আখেরাতের জীবন অন্তহীন

প্রশ্ন আখেরাতে মানুষ কতদিন বাঁচবে; অনন্তকাল, নাকি আল্লাহ যতদিন চান? এ ব্যাপারে ইসলামি আকিদা কি? আখেরাতে মানুষ কতদিন বাঁচবে; অনন্তকাল, নাকি আল্লাহ যতদিন চান? এ ব্যাপারে ইসলামি আকিদা কি? আলহামদু লিল্লাহ।. আল্লাহ তাআলা এ দুনিয়ার ধ্বংস এবং দুনিয়াবাসীর মৃত্যু নির্ধারণ করে রেখেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন: “ভূপৃষ্ঠের সবকিছুই ধ্বংসশীল। একমাত্র সম্মান ও শ্রদ্ধাযোগ্য আপনার প্রতিপালকের চেহারা…

প্রশ্ন

আখেরাতে মানুষ কতদিন বাঁচবে; অনন্তকাল, নাকি আল্লাহ যতদিন চান? এ ব্যাপারে ইসলামি আকিদা কি?

আখেরাতে মানুষ কতদিন বাঁচবে; অনন্তকাল, নাকি আল্লাহ যতদিন চান? এ ব্যাপারে ইসলামি আকিদা কি?

আলহামদু লিল্লাহ।.

আল্লাহ তাআলা এ দুনিয়ার ধ্বংস এবং দুনিয়াবাসীর মৃত্যু নির্ধারণ করে রেখেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন: “ভূপৃষ্ঠের সবকিছুই ধ্বংসশীল। একমাত্র সম্মান ও শ্রদ্ধাযোগ্য আপনার প্রতিপালকের চেহারা ছাড়া।”।[সূরা আর-রহমান, আয়াত: ২৬-২৭] তিনি আরও বলেন: “প্রত্যেক প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদনকারী। এরপর তাদেরকে আমার দিকেই ফিরে আসতে হবে।”[সূরা আল-আনকাবুত, আয়াত: ৭৫]

এরপর আল্লাহ তাআলা মানুষকে পুনরুত্থিত করবেন। এবং তাদেরকে চিরস্থায়ী জীবন দান করবেন; যার কোন শেষ নেই। প্রত্যেকের আমল অনুযায়ী তাদের হিসাব নিবেন। নেককারকে তার নেকি অনুপাতে প্রতিদান দিবেন। বদকারকে তার বদ অনুযায়ী প্রতিদান দিবেন। এরপর মানুষ দুই ভাগ হয়ে যাবে। একভাগ জান্নাতে যাবে; অপরভাগ জাহান্নামে যাবে। জান্নাতবাসী চিরস্থায়ী জান্নাতে থাকবে। জাহান্নামবাসী চিরস্থায়ী জাহান্নামে থাকবে।

কুরআনে কারীম ও সহিহ হাদিসে এ মর্মে অনেক সুস্পষ্ট দলিল রয়েছে–

১. আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, অবশ্য আমি প্রবিষ্ট করাব তাদেরকে জান্নাতে, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা থাকবে অনন্তকাল। সেখানে তাদের জন্য থাকবে পবিত্র স্ত্রীগণ। তাদেরকে আমি প্রবিষ্ট করাব ঘন ছায়া নীড়ে”।[সূরা নিসা, আয়াত: ৫৭]

ইমাম তাবারী বলেন: “সেখানে তারা থাকবে অনন্তকাল” কোন অন্ত বা শেষ ছাড়া এবং বিরতিহীনভাবে। সদা সর্বদা সেখানে তাদের জন্য তা থাকবে।[তাফসিরে তাবারী (৫/১৪৪)]

২. তিনি আরও বলেন: “আল্লাহ বললেনঃ আজকের দিনে সত্যবাদীদের সত্যবাদিতা তাদের উপকারে আসবে। তাদের জন্যে রয়েছে– উদ্যান; যার তলদেশে নির্ঝরিণী প্রবাহিত হবে; তারা তাতে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট। এটিই মহান সফলতা।”[সূরা মায়িদা, আয়াত: ১১৯]

৩. তিনি আরও বলেন: “যারা কুফরী অবলম্বন করেছে এবং সত্য চাপা দিয়ে রেখেছে, আল্লাহ কখনও তাদের ক্ষমা করবেন না এবং সরল পথ দেখাবেন না। তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের পথ। সেখানে তারা বাস করবে অনন্তকাল। আর এমন করাটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।”[সূরা নিসা, আয়াত: ১৬৯]

৪. তিনি আরও বলেন: “নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেরকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তাদের জন্যে জ্বলন্ত অগ্নি প্রস্তুত রেখেছেন। তথায় তারা অনন্তকাল থাকবে এবং কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না।”[সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৬৪-৬৫]

৫. তিনি আরও বলেন: “কিন্তু আল্লাহর বাণী পৌছানো ও তাঁর পয়গাম প্রচার করাই আমার কাজ। যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করে, তার জন্যে রয়েছে জাহান্নামের অগ্নি। তথায় তারা চিরকাল থাকবে।”[সূরা আল-জিন্ন, আয়াত: ২৩]

ইবনে কাছির বলেন:

“তথায় তারা চিরকাল থাকবে” অর্থাৎ তথায় তারা বিরতিহীনভাবে অবস্থান করবে। সেখান থেকে বের হতে পারবে না কিংবা দূরে যেতে পারবে না।[তাফসিরে ইবনে কাছির, (৩/৫২০)]

৬. আল্লাহ তাআলা কাফেরদের সম্পর্কে সংবাদ দিতে গিয়ে বলেন: তারা কখনো সেখানে মৃত্যুবরণ করবে না এবং ভাল জীবন যাপন করবে না। তিনি বলেন: “নিশ্চয়ই যে তার পালনকর্তার কাছে অপরাধী হয়ে আসবে, তার জন্য রয়েছে জাহান্নাম। সেখানে সে মরবে না এবং বাঁচবেও না।”[সূরা ত্বহা, আয়াত: ৭৪] তিনি আরও বলেন: “এরপর তারা সেখানে মরবেও না; বাঁচবেও না।” [সূরা আল-আ’লা, আয়াত: ১৩]

কুরতুবী এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন: “তারা সেখানে মরে গিয়ে শাস্তি থেকে স্বস্তি পাবে না; আবার বাঁচার মত বাঁচবেও না।”[তাফসিরে কুরতুবী ২০/২১]

৭. আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “মৃত্যুকে (শারীরিক রূপ দিয়ে) মাথায় সাদাদাগযুক্ত কালো রঙের মেষের আকৃতি দিয়ে আনা হবে। তারপর একজন আহ্বানকারী আহ্বান করবে: হে জান্নাতবাসী! এ আওয়াজ শুনে তারা ফিরে তাকাবে। আহ্বানকারী বলবে: তোমরা কি একে চেন? তারা বলবে: হ্যাঁ; এতো মৃত্যু। তারা প্রত্যেকেই তো ইতিপূর্বে তাকে দেখেছে। এরপর আবার ডাক দিয়ে বলবে, ওহে জাহান্নামবাসী! এ আওয়াজ শুনে তারাও ফিরে তাকাবে। এরপর প্রশ্ন করা হবে, তোমরা কি একে চিন? সবাই জবাব দিবে, হ্যাঁ (আমরা তাকে চিনি), এ তো ‘মৃত্যু’। তারা প্রত্যেকেই তো ইতিপূর্বে তাকে দেখেছে। এরপর সে মেষটিকে জবাই করা হবে। অতঃপর ঘোষণা দেয়া হবে, হে জান্নাতবাসী! এখানে মৃত্যুহীন চিরস্থায়ী জীবন। হে জাহান্নামবাসী! এখানে মৃত্যুহীন চিরস্থায়ী জীবন। এরপর তিনি তেলাওয়াত করেন:

وَأَنذِرْهُمْ يَوْمَ الْحَسْرَةِ إِذْ قُضِيَ الْأَمْرُ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ وَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ

অর্থ- “আপনি তাদেরকে পরিতাপের দিবস সম্পর্কে হুশিয়ার করে দিন যখন সব ব্যাপারের মীমাংসা হয়ে যাবে। এখন তারা গাফলতিতে আছে।” [সূরা মারিয়াম, আয়াত: ৩৯] এরা হচ্ছে- দুনিয়ার গাফেল মানুষগুলো। “তারা ঈমানদার নয়” [সহিহ বুখারি (৪৪৫৩) ও সহিহ মুসলিম (২৮৫০)]

সহিহ বুখারি (৬১৮২) ও সহিহ মুসলিম (২৮৫০) এ ইবনে উমরের বর্ণনাতে এসেছে-“এতে করে জান্নাতবাসীগণ আরও বেশি আনন্দিত হবে এবং জাহান্নামবাসীগণ আরও বেশি দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়বে।”

ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন: এই মেষ, মেষকে শোয়ানো, যবেহ করা এবং উভয় দলের এ দৃশ্যকে দেখা বাস্তব; কল্পনা নয়; কিংবা অভিনয় নয়। অথচ কিছু কিছু ব্যক্তি এ বিষয়ে চরম ভুল করেছেন। তিনি বলেছেন: মৃত্যু তো- একটি অশরীরী বিষয়। অশরীরী বিষয়কে কিভাবে দেহ দেয়া হবে; থাকতো জবাই করা।

