শারীরিক প্রতিবন্ধী করার মাধ্যমে আল্লাহ্ যার পরীক্ষা ন

প্রশ্ন আমি আপনাদের ওয়েবসাইট থেকে উপকৃত হয়েছি। জাযাকুমুল্লাহু খাইরা (আল্লাহ্‌ আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিন)। আমি শুনেছি যে, মক্কা বা মদিনাতে কেবল খারাপ চিন্তা করলেই বান্দার আমলনামাতে গুনাহ লেখা হয়। এ কারণে সালাফগণ (পূর্বসুরিগণ) এ দুই স্থানে দীর্ঘ সময় অবস্থান করতেন না। এটা কি ঠিক? আশা করব আপনারা এ বিষয়ে আমাকে সর্বোচ্চ পরিমাণ তথ্য সরবরাহ করবেন।…

প্রশ্ন

আমি আপনাদের ওয়েবসাইট থেকে উপকৃত হয়েছি। জাযাকুমুল্লাহু খাইরা (আল্লাহ্‌ আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিন)। আমি শুনেছি যে, মক্কা বা মদিনাতে কেবল খারাপ চিন্তা করলেই বান্দার আমলনামাতে গুনাহ লেখা হয়। এ কারণে সালাফগণ (পূর্বসুরিগণ) এ দুই স্থানে দীর্ঘ সময় অবস্থান করতেন না। এটা কি ঠিক? আশা করব আপনারা এ বিষয়ে আমাকে সর্বোচ্চ পরিমাণ তথ্য সরবরাহ করবেন। আসলে আমি একজন প্রতিবন্ধী নারী। অনেক সময়ই আমার মনে খারাপ চিন্তা আসে। যেমন— আমি মনে মনে বলি যে, নিশ্চয় আল্লাহ্‌ আমাকে ভালবাসেন না; তাই আমাকে প্রতিবন্ধী বানিয়েছেন। আমি বসে বসে নামায পড়ার কারণে কেবল অর্ধেক সওয়াব পাব। এ ব্যাপারে আপনাদের অভিমত কী? আমার মত যার অবস্থা তার ক্ষেত্রে ইসলাম কী বলে? প্রতিবন্ধী নারীদেরকে বিয়ে করার ক্ষেত্রে আমরা মুসলিমদেরকে কিভাবে উদ্বুদ্ধ করতে পারি? অধিকাংশ মুসলিম প্রতিবন্ধীদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিতে তাকায় কেন? আমি মদিনাতে থাকতে চাই। কিন্তু এ চিন্তা ও কল্পনাগুলো আমার গুনাহ হিসেবে লেখার ব্যাপারে আমি ভীতসন্ত্রস্ত।

আমি আপনাদের ওয়েবসাইট থেকে উপকৃত হয়েছি। জাযাকুমুল্লাহু খাইরা (আল্লাহ্‌ আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিন)। আমি শুনেছি যে, মক্কা বা মদিনাতে কেবল খারাপ চিন্তা করলেই বান্দার আমলনামাতে গুনাহ লেখা হয়। এ কারণে সালাফগণ (পূর্বসুরিগণ) এ দুই স্থানে দীর্ঘ সময় অবস্থান করতেন না। এটা কি ঠিক? আশা করব আপনারা এ বিষয়ে আমাকে সর্বোচ্চ পরিমাণ তথ্য সরবরাহ করবেন। আসলে আমি একজন প্রতিবন্ধী নারী। অনেক সময়ই আমার মনে খারাপ চিন্তা আসে। যেমন— আমি মনে মনে বলি যে, নিশ্চয় আল্লাহ্‌ আমাকে ভালবাসেন না; তাই আমাকে প্রতিবন্ধী বানিয়েছেন। আমি বসে বসে নামায পড়ার কারণে কেবল অর্ধেক সওয়াব পাব। এ ব্যাপারে আপনাদের অভিমত কী? আমার মত যার অবস্থা তার ক্ষেত্রে ইসলাম কী বলে? প্রতিবন্ধী নারীদেরকে বিয়ে করার ক্ষেত্রে আমরা মুসলিমদেরকে কিভাবে উদ্বুদ্ধ করতে পারি? অধিকাংশ মুসলিম প্রতিবন্ধীদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিতে তাকায় কেন? আমি মদিনাতে থাকতে চাই। কিন্তু এ চিন্তা ও কল্পনাগুলো আমার গুনাহ হিসেবে লেখার ব্যাপারে আমি ভীতসন্ত্রস্ত।

