আপ

প্রশ্ন আপনি কি যিশাইয় পুস্তকটির সারসংক্ষেপ করতে পারেন? যিশাইয় পুস্তকের সমস্ত বিষয় কি সম্পর্কে লেখা হয়েছে? উত্তর লেখকঃ যিশাইয় ১:১ পদের আলোকে এটি সুস্পষ্ট যে, ভাববাদী যিশাইয় হলেন এই পুস্তকটির লেখক। লেখার সময়কালঃ যিশাইয় পুস্তকটি খ্রীষ্টপূর্ব ৭৩৯-৬৮১ অব্দের মধ্যে লেখা হয়েছিল। লেখার উদ্দেশ্যঃ ভাববাদী যিশাইয়কে প্রাথমিকভাবে ডাকা হয়েছিল যেন তিনি যিহূদা রাজ্যের বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী বলেন।…

প্রশ্ন

আপনি কি যিশাইয় পুস্তকটির সারসংক্ষেপ করতে পারেন? যিশাইয় পুস্তকের সমস্ত বিষয় কি সম্পর্কে লেখা হয়েছে?

উত্তর

লেখকঃ যিশাইয় ১:১ পদের আলোকে এটি সুস্পষ্ট যে, ভাববাদী যিশাইয় হলেন এই পুস্তকটির লেখক।

লেখার সময়কালঃ যিশাইয় পুস্তকটি খ্রীষ্টপূর্ব ৭৩৯-৬৮১ অব্দের মধ্যে লেখা হয়েছিল।

লেখার উদ্দেশ্যঃ ভাববাদী যিশাইয়কে প্রাথমিকভাবে ডাকা হয়েছিল যেন তিনি যিহূদা রাজ্যের বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী বলেন। তৎসময়ে যিহূদা পুনর্জাগরণ ও বিরুদ্ধাচরণের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। যিহূদা আসিরিয়া ও মিসরীয়দের দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়া সংক্রান্ত হুমকির মধ্যে পড়েছিল, কিন্তু তারা ঈশ্বরের দয়া বা ক্ষমাশীলতার কারণে সেই অবস্থা থেকে রক্ষা পেয়েছিল। যিশাইয় ভাববাদী পাপের কারণে অনুতপ্ত হওয়া ও ভবিষ্যতে ঈশ্বর কর্তৃক প্রত্যাশিত মুক্তি বা উদ্ধারের আশাব্যঞ্জক বাণী ঘোষণা করলেন।

প্রধান পদসমূহঃ যিশাইয় ৬:৮ পদ, “পরে আমি প্রভুর রব শুনিতে পাইলাম; তিনি বলিলেন, আমি কাহাকে পাঠাইব? আমাদের পক্ষে কে যাইবে? আমি কহিলাম, এই আমি, আমাকে পাঠাও।”

যিশাইয় ৭:১৪ পদ, “অতএব, প্রভু আপনি তোমাদিগকে এক চিহ্ন দিবেন; দেখ, এক কন্যা গর্ভবতী হইয়া পুত্র প্রসব করিবে, ও তাঁহার নাম ইম্মানূয়েল [আমাদের সহিত ঈশ্বর] রাখিবে।”

যিশাইয় ৯:৬ পদ, “কারণ একটি বালক আমাদের জন্য জন্মিয়াছেন, একটিপ পুত্র আমাদিগকে দত্ত হইয়াছে ; আর তাঁহারই স্বন্ধের উপরে কর্তৃত্বভার থাকিবে, এবং তাঁহার নাম হইবে- ‘আশ্চর্যমন্ত্রী, বিক্রমশালী ঈশ্বর, সনাতন পিতা, শান্তিরাজ’।”

১৪:১২-১৩ পদ, “হে প্রভাতি-তারা ! ঊষা-নন্দন! তুমি ত স্বর্গভ্রষ্ট হইয়াছ! হে জাতিগণের নিপাতনকারী, তুমি ছিন্ন ও ভূপাতিত হইয়াছ! তুমি মনে মনে বলিয়াছিলে, আমি স্বর্গারোহণ করিব, ঈশ্বরের নক্ষত্রগণের ঊর্ধ্বে আমার সিংহাসন উন্নত করিব; সমাগম-পর্বতে, উত্তরদিকের প্রান্তে, উপবিষ্ট হইব; আমি মেঘরূপ উচ্চস্থলীর উপরে উঠিব, আমি পরাৎপরের তুল্য হইবে।”

যিশাইয় ৫৩:৫-৬ পদ, “কিন্তু তিনি আমাদের অধর্মের নিমিত্ত বিদ্ধ, আমাদের অপরাধের নিমিত্ত চটূর্ণ হইলেন; আমাদের শান্তিজনক শাস্তি তাঁহার উপরে বর্তিল, এবং তাঁহার ক্ষত সকল দ্বারা আমাদের আরোগ্য হইল। আমরা সকলে মেষগণের ন্যায় ভ্রান্ত হইয়াছি, প্রত্যেকে আপন আপন পথের দিকে ফিরিয়াছি; আর সদাপ্রভু আমাদের সকলের অপরাধ তাঁহার উপরে বর্তাইয়াছেন।”

যিশাইয় ৬৫:২৫ পদ, “কেন্দুয়াব্যাঘ্র ও মেষশাবক একত্র চরিরবে, সিংহ বলদের ন্যায় বিচালি খাইবে; আর ধূলিই সর্পের খাদ্য হইবে। তাহারা আমার পবিত্র পর্বতের কোন স্থানে হিংসা কিম্বা বিনাশ করিবে না, ইহা সদাপ্রভু কহেন।”

সারসংক্ষেপঃ যিশাইয় পুস্তকটি ঈশ্বরের বিচার ও পরিত্রাণের কথা প্রকাশ করে। ঈশ্বর হলেন “পবিত্র, পবিত্র, পবিত্র” (যিশাইয় ৬:৩ পদ), আর তাই তিনি পাপকে শাস্তিবিহীন অবস্থায় ছেড়ে দিতে পারেন না (যিশাইয় ১:২; ২:১১-২০; ৫:৩০; ৩৪:১-২; ৪২:২৫ পদ)। যিশাইয় ঈশ্বরের আসন্ন বিচারদন্ডকে “জ্বলন্ত অগ্নি/অগ্নিকুন্ড”-রূপে চিত্রিত বা বর্ণনা করেছেন (যিশাইয় ১:৩১; ৩০; ৩৩ পদ)।

একই সময়ে যিশাইয় এটিও উপলব্ধি করেন যে, ঈশ্বর হলেন করুণা, অনুগ্রহ ও সহানুভূতিশীলতার ঈশ্বর (যিশাইয় ৫:২৫; ১১:১৬; ১৪:১-২; ৩২:২; ৪০:৩; ৪১:১৪-১৬ পদ)। ইস্রায়েল জাতি (যিহূদা ও ইস্রায়েল উভয়ই) ঈশ্বরের আদেশের বিষয়ে অন্ধ ও বধির (যিশাইয় ৬:৯-১০; ৪২:৭ পদ)। যিহূদাকে দ্রাক্ষাক্ষেত্রের সাথে তুলনা করা হয়েছে যা পদদলিত হওয়া উচিত এবং ভবিষ্যতেও হবে (যিশাইয় ৫:১-৭ পদ)। কেবলমাত্র ঈশ্বরের করুণা ও ইস্রায়েলের প্রতি তাঁর প্রতিজ্ঞার কারণে ঈশ্বর কখনই ইস্রায়েল কিংবা যিহূদাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসপ্রাপ্ত হতে দেবেন না। তিনি আবার তাদের পুনঃস্থাপনের জন্য ফিরিয়ে আনবেন, তাদেরকে ক্ষমা করবেন ও আরোগ্য করবেন (যিশাইয় ৪৩:২; ৪৩:১৬-১৯; ৫২:১০-১২ পদ)।

পুরাতন নিয়মের অন্য যে কোন পুস্তকের তুলনায় যিশাইয় ভাববাদীর পুস্তকটিতে পরিত্রাণের উপর বেশী আলোকপাত করা হয়েছে যা মশীহের মধ্য দিয়ে আসবে। একদা মশীহ ন্যায় ও ধার্মিকতার সহিত শাসন করবেন (যিশাইয় ৯:৭; ৩২:১ পদ)। মশীহের রাজত্ব ইস্রায়েলের জন্য শান্তি ও সুরক্ষা বয়ে আনবে (যিশাইয় ১১:৬-৯ পদ)। মশীহের মধ্য দিয়ে ইস্রায়েল জাতি অন্যান্য সকল জাতির সম্মুখে দীপ্তিস্বরূপ হয়ে উঠবে (যিশাইয় ৪২:৬; ৫৫:৪-৫ পদ)। এই পৃথিবীতে মশীহের রাজ্যই (যিশাইয় ৬৫-৬৬ অধ্যায়) হলো যিশাইয় পুস্তকের সমস্ত অংশের প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয়। মশীহের এই রাজত্বের সময়েই এই পৃথিবীতে ঈশ্বরের ধার্মিকতা সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হবে।

আপাতদৃষ্টিতে বিপরীতভাবে এটি প্রতীয়মান যে, যিশাইয় পুস্তকটি মশীহকে এমন একজনের মতো করে উপস্থাপন করেছেন যিনি দুঃখকষ্ট ভোগ করবেন। যিশাইয় ৫৩ অধ্যায়ে পাপের জন্য মশীহের চরম ত্যাগস্বীকারের বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছে। বিষয়টি এমন যে, তাঁর ক্ষত দ্বারা আরোগ্যলাভ হবে। তাঁর ত্যাগস্বীকারের মধ্য দিয়ে আমাদের সমস্ত ব্যর্থতা, অযোগ্যতা দূরীভূত হবে। এই সুস্পষ্ট অসংগতি যীশু খ্রীষ্টে সমাধা করা হয়েছে। যিশাইয় ৫৩ অধ্যায়ে লক্ষ্য করা যায় যে, যীশু তাঁর প্রথম আবির্ভাব বা আগমনে ছিলেন একজন দুঃখকষ্ট ভোগকারী ব্যক্তি। আর তাঁর দ্বিতীয় আগমনে যীশু হবেন বিজয়ী ও শাসনকারী রাজা, শান্তিরাজ (যিশাইয় ৯:৬ পদ)।

পূর্বাভাসঃ উপরে যিশাইয় ৫৩ অধ্যায়ে বর্ণিত বিষয়টি যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে তাতে দেখা যায় যে মুক্তিদাতা বা উদ্ধারকর্তা মশীহ আসছেন যিনি মানবজাতির পাপের মূল্য পরিশোধে অবর্ণনীয় কষ্টভোগ করতে যাচ্ছেন। তাঁর সার্বভৌম ক্ষমতা বা প্রভুত্বে ঈশ্বর তাঁর ক্রুশারোপণের মধ্য দিয়ে সব এই অধ্যায়ে বর্ণিত সমস্ত ভাববাণীর পূর্ণতার বিষয়টি অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছেন যেভাবে পুরাতন নিয়মে মশীহ সম্পর্কিত অন্যান্য ভাববাণীগুলোও তাঁতে পূর্ণতা পায়। যিশাইয় ৫৩ অধ্যায়টিতে ব্যবহৃত বাক্যালঙ্কার বা শব্দালঙ্কারসমূহ মর্মভেদী ও ভবিষ্যদ্বাণীমূল্যক এবং এটি সুসমাচার সম্পর্কিত বিষয়াবলীর একটি পূর্ণ চিত্র ধারণ করে। যীশু অবজ্ঞাত ও পরিত্যাক্ত (যিশাইয় ৫৩:৩; লূক ১৩:৩৪; যোহন ১:১০-১১ পদ), ঈশ্বর কর্তৃক প্রহারিত (যিশাইয় ৫৩:৪; মথি ২৭:৪৬ পদ) এবং আমাদের অপরাধের জন্য বিদ্ধ বা চূর্ণ হলেন (যিশাইয় ৫৩:৫; যোহন ১৯:৩৪; ১পিতর ২:২৪ পদ)। তিনি তাঁর ত্যাগস্বীকারের মধ্য দিয়ে যে শাস্তি আমাদের প্রাপ্য ছিল, তার মূল্য তিনি পরিশোধ করলেন এবং আমাদের নিমিত্ত চূড়ান্ত ও নিখুঁত বলিরূপে নিজেকে উৎসর্গ করলেন (যিশাইয় ৫৩:৫; ইব্রীয় ১০:১০ পদ)। যদিও তিনি পাপহীন ছিলেন, তথাপি ঈশ্বর তাঁর উপর আমাদের পাপের বোঝা চাপালেন, আর এতে করে আমরা ঈশ্বরের ধার্মিকতায় তাঁর সাথে ধার্মিক গণিত হলাম (২করিন্থীয় ৫:২১ পদ)।

