কুরআনে কারীমের কোন সূরাকে নিয়ে বিদ্রূপাত্মক কৌতুক করা থেকে সতর্কীকরণ

প্রশ্ন প্রশ্ন: দুঃখের বিষয় হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে আমার কাছে এ মেসেজটি এসেছে “তারা জনৈক ফাসেক রোযাদারকে জিজ্ঞেস করল: রমযান মাসে আপনার অন্তরের অধিক নিকটবর্তী সূরা কোনটি…?! উত্তরে সে বলল: মায়িদা (খাবারের দস্তরখান), দুখান (ধোঁয়া) ও নিসা (নারী)!!!” আশা করি, এ ধরণের কৌতুক করার বিধান স্পষ্ট করবেন। প্রশ্ন: দুঃখের বিষয় হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে আমার কাছে এ…

প্রশ্ন

প্রশ্ন: দুঃখের বিষয় হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে আমার কাছে এ মেসেজটি এসেছে “তারা জনৈক ফাসেক রোযাদারকে জিজ্ঞেস করল: রমযান মাসে আপনার অন্তরের অধিক নিকটবর্তী সূরা কোনটি…?! উত্তরে সে বলল: মায়িদা (খাবারের দস্তরখান), দুখান (ধোঁয়া) ও নিসা (নারী)!!!” আশা করি, এ ধরণের কৌতুক করার বিধান স্পষ্ট করবেন।

প্রশ্ন: দুঃখের বিষয় হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে আমার কাছে এ মেসেজটি এসেছে “তারা জনৈক ফাসেক রোযাদারকে জিজ্ঞেস করল: রমযান মাসে আপনার অন্তরের অধিক নিকটবর্তী সূরা কোনটি…?! উত্তরে সে বলল: মায়িদা (খাবারের দস্তরখান), দুখান (ধোঁয়া) ও নিসা (নারী)!!!” আশা করি, এ ধরণের কৌতুক করার বিধান স্পষ্ট করবেন।

আলহামদু লিল্লাহ।.

উল্লেখিত কথা চরম গর্হিত এবং আল্লাহ্‌র বাণীর সাথে ঠাট্টা-মশকরা; যে বাণী হচ্ছে মহান ও সর্বাধিক সম্মানিত। যে বাণীকে উপহাসকারী কাফের ও কঠিন শাস্তির হুমকিপ্রাপ্ত। যেমনটি আল্লাহ্‌ তাআলা বলেছেন: “মুনাফেকরা ভয় করে তাদের সম্পর্কে এমন এক সূরা না জানি নাযিল হয়, যা ওদের অন্তরের কথা ব্যক্ত করে দেবে! বলুন, ‘তোমরা বিদ্রূপ করতে থাক; তোমরা যে ভয় করছ নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তা বের করে দেবেন। আর আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে অবশ্যই তারা বলবে, ‘আমরা তো আলাপ-আলোচনা ও খেল-তামাশা করছিলাম।’ বলুন, ‘তোমরা কি আল্লাহ্‌, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলকে নিয়ে বিদ্রূপ করছিলে? ওজর পেশ করো না। ঈমান আনার পর তোমরা কুফরী করেছ। আমরা তোমাদের মধ্যে কোন দলকে ক্ষমা করলেও অন্য দলকে শাস্তি দেব। কারণ তারা অপরাধী।”[সূরা তাওবা, আয়াত: ৬৪-৬৬]

এ ধরণের ব্যঙ্গ-বিদ্রূপে কেবল নির্বোধ ও আল্লাহ্‌র সীমারেখার ব্যাপারে বেপরোয়া ব্যক্তিবর্গই লিপ্ত হতে পারে; যারা দাবী করে যে, আমরা কৌতুক ও বিনোদন করছিলাম; ঠিক ঐ সমস্ত লোকদের মত যাদের সম্পর্কে এই আয়াতে কারীমাটি নাযিল হয়েছিল।

