যে ব্যক্তি সন্তান লালন-পালনের কাঠিন্যের কথা শুনে বিয়ে করতে ভয় পাচ্ছেন

প্রশ্ন আমার সমস্যা হল বিয়ে সংক্রান্ত। আমার বয়স এখন ২৯ বছর হতে চলেছে। যদিও আমি চাকুরীজীবী; কিন্তু এখনও বিয়ে করিনি। আমার বিয়ে করার সামর্থ্য আছে। কিন্তু ইয়া শাইখ! যখন আমি বিয়ের নানান জটিলতার কথা শুনি এবং সন্তান প্রতিপালন করার ব্যাপারে শুনি যে, খুব কঠিন ব্যাপার। যখন পিতামাতার প্রতি সন্তানদের অবাধ্যতা ও সন্তানদের নিয়ে নানারকম সমস্যার…

প্রশ্ন

আমার সমস্যা হল বিয়ে সংক্রান্ত। আমার বয়স এখন ২৯ বছর হতে চলেছে। যদিও আমি চাকুরীজীবী; কিন্তু এখনও বিয়ে করিনি। আমার বিয়ে করার সামর্থ্য আছে। কিন্তু ইয়া শাইখ! যখন আমি বিয়ের নানান জটিলতার কথা শুনি এবং সন্তান প্রতিপালন করার ব্যাপারে শুনি যে, খুব কঠিন ব্যাপার। যখন পিতামাতার প্রতি সন্তানদের অবাধ্যতা ও সন্তানদের নিয়ে নানারকম সমস্যার ঘটনাগুলো শুনি বা পড়ি তখনই আমি বিয়ে করা থেকে পিছিয়ে আসি। উল্লেখ্য, ইনশাআল্লাহ্‌, আমি আমার পিতামাতার প্রতি সদাচারী সন্তান। আমি এটা জানতে পেরেছি আমার জন্য আমার পিতামাতার দোয়া করা থেকে। আমার পিতা আমাকে বলেছেন যে, আমি তোমার প্রতি সন্তুষ্ট। আলহামদু লিল্লাহ; আল্লাহ্‌ যে আমাকে তোমার মত সন্তান দিয়েছেন। আমার পিতামাতা চান যে, আমি বিয়ে করি। কিন্তু যখনই আমি বিয়ে করতে অগ্রসর হই তখনই আমি প্রচণ্ড ভয় অনুভব করি। আমার মনে হয় বিয়ে করা ছাড়াই আমি ভাল আছি। কিন্তু, আমি আমার পিতামাতার ব্যাপারটি ভাবছি যে, তারা আমাকে নিয়ে খুশি হতে চায়। এই দুনিয়াতে প্রথমতঃ আমি চাই যে, কিভাবে যথা সময়ে নামায আদায় করব। দ্বিতীয়তঃ চাই যে, কিভাবে আমি পিতামাতার প্রতি তীব্র সদাচারী হব।

আলহামদু লিল্লাহ।.

আপনার জন্য নসিহত হচ্ছে—আপনি সন্তান প্রতিপালনে ব্যর্থ যারা তাদের নমুনার দিকে তাকাবেন না। যাতে করে, এ চিত্রগুলো আপনার উপর আধিপত্য বিস্তার করতে না পারে; শেষে আপনি এর থেকে নিজেকে ছুটাতে পারবেন না। কিন্তু, আপনি নিশ্চিন্ত মনে আশাবাদী হয়ে জীবনের দিকে অগ্রসর হোন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশাবাদিতাকে পছন্দ করতেন। দুনিয়াবী কোন কল্যাণ অর্জনের সংবাদ শুনলে তিনি খুশি হতেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শই হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ ও সর্বোত্তম আদর্শ। তিনি নারীদেরকে বিয়ে করেছেন, সন্তান জন্ম দিয়েছেন, দাম্পত্য জীবনের সমস্যা মোকাবিলা করেছেন, সন্তান লালন-পালন করেছেন। সুতরাং বিয়ে করা থেকে বিরত না থেকে এগুলো করা মানুষের জন্য কল্যাণকর ও অধিক সওয়াবময়। অতএব, আপনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শের বিপরীত করবেন না।