বাস্তব বা কার্যকরী প্রয়োগঃ যিশাইয় পুস্তকটি আমাদের সম্মুখে আমাদের মুক্তিদাতা বা পরিত্রাণকর্তাকে অনস্বীকার্য সত্যরূপে উপস্থাপন করে। স্বর্গে যাবার তিনিই একমাত্র পথ, ঈশ্বরের করুণা লাভের তিনিই একমাত্র পন্থা, একমাত্র উপায়, একমাত্র সত্য এবং তিনিই একমাত্র জীবন (যোহন ১৪:৬; প্রেরিত ৪:১২ পদ)। আমাদের পাপের জন্য মূল্য পরিশোধকারী খ্রীষ্ট সম্পর্কে জানার পর আমরা কিভাবে “এমন মহৎ এই পরিত্রাণ” অবহেলা বা পরিত্যাগ করতে পারি? (ইব্রীয় ২:৩ পদ)। খ্রীষ্টের কাছে আসার এবং তিনি আমাদের যে পরিত্রাণ দিতে চান তা গ্রহণ করার জন্য এই পৃথিবীতে আমাদের মাত্র কয়েকটি বছর সময় রয়েছে। মৃত্যুর পর আর কোন সুযোগ নেই, বরং সেখানে রয়েছে অনন্তকাল ধরে নরক যন্ত্রণা ভোগ।

আপনি কি সেই সব লোকদের সম্পর্কে জানেন যারা নিজেদের খ্রীষ্টবিশ্বাসী বলে দাবী করে, কিন্তু তারা দ্বিমুখবিশিষ্ট ও কপটতায় পরিপূর্ণ? সম্ভবতঃ সেই বিষয়টি জানার জন্য যিশাইয় যেভাবে ইস্রায়েল জাতিকে দেখেছেন সেটি আমাদের জন্য সবচেয়ে উত্তম পন্থা। ইস্রায়েল জাতির ধার্মিকতার একটি আরবণ ছিল বটে, কিন্তু সেটি ছিল কেবলই বাইরের খোলসমাত্র। যিশাইয় ভাববাদী তার পুস্তকটিতে ইস্রায়েল জাতির জন্য এই আহ্বান জানিয়েছেন যেন তারা কেবলমাত্র বাহ্যিকভাবে নয়, কিন্তু যেন তাদের সমস্ত অন্তরের সহিত ঈশ্বরকে মান্য করে। যিশাইয়ের এই প্রত্যাশা ছিল যে, যারা যারা তার এই বাক্য বা কথা শুনবে ও পড়বে, তারা অবশ্যই তাদের মন্দতা থেকে ফিরবে এবং সেই সঙ্গে ঈশ্বরের কাছ থেকে তাঁর ক্ষমা ও সুস্থতা লাভের জন্য তাঁর প্রতি মনোনিবেশ করবে।

[English]



[বাংলা হোম পেজে ফিরে যান]

আপনি কি যিশাইয় পুস্তকটির সারসংক্ষেপ করতে পারেন? যিশাইয় পুস্তকের সমস্ত বিষয় কি সম্পর্কে লেখা হয়েছে?

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.