রমজানে

প্রশ্ন প্রশ্ন : আমার বাবা মারা গেছেন (আল্লাহ তাঁর প্রতি রহম করুন)। তিনি কিছু সম্পদ রেখে গেছেন। সে সম্পদ ওয়ারিশদের মাঝে বণ্টন করে দেয়া হয়েছে। বাবার মৃত্যুর পর মা আমাকে জানিয়েছেন যে, ২৫ কি ৩০ বছর আগে বাবা একবার রমজান মাসে তাঁর সাথে সহবাস করেছিলেন; যে ব্যাপারে আমার মা অসম্মত ছিলেন। আমার মা যতটুকু স্মরণ…

প্রশ্ন

প্রশ্ন : আমার বাবা মারা গেছেন (আল্লাহ তাঁর প্রতি রহম করুন)। তিনি কিছু সম্পদ রেখে গেছেন। সে সম্পদ ওয়ারিশদের মাঝে বণ্টন করে দেয়া হয়েছে। বাবার মৃত্যুর পর মা আমাকে জানিয়েছেন যে, ২৫ কি ৩০ বছর আগে বাবা একবার রমজান মাসে তাঁর সাথে সহবাস করেছিলেন; যে ব্যাপারে আমার মা অসম্মত ছিলেন। আমার মা যতটুকু স্মরণ করতে পারছেন, সে সময় আমার মায়ের একটা অপারেশন করার পর তিনি হসপিটাল থেকে রিলিজ পেয়েছিলেন। তিনি আরো জানান যে, তিনি সে সময় বাবাকে বুঝিয়েছিলেন যে, এটি জায়েয নয় এবং এ ব্যাপারে কাউকে জিজ্ঞেস করা উচিত। কিন্তু বাবা মাকে বুঝিয়েছেন যে, তিনি তওবা করেছেন এবং আল্লাহ মহা-ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। আমার মা আরো জানিয়েছেন যে, তিনি লজ্জার কারণে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে বা আমাদেরকে জানাতে পারেননি। এখন আমার মা চাচ্ছেন- তিনি দুই মাস রোযা পালন করে এর কাফ্‌ফারা আদায় করবেন। আমি তাকে বলেছি যে, যা হয়েছে তাতে তাঁর কোন হাত ছিল না। তাই তাঁকে কিছু করতে হবে না। তাছাড়া তাঁর শারীরিক অবস্থাও এর জন্য প্রস্তুত নয়। এখন আমাদের মৃত পিতার ব্যাপারে আমাদের কী করণীয়? আর আমার মার উপর কী করণীয় ?

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক :

যদি আপনার
মা তাঁর অনিচ্ছা
সত্ত্বেও
রমজানে দিনের
বেলায় তাঁর
স্বামী কর্তৃক
বাধ্য হয়ে শারীরিক
সম্পর্ক
স্থাপন করে
থাকেন,
তবে তার উপর
কোন কাফ্‌ফারা
নেই। এর দলীল
নবী
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর
বাণী :

( إِنَّ اللَّهَ تَجَاوَزَ
عَنْ أُمَّتِي الْخَطَأَ وَالنِّسْيَانَ وَمَا اسْتُكْرِهُوا عَلَيْهِ ) . رواه
ابن ماجة (2043) وصححه الألباني في “صحيح ابن ماجة”

“নিশ্চয়ই
আল্লাহ তাআলা আমার
উম্মতের অজ্ঞতাজনিত
ভুল,
স্মৃতিভ্রমজনিত
ভুল ও জোরজবরদস্তির
শিকার হয়ে কৃত
অপরাধ ক্ষমা করে
দিয়েছেন।”[হাদিসটি
বর্ণনা
করেছেন ইমাম
ইবনে মাজাহ্
(২০৪৩)।শাইখ আলবানী হাদিসটিকে
সহীহ ইবনে
মাজাহ’ তে
সহীহ হিসেবে
চি‎হ্নিত
করেছেন]

আর
যদি এ
ক্ষেত্রে
তিনিতাঁর
স্বামীর
আনুগত্য করে
থাকেন তবে
তাকে কাযা ও কাফ্‌ফারা
উভয়টি
আদায় করতে হবে।

ফতোয়া বিষয়ক
স্থায়ী
কমিটির আলেমগণকে
রমজান মাসে
দিনের বেলায়
সহবাসকারীর
ব্যাপারে
জিজ্ঞেস করা
হলে তাঁরা
বলেন:

“এ
ব্যক্তির উপর
ওয়াজিব হল
একজন দাস
মুক্ত করা। যদি
তিনি তা করতে না
পারেন,তবে
এক নাগাড়ে দুই
মাস রোযা পালন
করতে হবে।আর যদি তাও না করতে
পারেন তাহলে
৬০ জন
মিসকীনকে
খাওয়াবেন। প্রতি
মিসকীনের জন্য
এক মুদ্দ (এক অঞ্জলি)
গম এবং তাকে
সেই দিনের
পরিবর্তে
কাযা রোযা
আদায় করতে
হবে। আর এ
ক্ষেত্রে স্ত্রী
যদি স্বামীর অনুগত
হয়ে থাকে তবে স্ত্রীর
হুকুমও
স্বামীর হুকুমের
ন্যায় (অর্থাৎ
কাযা ও কাফ্‌ফারাআদায়
করতে হবে)। আর
যদি স্ত্রীকে
বাধ্য করা হয়ে
থাকে তবে তাকে
শুধু কাযা
আদায় করতে
হবে।”সমাপ্ত

[ফাতাওয়াল্
লাজ্‌নাদ্ দায়িমা
(১০/৩০২)]

অতএব,
আপনার মায়ের
উপর যদি কাফ্‌ফারা
ওয়াজিব হয়ে থাকে, তবে
আপনি উল্লেখ
করেছেন যে, তিনি একাধারে
দুই
মাস সিয়াম
পালনে সক্ষম
নন তাহলে
এক্ষেত্রে
তার জন্য ৬০
জন মিসকীনকে খাদ্য
খাওয়ানো
যথেষ্ট হবে।

রমজানে
দিনের বেলায়
শারীরিক
মিলনের কারণে
ফরজ হওয়া কাফ্‌ফারাসম্পর্কে
জানতেদেখুন (1672)নং প্রশ্নের
উত্তর।

দুই
:

আপনার
বাবার
ক্ষেত্রে উপর ফরজ
ছিল পরপর দুই
মাস একাধারে
রোযা পালন করা
এবং শারীরিক
মিলনের
দ্বারা যেই
দিন রোযা ভঙ্গ
করেছেন, সেই দিনের
কাযা রোযা
আদায় করা।
কিন্তুযেহেতু
তিনি তা না
করেই মারা
গেছেন তাই যে
কোন এক
ব্যক্তি তাঁর
পক্ষ থেকে এ
সিয়ামগুলো
পালন করবেন।
সিয়াম
পালনকারীকে
একাধারে
দুইমাস রোযা
রাখতে হবে। এর
দলীল হচ্ছে- নবী
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া
সাল্লাম -এর বাণী:

(مَنْ مَاتَ وَعَلَيْهِ
صِيَامٌ صَامَ عَنْهُ وَلِيُّهُ) رواه مسلم (1147)

“যে তার জিম্মায়রোযা রেখে
মারা গেছে
তার পক্ষ থেকে
তার ওলি (আত্মীয়-পরিজন)
রোযা পালন
করবে।”[হাদিসটি
বর্ণনা
করেছেন
মুসলিম (১১৪৭)]

দুই
মাস রোযা পালনকে
একাধিক
ব্যক্তির মাঝে
ভাগ করা নেয়া
জায়েয হবে না।বরং একজন
ব্যক্তিকেই
তা পালন করতে
হবে। যাতে
সাব্যস্ত হয়
যে, তিনি
একাধারে দুই
মাস রোযা পালন
করেছেন। অথবা তাঁর
পক্ষ থেকে
প্রতিদিনের
রোযার
পরিবর্তেএকজন
মিসকীনকে
খাওয়াতে হবে। শাইখ ইবনে
উছাইমীন
রাহিমাহুল্লাহ
বলেছেন:“যদি কোন
মৃতব্যক্তির
উপর একাধারে দুই
মাসের রোযা
বাকি থাকে, তবে
তার ওয়ারিশদের
মধ্য থেকে কেউ
একজন নফল
দায়িত্ব
হিসেবে ঐ রোযাগুলো
পালন করবেঅথবা
প্রতিদিনের
রোযার বদলে
একজন
মিসকীনকে
খাওয়াবে।”সমাপ্ত[আশ-শার্‌হুল
মুমতি‘ (৬/৪৫৩)]

তিনি
আরও বলেছেন:

“নবী
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া
সাল্লাম হতে সাব্যস্ত
হয়েছে যে, যে
ব্যক্তি
রমজানের ফরজ
রোযা বা
মান্নতের রোযা
অথবা কাফ্‌ফারার রোযা
অনাদায় রেখে মারা
গেছেতার আত্মীয়স্বজন
চাইলে তার
পক্ষ থেকে সে
রোযাগুলো
পালন করতে
পারে।”[ফাতাওয়া
নূরুন আলাদ
দার্‌ব (২০/১৯৯)]

শাইখ
সা‘দী রাহিমাহুল্লাহ
বলেছেন:

“যে
ব্যক্তি
রমজানের কাযা
রোযা বাকি
রেখে মারা গেল,সে
সুস্থ হওয়ার
পরও সেই রোযা
পালন করেনি; সেক্ষেত্রে
তার পক্ষ থেকে
প্রতিদিনের রোযার
বদলে একজন
মিসকীন খাওয়ানো
ওয়াজিব। যে
কয়দিন রোযা
ভেঙ্গেছেন সম
সংখ্যক দিন।”

ইবনে
তাইমিয়্যাহ এর
মতে:

“তার
পক্ষ থেকে
রোযা পালন
করলে তা
গ্রহণযোগ্য
হবেএবং এটি একটি শক্তিশালী
গ্রহণযোগ্য অভিমত।”সমাপ্ত[ইরশাদু
উলিল বাস্বা’ইরি
ওয়াল আলবাব, পৃ: ৭৯]

মৃতব্যক্তির
রেখে যাওয়া
সম্পদ হতে এই
খাদ্য
খাওয়ানো ফরজ। আর
কেউ যদি নফল
দায়িত্ব হিসেবে
এই খরচ বহন
করে তাতেও কোন
বাধা নেই।

আল্লাহই
সবচেয়ে ভাল
জানেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.