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

ঈমানের স্তম্ভগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো— তাকদীরের প্রতি ঈমান। কোন মুসলিমের ঈমান ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না সে জানবে যে, সে যাতে আক্রান্ত হয়েছে সেটা তাকে ভুল করে যাওয়ার ছিল না। আর যাতে সে আক্রান্ত হয়নি সেটাতে সে আক্রান্ত হওয়ার ছিল না। আল্লাহ্‌ তাআলা কোন মুমিনের তাকদীরে যে বিপদ-মুসিবত রেখেছেন সেগুলোর ক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ করা ছাড়া তার সাধ্যে আর কিছু নেই। ধৈর্য ধরা তার পূর্ণাঙ্গ ঈমানের আলামত। যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্‌ তাকে বেহিসাব পুরস্কার দিবেন।

আপনার মনে এ চিন্তা আসা অনুচিত যে, আল্লাহ্‌ আপনার তাকদীরে যা রেখেছেন সেটা নিরেট অকল্যাণ। কেননা আল্লাহ্‌র কর্মে নিরেট অকল্যাণ নেই। বান্দার উপর আল্লাহ্‌ যা তাকদীর করেন (নির্ধারণ করেন) এ ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র প্রজ্ঞাপূর্ণ গূঢ় রহস্য রয়েছে। আপনি যে অবস্থার মধ্যে আছেন হতে পারে এর মধ্যে প্রভুত কল্যাণ রয়েছে; যা আপনি জানেন না। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “এমনও হতে পারে যে, তোমরা একটা জিনিস অপছন্দ করছ অথচ আল্লাহ্‌ তার মধ্যে অনেক কল্যাণ রেখেছেন।”[সূরা নিসা, আয়াত: ১৯] আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ্‌ যার কল্যাণ চান তাকে বিপদগ্রস্ত করেন।”[সহিহ বুখারী (৫৬৪৫)] বিপদগ্রস্ত করেন: অর্থাৎ বিপদের মাধ্যমে পরীক্ষা করেন যাতে করে এই বিপদের বিনিময়ে তাকে সওয়াব দিতে পারেন।

এই প্রতিবন্ধত্বের মাধ্যমে আল্লাহ্‌ আপনাকে পরীক্ষা করার অর্থ এ নয় যে, আল্লাহ্‌ আপনাকে ভালবাসেন না। বরং হতে পারে এর বিপরীতটাই ঠিক। আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নিশ্চয় বিপদ যত বড় প্রতিদান তত বড়। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ কোন কওমকে ভালবাসলে তাদেরকে পরীক্ষা করেন। অতএব, যে সন্তুষ্ট হয় তার জন্য রয়েছে সন্তুষ্টি। আর যে অসন্তুষ্ট হয় তার জন্য রয়েছে অসন্তুষ্টি।”[সুনানে তিরমিযি (২৩৯৬), তিরমিযি হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন; সুনানে ইবনে মাজাহ (৪০৩১)]

ধৈর্যশীল সওয়াবপ্রত্যাশী বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি সর্বাধিক বড় উপকার যেটা পাবে সেটা হল তার রবের সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাত করা যে, তার কোন গুনাহ নেই। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “মুমিন নর ও নারীর নিজের জান, সন্তান ও সম্পদের উপর বিপদ আসতেই থাকে; এক পর্যায়ে সে এমন অবস্থায় আল্লাহ্‌র সাথে সাক্ষাত করে যে, তার কোন গুনাহ নেই।”[সুনানে তিরমিযি (২৩৯৯), তিরমিযি হাদিসটিকে ‘সহিহ’ বলেছেন]