আপনি সন্তানদেরকে নেককার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করবেন। সন্তান প্রতিপালনের পদ্ধতিগুলো জেনে নিবেন। এ বিষয়ে ব্যাপক পড়বেন যাতে করে বিষয়টির উপর আপনার যথেষ্ট জ্ঞান থাকে। যদি আপনি একটি নেককার পরিবার ও নবুয়তী আদর্শে আদর্শবান প্রজন্ম গড়ে তুলতে পারেন তাহলে আপনি মহা সফলতা অর্জন করলেন এবং সদকায়ে জারিয়া রেখে গেলেন। মৃত্যুর পরেও আপনি সেটার নেয়ামত পেতে থাকবেন। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: এক নারী তার দুই মেয়ে নিয়ে আমার কাছে এসে ভিক্ষা চাইল। মহিলাটি আমার কাছ থেকে একটি খেজুর ছাড়া আর কিছু পেল না। আমি তাকে খেজুরটি দিলাম। সে খেজুরটি তার দুই মেয়ের মাঝে ভাগ করে দিল, নিজে কিছু খেল না। এরপর উঠে চলে গেল। ইতিমধ্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আসলেন এবং আমি তাঁকে ঘটনাটি বললাম। তিনি বললেন: “কেউ যদি এ মেয়েদেরকে নিয়ে কোন পরীক্ষার সম্মুখীন হয় তাহলে এ মেয়েরা কিয়ামতের দিন তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে আড়াল হবে”।[সহিহ বুখারী (১৪১৮) ও সহিহ মুসলিম (২৬২৯)]

উকবা বিন আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন: “যে ব্যক্তির তিনজন মেয়ে আছে, সে মেয়েদের ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ করে এবং তার সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের ভরণ-পোষণ করে— এ মেয়েরা কিয়ামতের দিন তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে আড়াল হবে।”[সুনানে ইবনে মাজাহ (৩৬৬৯), আলবানী ‘সহিহু ইবনে মাজাহ’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

ইরাক্বী (রহঃ) বলেন: الإحسان إليهن (তাদের প্রতি ইহসান করা) দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে—তাদেরকে সুরক্ষা করা, তাদের ভরণ-পোষণ ও অন্যান্য যা প্রয়োজন সেটা প্রদান করা। তাদের স্বার্থটা দেখা। তাদের জন্য যা কিছু শেখা আবশ্যকীয় তাদেরকে সেটা শিক্ষা দেওয়া। যা কিছু বাঞ্ছিত নয় সেটার কারণে তাদেরকে ধমক দেওয়া ও শাস্তি দেওয়া। এ সবকিছু ইহসানের অন্তর্ভুক্ত। এমনকি প্রয়োজন হলে যদি ধমক দেওয়া হয় বা মারা হয় সেটাও। ব্যক্তির উচিত এক্ষেত্রে নিজের নিয়তকে আল্লাহ্‌র জন্য একনিষ্ঠ করা এবং এর মাধ্যমে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির আশা করা। কেননা আমলসমূহ ধর্তব্য হয় নিয়তের ভিত্তিতে। তাদের প্রতি ইহসানের পরিপূর্ণতা হল— তাদের ব্যাপারে বিরক্তি, উদ্বিগ্নতা, অবজ্ঞা ও সংকোচন প্রকাশ না করা। কারণ এগুলোর প্রকাশ ইহসানকে মলিন করে দিবে।

হাদিসের কথা: كن له سترا من النار (তারা তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে আড়াল হবে): অর্থাৎ আল্লাহ্‌ তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে দূরে রাখার ক্ষেত্রে তারা কারণ হবে এবং জাহান্নামে প্রবেশ করা থেকে রক্ষা করবে। নিঃসন্দহে যে ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না; সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যেহেতু জান্নাত ও জাহান্নাম ছাড়া আর কোন আবাসস্থল নেই। সহিহ মুসলিমের যে বর্ণনাটি আমরা উদ্ধৃত করেছি তাতে এর সপক্ষে প্রমাণ রয়েছে যে, আল্লাহ্‌ তাআলা ঐ নারীর উক্ত কর্মের কারণে তার জন্য জান্নাত অবধারিত করে দিয়েছেন। হাদিসে মেয়েদের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যেহেতু মেয়েরা দুর্বল, তাদের পরিস্থিতি মোকাবেলার ক্ষমতা কম, তারা স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, তাদের সুরক্ষা প্রয়োজন এবং তাদের পেছনে খরচাদি বেশি লাগে। তাছাড়া অনেক মানুষ তাদেরকে বোঝা মনে করে ও অবজ্ঞা করে; যেটা ছেলেদের বেলায় করে না। কারণ উল্লেখিত দিকগুলোতে ছেলেরা মেয়েদের বিপরীত।

তবে, হাদিস থেকে এমনটি বুঝারও সম্ভাবনা রয়েছে যে, এ কথাটি শুধু বিশেষ ঐ ঘটনার ক্ষেত্রে উদ্ধৃত হয়েছে। সেটা ছাড়া এ বাণীর আর কোন মাফহুম (নির্দেশনা) নেই। ছেলেদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।[তারহুত তাসরিব (৭/৬৭)]

আরও জানতে দেখুন: 82968 নং ও 146150 নং প্রশ্নোত্তর।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.