ইমাম তাবারী তাঁর তাফসির গ্রন্থে (১৪/৩৩৩) সাদ থেকে, তিনি যায়েদ বিন আসলাম থেকে বর্ণনা করেন যে: তাবুক যুদ্ধের সময় মুনাফিকদের এক লোক আউফ বিন মালেক (রাঃ) কে বলেন: আমাদের এ সব ক্বারীদের একি অবস্থা তারা পেটের ব্যাপারে আমাদের সকলের চেয়ে বেশি আগ্রহী, আমাদের মধ্যে বেশি মিথ্যাবাদী এবং যুদ্ধের ময়দানে তারা বেশি ভীরু? তখন আউফ তাকে বললেন: তুমি মিথ্যা বলেছ; বরং তুমি মুনাফিক। অবশ্যই আমি তোমার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানাব। তখনি আউফ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানানোর জন্য চলে গেলেন। গিয়ে দেখলেন যে, তার আগেই কুরআন নাযিল হয়ে গেছে। যায়েদ বলেন: আব্দুল্লাহ্‌ বিন উমর (রাঃ) বলেন: আমি দেখলাম সে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উটের রশির সাথে লটকানো অবস্থায় পাথরের আঘাত খাচ্ছে আর বলছে: ‘আমরা তো আলাপ-আলোচনা ও খেল-তামাশা করছিলাম।’ আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে লক্ষ্য করে বলছিলেন: “তোমরা কি আল্লাহ্‌, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলকে নিয়ে বিদ্রূপ করছিলে?” এর বেশি বাড়াতেন না।

আবু বকর ইবনুল আরাবী তাঁর তাফসির গ্রন্থে (২/৫৪৩) বলেন: “তারা যা বলেছিল তা হয়তো মন থেকে বলেছিল কিংবা ঠাট্টাচ্ছলে বলেছিল। যেভাবেই বলুক না কেন: এটা কুফরি। কেননা কুফরি দিয়ে ঠাট্টা করাও কুফরি– এ নিয়ে উম্মতের মাঝে কোন মতভেদ নেই। আর বাস্তব তথ্য হচ্ছে হক্ক ও জ্ঞানের ভাই। আর ঠাট্টা-মশকরা হচ্ছে- বাতিল ও অজ্ঞতার ভাই।[সমাপ্ত]

এই মহান সূরাগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন বিধি-বিধান, নানাবিধ অনুশাসন ও ওয়াজ-নসিহত। মুমিন ব্যক্তি এ সূরাগুলোকে ভালবাসে; কেননা এগুলো আল্লাহ্‌র বাণী। এ কারণে নয় যে, এগুলোতে দস্তরখান (মায়িদা), কিংবা নারী (নিসা) এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। থাক তো এটাকে পেট ও যৌনাঙ্গের চাহিদা পূরণ থেকে নিষিদ্ধ রোযাপালনকারীর সাথে সম্পৃক্ত করা হবে।[সমাপ্ত]

এই বিশ্রী কৌতুকটিতে আল্লাহ্‌র বাণীর অর্থকেও বিকৃত করা হয়েছে। ইসলামে যা নিষিদ্ধ ও গর্হিত এমন কিছুকে আল্লাহ্‌র বাণীর অর্থ ধরা হয়েছে। ধোঁয়া কিয়ামতের একটি আলামত ও নিদর্শন। এই বিদ্রূপকারী ও তার মত লোকেরা যে ধোঁয়া (সিগারেট) পান করার আকাঙ্ক্ষী এটা সে ধোঁয়া নয়। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “অতএব আপনি অপেক্ষা করুন সেই দিনের যেই দিন স্পষ্ট ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হবে আকাশ, তা আবৃত করে ফেলবে লোকদেরকে। এটা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (তারা বলবে) হে আমাদের রব! আমাদের থেকে শাস্তি দূর করুন, নিশ্চয় আমরা মুমিন হব। তারা কি করে উপদেশ গ্রহণ করবে? অথচ ইতোপূর্বে তাদের কাছে এসেছে স্পষ্ট এক রাসূল।”[সূরা আল-দুখান, আয়াত: ১০-১৩]

যে ব্যক্তির কাছে এ মেসেজটি পাঠানো হয়েছে তার কর্তব্য হচ্ছে এর প্রতিবাদ করা এবং এ মেসেজ প্রেরণকারীকে উপদেশ দেয়া, সে যেন এ মেসেজ পুনরায় প্রচার না করে। যেহেতু এই মেসেজে আল্লাহ্‌র সাথে কুফরি রয়েছে এবং আল্লাহ্‌র কালামের সাথে বিদ্রূপ রয়েছে।

জিহ্বার যাবতীয় অর্জন থেকে সাবধান থাকা আবশ্যক। কারণ একটি মাত্র কথা ব্যক্তিকে পূর্ব-পশ্চিমের মাঝে যেমন দূরত্ব জাহান্নামের এমন অতলে নিক্ষেপ করে।

সহিহ বুখারী (৬৪৭৮) ও সহিহ মুসলিমে (২৯৮৮) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন যে, নিশ্চয় বান্দা আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টিমূলক এমন এক কথা বলে ফেলে; যে কথাকে বান্দা তেমন কিছু মনে করে না; কিন্তু আল্লাহ্‌ এই কথার মাধ্যমে তার মর্যাদা উন্নীত করেন। এবং নিশ্চয় বান্দা আল্লাহ্‌র ক্রোধ উদ্রেককারী এমন কোন কথা বলে ফেলে, বান্দা সে কথাকে তেমন কিছু মনে করে না; কিন্তু এই কথার কারণে আল্লাহ্‌ তাকে জাহান্নামের অতলে নিক্ষেপ করেন।”