এ কারণে ধৈর্যশীল সওয়াবপ্রত্যাশী বিপদগ্রস্ত মানুষেরা কিয়ামতের দিন মহান মর্যাদার অধিকারী হবেন। এমনকি দুনিয়াতে যারা সুস্থ ছিল তারা কামনা করবে যদি তারাও তাদের মত হত। জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “কিয়ামতের দিন পরীক্ষার শিকার লোকদেরকে যখন পুরস্কার দেয়া হবে তখন সুস্থ লোকেরা কামনা করবে যদি দুনিয়াতে তাদের চামড়াগুলো কাঁচি দিয়ে কাটা হত।”[সুনানে তিরমিযি (২৪০২), আলবানী ‘সহিহুত তিরমিযি’ গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।

আশা করি বিশ্বস্ত মুসলমানদের একটি দল শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী মুসলিম বোনদের বিয়ে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। যেহেতু এ ধরণের মহান আমলের জন্য; ইনশা আল্লাহ্‌ মহা পুরস্কার রয়েছে।

যে মুসলিমকে আল্লাহ্‌ তাআলা শারীরিকভাবে সুস্থ রেখেছেন তার জন্য শারীরিক প্রতিবন্ধীদের দিকে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে তাকানো অনুচিত। বরং তার উচিত এ জন্য আল্লাহ্‌র প্রশংসা করা যে, আল্লাহ্‌ অন্যকে যে পরীক্ষার মুখোমুখি করেছেন তাকে সেটা থেকে সুস্থ রেখেছেন। তবে এ দোয়াটি তাকে শুনিয়ে তাকে কষ্ট দেয়া অনুচিত। সুস্থতার কৃতজ্ঞতা হচ্ছে পরীক্ষাগ্রস্ত ব্যক্তির জন্য সাধ্যানুযায়ী সেবাযত্ম ও কদর পেশ করা। 71236 নং প্রশ্নোত্তরটি দেখাও আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সে প্রশ্নোত্তরটিতে পরীক্ষার ক্ষেত্রে একজন মুমিনের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে।

দুই:

বসে নামায পড়ার কারণে আপনি অর্ধেক সওয়াব পাওয়ার যে ধারণা করছেন সেটি সঠিক নয়। বরং আপনি পরিপূর্ণ সওয়াব পাবেন, ইনশা আল্লাহ্‌। অর্ধেক সওয়াব পাবে ঐ ব্যক্তি যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নামায পড়ার সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বসে বসে নফল নামায আদায় করে। পক্ষান্তরে, কোন রোগের ওজরের কারণে কোন মুসল্লি বসে নামায পড়লে সে পরিপূর্ণ সওয়াব পাবে।

ইমাম নববী বলেন:

গোটা উম্মাহ একমত, যে ব্যক্তি অক্ষতাবশতঃ ফরয নামাযে দাঁড়াতে না পেরে বসে নামায পড়ে তাকে পুনরায় নামায আদায় করতে হবে না। আমাদের মাযহাবের আলেমগণ বলেছেন: তার দাঁড়ানো অবস্থার নামাযের থেকে সওয়াবের কোন কমতি করা হবে না। কেননা সে ব্যক্তি ওজরগ্রস্ত। সহিহ বুখারীতে সাব্যস্ত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যদি কোন বান্দা রোগে আক্রান্ত হয় কিংবা সফরে থাকে তাহলে সুস্থ ও মুকীম অবস্থায় সে আমলগুলো করত তার জন্য সে আমলগুলো লেখা হবে।”[আল-মাজমু (৪/৩১০)]

আরও দেখুন: 50180 নং, 50684 , প্রশ্নোত্তর।

তিন:

আর আপনি আপনার প্রশ্নে উদ্ধৃত গুনাহ নিয়ে যে দুশ্চিন্তার মধ্যে আছেন সে ব্যাপারে ইতিপূর্বে 171726 নং প্রশ্নোত্তরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.