এই অভিমত সঠিক নয়। কারণ আল্লাহ তাআলা মৃত্যু থেকে মেষের আকৃতি সৃষ্টি করবেন এবং সে মেষকে জবাই করা হবে। যেভাবে আমলগুলোকে দৃশ্যমান আকৃতি দেয়া হবে এবং এর আলোকে সওয়াব ও শাস্তি দেয়া হবে। আল্লাহ তাআলা অশরীরীকে শরীর দিতে পারেন। সে অশরীরী জিনিসটা হবে ওটাকে সৃষ্টি করার উপাদান। যেমনিভাবে তিনি দেহ থেকে অশরীরী জিনিস সৃষ্টি করতে পারেন। আবার তিনি অশরীরী জিনিস থেকে অশরীরী জিনিসও সৃষ্টি করতে পারেন এবং শরীরী জিনিস থেকে অন্য শরীরী জিনিস সৃষ্টি করতে পারেন। এ চারটি প্রকারের প্রত্যেকটি আল্লাহ তাআলার ক্ষমতায় রয়েছে। এর দ্বারা বিপরীতমুখী দুই জিনিস একত্রিত হওয়া আবশ্যকীয় নয় এবং এটি অসম্ভব কিছু নয়। তাছাড়া এমন দূরবর্তী কোন ব্যাখ্যা করারও প্রয়োজন নেই; যেমনটি কেউ কেউ বলেছেন: মৃত্যুর ফেরেশতাকে জবাই করা হবে। এ ধরনের কথা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর অসার সংশোধনী আনার পর্যায়ে এবং এটি এমন বাতিল ব্যাখ্যা যা বিবেক-বুদ্ধি কিংবা নকলি দলিল কোনটা দ্বারা অনিবার্য নয়। বরং এ ধরনের ব্যাখ্যা দেয়ার কারণ হচ্ছে- রাসূলের বাণীর মর্মার্থ বুঝার মত যথাযথ যোগ্যতা না-থাকা।[হাদিউল আরওয়াহ, পৃষ্ঠা-২৮৩, ২৮৪]

৮. ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: জান্নাতবাসীগণ জান্নাতে প্রবেশ করার পর, জাহান্নামবাসীগণ জাহান্নামে প্রবেশ করার পর একজন ঘোষক দণ্ডায়মান হয়ে ঘোষণা করবে: ওহে জাহান্নামবাসী আর মৃত্যু নেই; ওহে জান্নাতবাসী আর মৃত্যু নেই, চিরস্থায়ী জীবন।[সহিহ বুখারি (৬১৭৮) ও সহিহ মুসলিম (২৮৫০)]

৯. আবু সাঈদ খুদরি (রাঃ) ও আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “একজন ঘোষক ঘোষণা করবে (অর্থাৎ জান্নাতবাসীদের মাঝে): তোমরা এখানে সুস্থ থাকবে; কখনো অসুস্থ হবে না। সজীব থাকবে; কখনো মৃত্যুবরণ করবে না। যুবক থাকবে; কখনো বৃদ্ধ হবে না। সর্বদা নেয়ামতের মধ্যে থাকবে; কখনো বঞ্চিত হবে না। আল্লাহর বাণী: ‘এই যে, জান্নাতের উত্তরাধিকারী তোমরা হয়েছ, এটা তোমাদের কর্মের ফল।’[সূরা যুখরুফ, আয়াত: ৭২] দ্বারা এটাই উদ্দেশ্য করা হয়েছে।[সহিহ মুসলিম (২৮২৭)]

অতএব, ও মুসলিম ভাই! এ দুনিয়ায় থাকাকালে নেকীর দিকে ছুটে চলুন। দুনিয়া তো সামান্য কয়েকটি দিন। এরপর অনন্ত সে জীবনে স্থানান্তরিত হবেন; হয়তো আপনার গন্তব্য জান্নাত; যে জান্নাতের নেয়ামত অফুরন্ত। কিংবা জাহান্নাম; যে জাহান্নামের আগুন চিরস্থায়ী। আর দেরী নয়; আর দেরী নয়; এখনি শুরু করুন। ‘অচিরেই করব’ এ বুলি বর্জন করুন। কারণ জাহান্নামবাসীদের অধিকাংশ চিৎকার হবে- ‘অচিরেই করব’।

আল্লাহ আমাদেরকে ও আপনাদেরকে জান্নাতের বাসিন্দা করুন। আমীন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.