সহিহ বুখারী (৬৪৭৭) ও সহিহ মুসলিমে (২৯৮৮) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন যে, তিনি বলেন: নিশ্চয় বান্দা এমন এক কথা বলে ফেলে, যে (তথ্যের) ব্যাপারে সে নিশ্চিত হয়নি; এ কথার কারণে সে ব্যক্তি পূর্ব দিগন্তের চেয়ে গভীর জাহান্নামের অতলে নিমজ্জিত হবে।

সুনানে তিরমিযি (২৩১৯) ও সুনানে ইবনে মাজাহ (৩৯৬৯) গ্রন্থে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবী বিলাল বিন হারেছ আল-মুযানি থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন: “তোমাদের কেউ আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টিমূলক এমন কথা বলে, সে কথা এত বেশি প্রসারতা পায় যা ঐ বান্দা নিজেও ধারণা করেনি। এর প্রতিফলে আল্লাহ্‌ সে ব্যক্তির আমলনামায় তার সাথে সাক্ষাতের দিন পর্যন্ত তার সন্তুষ্টি লিখে দেন। নিশ্চয় তোমাদের কেউ আল্লাহ্‌র ক্রোধ উদ্রেককারী এমন কথা বলে; সে ব্যক্তি নিজেও ধারণা করে না যে এ কথা এমন পর্যায়ে পৌঁছবে। এর প্রতিফলে আল্লাহ্‌ সে ব্যক্তির আমলনামায় তার সাথে সাক্ষাতের দিন পর্যন্ত তার অসন্তুষ্টি লিখে রাখেন।[আলবানী ‘সহিহুত তিরমিযি’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

আমরা আল্লাহ্‌র কাছে নিরাপত্তা চাই।

সকলের জেনে রাখা উচিত: আলেমগণের সর্বসম্মতিক্রমে কুফরি দিয়ে রসিকতা করাও কুফরি। যেমনটি ইতিপূর্বে ইবনুল আরাবীর উক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এর জন্যে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ উদ্দেশ্য হওয়া শর্ত নয়।

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন: এক্ষেত্রে তিনটি স্তর রয়েছে:

১. কথা ও গালি উভয়টি উদ্দেশ্য হওয়া। এটি মন থেকে যারা বিদ্রূপ করে তাদের কাজ। যেভাবে ইসলামের শত্রুরা ইসলামকে গালি দিয়ে থাকে।

২. শুধু কথাটি উদ্দেশ্য হওয়া; গালি নয়। অর্থাৎ রসিকতা করে গালি নির্দেশ করে এমন কথাকে উদ্দেশ্য করা; সিরিয়াসলি নয়। এ ব্যক্তির হুকুমও প্রথম স্তরের ব্যক্তির ন্যায়– সে কাফের হয়ে যাবে। যেহেতু এটি বিদ্রূপ ও ঠাট্টা।

৩. কথাও উদ্দেশ্য নয়; গালিও উদ্দেশ্য নয়। বরং জিহ্বার স্খলন ঘটে এমন কিছু বলে ফেলা যা গালি নির্দেশ করে; কিন্তু আদৌ কোন উদ্দেশ্য ছিল না। কথাও উদ্দেশ্য ছিল না; গালিও উদ্দেশ্য ছিল না। এ ব্যক্তিকে এ কাজের জন্য দোষী করা হবে না। এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে এ আয়াতটি নাযিল হয়েছে: “তোমাদের অনর্থক শপথের জন্য আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন না।”[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ২২৫] এ ধরণের শপথ হচ্ছে এমন– কেউ তার কথার মাঝখানে বলে ফেলল: ‘লা, ওয়াল্লাহ্‌ (আল্লাহ্‌র শপথ এমনটি নয়) কিংবা বলে ফেলল: বালা, ওয়াল্লাহ্‌ (হ্যাঁ; আল্লাহ্‌র শপথ); অর্থাৎ শপথটা বক্তার উদ্দেশ্য নয়। তাই এ ধরণের কথার ক্ষেত্রে শপথের হুকুম প্রযোজ্য হবে না। ঠিক এভাবে মানুষের মুখে উদ্দেশ্যহীনভাবে কোন কিছু চলে আসলে সেটার ক্ষেত্রে হুকুম প্রযোজ্য হবে না।”[নুরুন আলাদ দারব ফতোয়াসমগ্র থেকে সংকলিত]

আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.