আপনি কি

প্রশ্ন আপনি কি যোনা ভাববাদীর পুস্তকটির সারসংক্ষেপ করতে পারেন? যোনা পুস্তকের সমস্ত বিষয় কি সম্পর্কে লেখা হয়েছে? উত্তর লেখকঃ যোনা ১:১ পদটি সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণ দেয় যে, ভাববাদী যোনাই হলেন এই পুস্তকটির লেখক। লেখার সময়কালঃ যোনা ভাববাদীর পুস্তকটি সম্ভবতঃ খ্রীষ্টপূর্ব ৭৯৩-৭৫৮ অব্দের মধ্যে লেখা হয়েছে। লেখার উদ্দেশ্যঃ এই পুস্তকটির মুখ্য বিষয় হলো অবাধ্যতা ও…

প্রশ্ন

আপনি কি যোনা ভাববাদীর পুস্তকটির সারসংক্ষেপ করতে পারেন? যোনা পুস্তকের সমস্ত বিষয় কি সম্পর্কে লেখা হয়েছে?

উত্তর

লেখকঃ যোনা ১:১ পদটি সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণ দেয় যে, ভাববাদী যোনাই হলেন এই পুস্তকটির লেখক।

লেখার সময়কালঃ যোনা ভাববাদীর পুস্তকটি সম্ভবতঃ খ্রীষ্টপূর্ব ৭৯৩-৭৫৮ অব্দের মধ্যে লেখা হয়েছে।

লেখার উদ্দেশ্যঃ এই পুস্তকটির মুখ্য বিষয় হলো অবাধ্যতা ও পুনর্জাগরণ। যেহেতু যোনা তার কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হন, তাই তিনি ঐ বৃহৎ মাছের পেটে থাকার সময়কালটি তাকে একটি অনন্য অসাধারণ উদ্ধার বা মুক্তির অপূর্ব অভিজ্ঞতা দান করে। প্রাথমিকভাবে তার এই অবাধ্য শুধু তার ক্ষেত্রে নয়, কিন্তু পুরো নীনবীবাসীর জন্যও একটি পুনর্জাগরণ বয়ে আনে। এমন অনেকেই আছেন যারা মনে করেন যে, যোনা নীনবীবাসীর জন্য যে পুনর্জাগরণ নিয়ে এসেছিলেন সেটি হলো সুসমাচার প্রচার করার ক্ষেত্রে সর্ব কালের সর্ব সময়ের জন্য একটি মহৎ উদ্যোগ বা প্রচেষ্টা।

প্রধান পদসমূহঃ যোনা ১:৩ পদ, “কিন্তু যোনা সদাপ্রভুর সম্মুখ হইতে তর্শীশে পলাইয়া যাইবার নিমিত্ত উঠিলেন . . .।”

যোনা ১:১৭ পদ, “আর সদাপ্রভু যোনাকে গ্রাস করণার্থে একটা বৃহৎ মৎস্য নিরূপণ করিয়াছিলেন; সেই মৎস্যের উদরে যোনা তিন দিন ও তিন রাত্রি যাপন করিলেন।”

যোনা ২:২ পদ, “আমি সঙ্কট প্রযুক্ত সদাপ্রভুকে ডাকিলাম, আর তিনি আমাকে উত্তর দিলেন; আমি পাতালের উদর হইতে আর্তনাদ করিলাম, তুমি আমার রব শ্রবণ করিলে।”

যোনা ৩:১০ পদ, “তখন ঈশ্বর তাহাদের ক্রিয়া, তাহারা যে আপন আপন কুপথ হইতে বিমুখ হইল, তাহা দেখিলেন, আর তাহাদের যে অমঙ্গল করিবেন বলিয়াছিলেন, তদ্বিষয়ে অনুশোচনা করিলেন, তাহা করিলেন না।”

সারসংক্ষেপঃ যোনার ভয় ও গর্ব তাকে ঈশ্বরের নিকট থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছিল। ঈশ্বর যোনাকে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন সেই অনুযায়ী তিনি নীনবীতে গিয়ে লোকদের কাছে মন পরিবর্তন বা অনুশোচনামূলক প্রচার করতে চান নি, কারণ তিনি তাদেরকে তার শত্রু বলে মনে করেছিলেন, আর তাই তিনি এর দ্বারা প্রভাবিত হলেন যে, ঈশ্বর অবশই ঐ নগরটিকে ধ্বংস করার যে শাস্তি নিরূপণ করেছিলেন তা তিনি শেষ পর্যন্ত করবেন না। আর তাই তিনি এর পরিবর্তে তর্শীশের জাহাজে উঠে বসলেন যেটি ছিল নীনবীর ঠিক বিপরীতমুখী। খুব শীঘ্রই সাগরে প্রচন্ড ঝড় শুরু হলে জাহাজের নাবিকেরা বাধ্য হয়ে গুলিবাঁট করলে বোঝা গেল যে, যোনাই হলেন এই বিপদের কারণ। তারা যোনাকে জাহাজ থেকে সমুদ্রে ফেলে দিল, আর একটি বৃহৎ মাছ তাকে গিলে ফেলল। যোনা সেই মাছের উদরে তিন দিন তিন রাত থেকে ঈশ্বরের প্রতি তার পাপের জন্য অনুতপ্ত হলেন, এবং মাছটি তাকে বমি করে শুকনো জমিতে ফেলে দিল (আমরা এই ভেবে বিস্ময়াভিভূত যে, তাকে কত দীর্ঘ সময় ধরেই না অনুশোচনা করতে হয়েছিল)। এরপর যোনা ৫০০ শত মাইল পাড়ি দিয়ে নীনবীতে পৌঁছালেন এবং নগরের মধ্যে বিরাট পুনর্জাগরণের নেতৃত্ব দিলেন। কিন্তু ভাববাদী নীনবীর লোকেরা অনুতপ্ত হয়েছে জেনে ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের পরিবর্তে তিনি অসন্তুষ্ট হলেন (প্রকৃতপক্ষে তিনি বিরক্ত হলেন বা ঠোঁট ফোলালেন)। পরিশেষে যোনা উচিত শিক্ষা লাভ করেন, যাহোক, ঈশ্বর বাতাস, এরণ্ড গাছ ও কীট ব্যবহার করার মধ্য দিয়ে তাকে এই শিক্ষাই দিলেন যে, তিনি হলেন করুণাময় বা দয়াময়।

