হজ্জের মাধ্যমে ব্যক্তির দায়িত্বে অর্পিত ফরয অধিকারসমূহ যেমন কাফফারা কিংবা ঋণ রহিত হয় না

প্রশ্ন আলহামদু লিল্লাহ, গত বছর আমার ফরয হজ্জ আদায় করার সুযোগ হয়েছে। আপনারা জানেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে বলেছেন: “মাবরুর হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া অন্য কিছু নয়”। কোন মুসলিম যখন হজ্জ আদায় করে তখন তার পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়, সে হজ্জ থেকে নবজাতকের মত ফিরে আসে, ফিতরতের (স্বাভাবিক মানবপ্রকৃতির)…

প্রশ্ন

আলহামদু লিল্লাহ, গত বছর আমার ফরয হজ্জ আদায় করার সুযোগ হয়েছে। আপনারা জানেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে বলেছেন: “মাবরুর হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া অন্য কিছু নয়”। কোন মুসলিম যখন হজ্জ আদায় করে তখন তার পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়, সে হজ্জ থেকে নবজাতকের মত ফিরে আসে, ফিতরতের (স্বাভাবিক মানবপ্রকৃতির) অবস্থায় ফিরে আসে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে- বিগত দুই বছরে আমি যে রোযাগুলোর কাযা আদায় করিনি হজ্জ আদায় করার পরেও কি আমাকে সে রোযাগুলোর কাযা পালন করতে হবে? নাকি হজ্জ আদায় করার কারণে আল্লাহ আমার পূর্বের সবগুনাহ মাফ করে দিবেন? আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিন।

আলহামদু লিল্লাহ, গত বছর আমার ফরয হজ্জ আদায় করার সুযোগ হয়েছে। আপনারা জানেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে বলেছেন: “মাবরুর হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া অন্য কিছু নয়”। কোন মুসলিম যখন হজ্জ আদায় করে তখন তার পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়, সে হজ্জ থেকে নবজাতকের মত ফিরে আসে, ফিতরতের (স্বাভাবিক মানবপ্রকৃতির) অবস্থায় ফিরে আসে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে- বিগত দুই বছরে আমি যে রোযাগুলোর কাযা আদায় করিনি হজ্জ আদায় করার পরেও কি আমাকে সে রোযাগুলোর কাযা পালন করতে হবে? নাকি হজ্জ আদায় করার কারণে আল্লাহ আমার পূর্বের সবগুনাহ মাফ করে দিবেন? আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিন।

আলহামদু লিল্লাহ।.

হজ্জের ফজিলত সম্পর্কে বেশ কিছু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যে হাদিসগুলো নির্দেশ করে যে, হজ্জ করার কারণে গুনাহ মাফ হবে, পাপ মোচন হবে, মানুষ নবজাতকের মত ফিরে আসবে। আরও জানতে দেখুন 34359 নং প্রশ্নোত্তর।

তবে, এ ফজিলত ও সওয়াব ব্যক্তির দায়িত্বে অর্পিত ফরয অধিকারগুলোকে রহিত করে দেয় না। সে অধিকারগুলো আল্লাহর প্রাপ্য হোক; যেমন- কাফফারা, মানত, অনাদায়কৃত যাকাত, অনাদায়কৃত রোযা, কিংবা সেগুলো বান্দার অধিকার হোক; যেমন- ঋণ ও এ জাতীয় অন্য কিছু। অতএব, হজ্জ গুনাহ মাফ করে; কিন্তু আলেমদের সর্বসম্মতিক্রমে অধিকারগুলোকে রহিত করে না।

ঊদাহরণতঃ যে ব্যক্তি রমযানের কাযা রোযা পালনে বিনা ওজরে বিলম্ব করেছেন এরপর মাবরুর হজ্জ আদায় করেছেন তার হজ্জের কারণে বিলম্ব করার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে; কিন্তু রোযাগুলোর কাযা পালন করার দায়িত্ব রহিত হবে না।

