যে ব্যক্তি ধারণা করছেন যে, তিনি রোযা রেখেছেন কিন্তু নিয়ত নবায়ন করতে ভুলে গেছেন

প্রশ্ন যে ব্যক্তি ঘুমাতে যাওয়ার আগে গোটা রমযান মাস রোযা রাখা নিয়ত করেছেন। অতঃপর পরের দিন যখন সেহেরী খাওয়ার জন্য জাগলেন তখন তাকে বলা হল যে, রমযান মাস এখনও শুরু হয়নি। আজ শাবান মাসের ৩০ তারিখ। পরের দিন তিনি আর নতুন করে নিয়ত করেনি। এভাবেই পবিত্র মাসের রোযা রেখে গেছে। তার হুকুম কী? আলহামদু লিল্লাহ।….

প্রশ্ন

যে ব্যক্তি ঘুমাতে যাওয়ার আগে গোটা রমযান মাস রোযা রাখা নিয়ত করেছেন। অতঃপর পরের দিন যখন সেহেরী খাওয়ার জন্য জাগলেন তখন তাকে বলা হল যে, রমযান মাস এখনও শুরু হয়নি। আজ শাবান মাসের ৩০ তারিখ। পরের দিন তিনি আর নতুন করে নিয়ত করেনি। এভাবেই পবিত্র মাসের রোযা রেখে গেছে। তার হুকুম কী?

আলহামদু লিল্লাহ।.

ফরয রোযা শুদ্ধ হওয়ার জন্য রাত থেকে নিয়ত করা শর্ত। দলিল হচ্ছে– নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী হাফসা (রাঃ) এর হাদিস যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি ফজরের আগে নিয়ত পাকা করেনি তার রোযা নেই।”[সুনানে আবু দাউদ (২৪৫৪); আলবানী ‘ইরওয়াউল গালিল’ গ্রন্থে (৪/২৫, নং- ৯১৪) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।]

ইমাম নববী (রহঃ) বলেন:

“আমাদের মাযহাব (শাফেয়ি মাযহাব) হল: সেটা (অর্থাৎ রমযানের রোযা) শুদ্ধ হবে না রাত থেকে নিয়ত করা ব্যতীত। এই অভিমত পোষণ করেন ইমাম মালেক, আহমাদ, ইসহাক, দাউদ এবং পূর্বসূরী ও উত্তরসূরী জমহুর আলেম।”[আল-মাজমু (৬/৩১৮) থেকে সমাপ্ত]

তবে, নিয়তের বিষয়টি অতি সহজ। আগামীকাল রমযান এটা জানার পর কেবল আপনার দৃঢ় আকাঙ্ক্ষা ও ইচ্ছাই হচ্ছে– নিয়ত। নিয়ত উচ্চারণ করা শর্ত নয়। বরং উচ্চারণ করা শরিয়তসম্মতও নয়।

ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন:

“প্রত্যেক যে ব্যক্তি জেনেছে যে, আগামীকাল রমযান এবং সে রোযা রাখার ইচ্ছা রাখে তাহলে তার রোযার নিয়ত হয়ে গেল; চাই সে নিয়ত উচ্চারণ করুক কিংবা না করুক। এটাই সর্বস্তরের মুসলমানগণের আমল। তাদের প্রত্যেকেই রোযা রাখার নিয়ত করছেন।”[মাজমুউল ফাতাওয়া (২৫/২১৫) থেকে সমাপ্ত]

শাইখ বিন উছাইমীন (রহঃ) “আল-শারহুল মুমতি” গ্রন্থে (৬/৩৫৩-৩৫৪) বলেন:

“কোন ইচ্ছাধীন আমল থেকে নিয়ত বাদ পড়া সম্ভব নয়। অর্থাৎ প্রত্যেক যে আমল মানুষ নিজ ইচ্ছায় করে সে আমলের নিয়ত না থেকে পারে না।… এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, কিছু মানুষ যে ওয়াসওয়াসা (শয়তানের কুমন্ত্রণা)-র শিকার হয়ে বলেন: ‘আমি নিয়ত করিনি’ এটা বিভ্রম; যার কোন অস্তিত্ব নেই। কিভাবে নিয়ত না করা সম্ভব; অথচ সে কাজটি সম্পাদন করেছে।”[সমাপ্ত]

গোটা রমযান মাসে রোযা রাখার নিয়ত প্রথম দিন করলেই যথেষ্ট; যদি না সফর বা রোগজনিত কোন কারণে মাঝখানে রোযা পালন কর্তন না করে; কর্তন করলে নিয়ত নবায়ন করতে হবে। তবে, গোটা মাসে রোযা রাখার নিয়ত মাসের শুরুতে করা শর্ত নয়। কেউ যদি রমযান মাসের প্রতি রাতে নিয়ত করে ও রোযা রাখে তাহলে তার রোযা সহিহ।

ইবনুল কাত্তান (রহঃ) বলেন:

“আলেমগণ এই মর্মে ইজমা (ঐক্যমত্য) করেছেন যে, যে ব্যক্তি রমযান মাসের প্রতি রাতে রোযা রাখার নিয়ত করে ও রোযা রাখে তার রোযা পরিপূর্ণ।”[আল-ইকনা ফি মাসায়িলিল ইজমা (১/২২৭) থেকে সমাপ্ত]

কিন্তু, প্রশ্নকারী ভাই যদি এ কথা বুঝাতে চান যে, তিনি রমযানের প্রথমদিনে প্রবেশ করেছেন অথচ কোনভাবেই নিয়ত করেননি। তিনি সে দিনটি রমযান হওয়ার ব্যাপারে ভ্রমের মধ্যে ছিলেন অতঃপর ফজর হওয়ার পর জেনেছেন যে, এটি রমযান মাস। রাতের কোন এক মূহূর্তেও তিনি নিয়ত করেননি যে, আগামীকাল প্রথম রোযা রাখবেন, সেহেরী খাওয়ার জন্যেও উঠেননি: তাহলে তিনি এ দিনটি যে, রমযান মাস সেটা জানার পর থেকে পানাহার থেকে বিরত থাকবেন এবং পরবর্তীতে সে দিনটির রোযা কাযা পালন করবেন। কেননা রাত থেকে নিয়ত করা ওয়াজিব এমনটি পূর্বেও উল্লেখ করা হয়েছে।

রোযার নিয়ত করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে 22909 নং প্রশ্নোত্তরটি দেখুন।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.