাম হওয়ার পক্ষে উপমা দেয়া হয়েছে। আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।[সমাপ্ত]

ফিকাহবিদ আলেমদের মধ্যে কেউ কেউ যে সব খেলা দৈব সুযোগ ও অনুমান নির্ভর সেগুলোকেও ছক্কা খেলার অধিভুক্ত করেছেন।

ইবনে হাজার আল-হাইতামী ‘তুহফাতুল মুহতাজ শারহুল মিনহাজ’ গ্রন্থে (১০/২১৫) বলেন: “সঠিক মতানুযায়ী পাশা খেলা হারাম। যেহেতু সহিহ মুসলিমের হাদিসে এসেছে “যে ব্যক্তি নারদাশির (পাশা, ছক্কা) খেলল সে যেন শূকরের গোশত ও রক্ত নিজের হাত ডুবাল।” আবু দাউদের বর্ণনায় এসেছে সে আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হল।

পাশা খেলার নির্ভার হচ্ছে: আন্দাজ ও অনুমান; যা চরম নির্বুদ্ধিতা ও বোকামির দিকে পর্যবসিত করে।

রাফেয়ি বলেছেন এবং অন্যেরা সেটাকে অনুসরণ করেছে, যার সারকথা হল: এ দুটো (ছক্কা ও দাবা)-র উপর এ অর্থবোধক অন্য সব খেলাকে কিয়াস করা হবে। পক্ষান্তরে, যে সব খেলার নির্ভার হচ্ছে গণনা ও চিন্তা-ভাবনা; যেমন- হিসাব করে রেখাতে গুটি আনা-নেয়া করা: হারাম হবে না।

আর যে সব খেলার নির্ভার হচ্ছে অনুমান সেগুলো হারাম হবে। যেমন- গনজফা। তা হচ্ছে ছবিবিশিষ্ট কিছু কার্ড।”[সংক্ষেপে সমাপ্ত]

দেখুন: নিহায়াতুল মুহতাজ (৮/২৯৫)

রশিদির লিখিত ‘নিহায়াতুল মুহতাজ’ গ্রন্থের পার্শ্বটীকাতে (৮/২৯৫) এসেছে: “গনজফা: সেটা কিছু নকশাবিশিষ্ট কাটা কাগজ; যেমনটি বলেছেন আল-আযরাঈ। আর তুহফাতে বলা হয়েছে: সেটা এমন কিছু কাগজ যাতে ছবি রয়েছে।”[সমাপ্ত]

স্থায়ী কমিটির আলেমগণ (১৫/২৩১) তাস খেলা হারাম মর্মে ফতোয়া দিয়েছেন; এমনকি সেটা যদি অর্থের বিনিময়ে না হয় তবুও। শাইখ উছাইমীন (রহঃ)ও অনুরূপ ফতোয়া দিয়েছেন। দেখুন: মাদুন রশিদের রচিত ‘কাযায়াল লাহু ওয়াত তারফিহ’ (পৃষ্ঠা-১৮৬)।

পক্ষান্তরে, দাবা খেলাকে অধিকাংশ আলেম হারাম বলেন।

ইমাম বাইহাকী তার ‘আস্‌-সুনানুল কুবরা’ গ্রন্থে (১০/২১২) বলেন: আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি কিছু লোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যারা দাবা খেলছিল। তখন তিনি বললেন: এসব মূর্তিগুলোর উপর তোমরা ঝুঁকে আছ কেন?

আরও জানতে দেখুন: 14095 নং প্রশ্নোত্তর।

এবং তাস খেলা হারাম হওয়ার ব্যাপারে 12567 নং প্রশ্নোত্তরটি দেখুন।

সার-সংক্ষেপ:

অতএব যে খেলাগুলো দৈব সুযোগের উপর নির্ভরশীল সেগুলো বর্জন করা বাঞ্চনীয়। এগুলোর বদলে অন্য যে সব বুদ্ধিবৃত্তিক ও শারীরিক কসরতের খেলা রয়েছে; সেগুলোই যথেষ্ট।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.