‘কাশশাফুল ক্বিনা’ গ্রন্থে (২/৫২২) বলেন: দুমাইরি বলেন, সহিহ হাদিসে এসেছে- “যে ব্যক্তি হজ্জ আদায় করলেন; কিন্তু কোন পাপ কথা বা পাপ কাজে লিপ্ত হননি তিনি ঐ দিনের মত হয়ে ফিরে আসবেন যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল”। এ হাদিসটির বিধান আল্লাহর অধিকার সংশ্লিষ্ট পাপের জন্য খাস; বান্দার অধিকার সংশ্লিষ্ট পাপের ক্ষেত্রে নয় এবং এর বিধান কোন অধিকারকে রহিত করবে না। অতএব, যার উপর নামায কিংবা কাফফারা জাতীয় আল্লাহর অধিকারের কোন দায়িত্ব অবশিষ্ট আছে এগুলো রহিত হবে না। কারণ এগুলো হচ্ছে- অধিকার; পাপ না। পাপ হচ্ছে- বিলম্ব করা। তাই বিলম্ব করার গুনাহ হজ্জের মাধ্যমে রহিত হবে; কিন্তু সে দায়িত্বটি নয়। সুতরাং হজ্জ আদায় করার পর রোযাগুলোর কাযা পালনে কেউ যদি বিলম্ব করে এতে করে তার নতুন আরেকটি গুনাহ হবে। তাই মাবরুর হজ্জের মাধ্যমে আল্লাহর নির্দেশ লঙ্ঘনের গুনাহ রহিত হবে; অধিকারগুলো নয়। তিনি ‘আল-মাওয়াহেব’ গ্রন্থে এ অভিমত ব্যক্ত করেন”।[সমাপ্ত]

ইবনে নুজাইম (রহঃ) তাঁর ‘আল-বাহরুর রায়েক’গ্রন্থে (২/৩৬৪) হজ্জের মাধ্যমে কবিরা গুনাহ মোচন হবে কিনা এ সংক্রান্ত ইখতিলাফ উল্লেখ করার পর বলেন: সারকথা হচ্ছে-মাসয়ালাটি ধারণাভিত্তিক। হজ্জের মাধ্যমে আল্লাহর অধিকারের সাথে সম্পৃক্ত কবিরা গুনাহ মোচন হবে- এমনটি অকাট্যভাবে বলা যাবে না; বান্দার অধিকার সংক্রান্ত গুনাহ তো দূরে থাক। আর যদি আমরা এ কথা বলিও যে, হজ্জের মাধ্যমে সব ধরণের গুনাহ মোচন হবে এর অর্থ এ নয় যে, যেমনটি অনেক মানুষ ধারণা করে থাকে- হাজী ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাবে; আর না কাযা নামায, কাযা রোযা ও অনাদায়কৃত যাকাত পরিশোধের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাবে। কারণ এমন অভিমত কেউই ব্যক্ত করেনি। বরং উদ্দেশ্য হচ্ছে- ঋণ আদায়ে গড়িমসি করা ও দেরী করার গুনাহ মাফ হবে এবং আরাফার ময়দানে অবস্থান করার পর যদি ঋণ পরিশোধে দেরী করে তাহলে এখানে আবার গুনাহগার হবে। নামায বিলম্বে আদায় করার গুনাহ হজ্জের মাধ্যমে মাফ হবে; অনাদায়কৃত নামাযের কাযা পালনের দায় মুক্ত হবে না। আরাফার ময়দানে অবস্থান করার পরপর কাযা পালন করা কর্তব্য; যদি পালন না করে তাহলে অবিলম্বে পালন করার মতামত অনুযায়ী সে গুনাহগার হবে। অন্যান্য আমলের ক্ষেত্রেও এ কিয়াস প্রযোজ্য। মোটকথা হল: এ বিষয়টি অজ্ঞাত নয় যে, হজ্জ সংক্রান্ত হাদিসগুলোকে এর সাধারণ অর্থে গ্রহণ করার কথা কেউ বলেননি।”[সমাপ্ত]

মোদ্দাকথা: রমযানের রোযার কাযা পালন আপনার উপর আবশ্যকীয়; কাযা পালন করা ছাড়া আপনি এ দায়িত্ব থেকে মুক্ত হবেন না।

আল্লাহই ভাল জানেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.