পূর্বাভাসঃ যীশুর নিজের বলা কথার মধ্য দিয়ে এটি স্পষ্ট যে, যোনা ছিলেন খ্রীষ্টের মতো। মথি ১২:৪০-৪১ পদে যীশু এই কথা ঘোষণা করেন যে, যোনাকে যেমন বৃহৎ মাছে উদরে তিন দিবারাত্র থাকতে হয়েছিল, তেমনি তাঁকেও অর্থাৎ মনুষ্যপুত্রকেও পৃথিবীর উদরে তিন দিবারাত্র থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন যে, যেখানে নীনবীর লোকেরা যোনার প্রচারে অনুতপ্ত হয়ে মন ফিরিয়েছিল সেখানে ফরীশী ও ধর্মগুরুরা তার থেকেও মহান এক ব্যক্তি অর্থাৎ যীশুকে প্রত্যাখান করছে। যোনা ভাববাদী নীনবীর লোকদের জন্য মন পরিবর্তন ও পরিত্রাণের যে বার্তা প্রচার করেছিলেন, যীশুও সেই একই পরিত্রাণের বার্তা প্রচার করছিলেন (যোহা ২:৯; যোহন ১৪:৬ পদ), আর তা কেবলমাত্র ঈশ্বরের দ্বারাই হয়ে থাকে (রোমীয় ১১:৩৬ পদ)।

বাস্তব বা কার্যকরী প্রয়োগঃ আমরা নিজেদেরকে ঈশ্বরের কাছ থেকে লুকাতে পারি না। তিনি আমাদের দিয়ে যা সম্পন্ন করতে ইচ্ছা করেন, আমাদের শত অভিযোগ ও বিপথে গমন সত্ত্বেও আমাদের দিয়েই তা সম্পন্ন করবেন। ইফিষীয় ২:১০ পদ আমাদের এই কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আমাদের জন্য ঈশ্বরের মহৎ পরিকল্পনা রয়েছে এবং তিনি দেখতে চান যে, আমরা তা সম্পন্ন করব। আমরা যদি যোনার মতো দেরী না করে নিজেদেরকে তাঁর কাছে সমর্পণ করি, তাহলে এটি আমাদের পক্ষে কতই না সহজতর বিষয় হয়ে দাঁড়াবে!

ঈশ্বরের ভালবাসা আমাদের সুখ্যাতি, জাতীয়তা কিংবা জাতিগোষ্ঠী যা-ই হোক না কেন তা সত্ত্বেও তা স্বমহিমায় আমাদের প্রতি উদ্ভাসিত হয়ে থাকে। পৃথিবীর সকল লোকদের প্রতি সব সময়ের জন্যই সুসমাচার বিনামূল্যে প্রদত্ত। খ্রীষ্টিয়ান হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো ঈশ্বর এই পৃথিবীর লোকদের কাছে যে সুসমাচার প্রচার করতে বলেছেন সেই পরিত্রাণের কথা সবাইকে জানানো ও অন্য সকলের সাথে তাতে আনন্দ করা। এই অভিজ্ঞতাই ঈশ্বর আমাদের সাথে সহভাগ করতে চান যেন আমরা “একেবারে শেষ মুহূর্তের সুসমাচার প্রচার”-এ যারা মন পরিবর্তন করে খ্রীষ্টের কাছে আসে তাদের প্রতি কোনরূপ হিংসাপূর্ণ মনোভাব কিংবা বিরুক্তিভাব প্রকাশ না করি, কিংবা যারা নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে তাঁর কাছে আসে তাদেরকে আমাদের নিজেদের লোক হিসেবে মেনে নিতে বৈষম্যপূর্ণ মনোভাব পোষণ না করি।

[English]



[বাংলা হোম পেজে ফিরে যান]

আপনি কি যোনা ভাববাদীর পুস্তকটির সারসংক্ষেপ করতে পারেন? যোনা পুস্তকের সমস্ত বিষয় কি সম্পর্কে লেখা হয়েছে?

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *