তাশরিকের দিনগুলোতে রোযা রাখার হুকুম

প্রশ্ন প্রশ্ন: জনৈক ব্যক্তি ১১ ই যিলহজ্জ ও ১২ ই যিলহজ্জ রোযা রেখেছে। তার এ রোযা পালনের হুকুম কি? আলহামদু লিল্লাহ।. যিলহজ্জের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখকে তাশরিকের দিন বলা হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি এ দিনগুলোতে রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন। শুধুমাত্র তামাত্তু কিংবা ক্বিরান হজ্জকারীর কোরবানী করার মত…

প্রশ্ন

প্রশ্ন: জনৈক ব্যক্তি ১১ ই যিলহজ্জ ও ১২ ই যিলহজ্জ রোযা রেখেছে। তার এ রোযা পালনের হুকুম কি?

আলহামদু লিল্লাহ।.

যিলহজ্জের
১১, ১২ ও ১৩
তারিখকে
তাশরিকের দিন
বলা হয়।

নবী
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া
সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত
হয়েছে যে, তিনি
এ দিনগুলোতে
রোযা রাখতে
নিষেধ করেছেন।
শুধুমাত্র
তামাত্তু
কিংবা
ক্বিরান
হজ্জকারীর
কোরবানী করার
মত সামর্থ্য না
থাকলে তাকে
ছাড়া অন্য
কাউকে এ
দিনসমূহে
রোযা রাখার ছাড়
দেননি। সহিহ
মুসলিমে
(১১৪১)
নুবাইশা
আল-হুযালি
(রাঃ) থেকে
বর্ণিত আছে
যে, তিনি বলেন
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন:
“তাশরিকের
দিনগুলো
হচ্ছে-
পানাহারের
দিন ও আল্লাহর
যিকিরের দিন।”

মুসনাদে
আহমাদে
(১৬০৮১) হামযা
বিন আমর
আল-আসলামি
(রাঃ) থেকে
বর্ণিত আছে
যে, তিনি
দেখলেন নবী
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া
সাল্লামের উপস্থিতিতে
মীনাতে এক
ব্যক্তি উটের
পিঠে চড়ে
মানুষের অবস্থানস্থলে
গিয়ে গিয়ে
বলছেন: “আপনারা
এ দিনগুলোতে
রোযা রাখবেন
না; এ দিনগুলো
পানাহারের
দিন।”[আলবানী
‘সহিহুল জামে’
গ্রন্থে
(৭৩৫৫)
হাদিসটিকে
সহিহ
আখ্যায়িত
করেছেন]

উম্মে
হানির
আযাদকৃত দাস
আবু মুর্‌রা
থেকে বর্ণিত
আছে যে, তিনি
আব্দুল্লাহ
বিন আমরের
সাথে তার পিতা
আমর বিন আসের
কাছে যান। তিনি
তাদের
দুইজনের জন্য
খাবার পেশ করে
বলেন: খাও। সে
বলল: আমি রোযা
রেখেছি। আমর
বললেন: খাও; রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এ দিনগুলোতে
আমাদেরকে
রোযা রাখতে
নিষেধ করতেন,
রোযা না-রাখার
নির্দেশ
দিতেন। মালেক
বলেন: এ দিনগুলো
হচ্ছে-
তাশরিকের
দিন।[মুসনাদে
আহমাদ (১৭৩১৪)
ও সুনানে আবু
দাউদ (২৪১৮)
আলবানী সহিহ আবু
দাউদ গ্রন্থে
হাদিসটিকে
সহিহ
আখ্যায়িত করেছেন]

সাদ
বিন আবু
ওয়াক্কাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিত
তিনি বলেন:
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া
সাল্লাম
আমাকে
নির্দেশ দেন
আমি যেন মীনার
দিনগুলোতে
ঘোষণা করি:
“এগুলো পানাহারের
দিন; এ
দিনগুলোতে
রোযা নেই।”
অর্থাৎ তাশরিকের
দিনগুলোতে।
মুসনাদ
গ্রন্থের
মুহাক্কিক
বলেন:
‘হাদিসটি সহিহ
লি গাইরিহি।’

সহিহ
বুখারীতে
(১৯৯৮) আয়েশা
(রাঃ) ও ইবনে
উমর (রাঃ) থেকে
বর্ণিত আছে
যে, তাঁরা
বলেন: যে
ব্যক্তি
হাদির পশু সংগ্রহ
করতে পারে নাই
সে ব্যক্তি
ছাড়া তাশরিকের
দিনগুলোতে
অন্য কাউকে
রোযা রাখার
অবকাশ দেয়া
হয়নি।


হাদিসগুলোতে
ও অন্যান্য
আরও কিছু
হাদিসে
তাশরিকের
দিনসমূহে
রোযা রাখতে
নিষেধ করা
হয়েছে।


কারণে
অধিকাংশ
আলেমের মতে, এ
দিনগুলোতে
নফল রোযা রাখা
ঠিক নয়। পক্ষান্তরে,
রমযানের কাযা
রোযা পালন কোন
কোন আলেমের
মতে, জায়েয।
তবে, সঠিক
মতানুযায়ী
সেটাও
নাজায়েয।

ইবনে
কুদামা ‘আল-মুগনী’
গ্রন্থে (৩/৫১)
বলেন:

অধিকাংশ
আলেমের মতে, এ
দিনগুলোতে
নফল রোযা রাখা
বৈধ নয়। তবে,
ইবনে যুবাইর সম্পর্কে
বর্ণিত আছে
যে, তিনি এ
দিনগুলোতে
রোযা রাখতেন।
অনুরূপ কথা
ইবনে উমর (রাঃ)
ও আসওয়াদ বিন
ইয়াযিদ (রাঃ) সম্পর্কেও
বর্ণিত আছে।
আবু তালহা
(রাঃ) সম্পর্কে
বর্ণিত আছে
যে, তিনি ঈদের
দুই দিন ব্যতীত
অন্য কোন দিন
রোযা রাখা বাদ
দিতেন না।
বাহ্যতঃ মনে
হচ্ছে যে,
তাশরিকের
দিনগুলোতে
রোযা রাখার
ব্যাপারে নবী
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের
নিষেধাজ্ঞার
সংবাদ এ
সাহাবীবর্গের
কাছে পৌঁছেনি;
যদি পৌঁছত তাহলে
তাঁরা সেটা
লঙ্ঘন করতেন
না।

পক্ষান্তরে,
এ দিনগুলোতে
ফরয রোযা রাখা
সম্পর্কে
দুইটি অভিমত
আছে:

এক: এ
দিনগুলোতে
ফরয রোযা
রাখাও
নাজায়েয, কেননা
এ দিনগুলোতে
রোযা রাখতে
নিষেধ করা
হয়েছে। তাই এ দুটি
দিন ঈদের
দিনের মত।

দুই: এ
দিনগুলোতে
ফরয রোযা রাখা
সঠিক—
ইবনে উমর (রাঃ)
ও আয়েশা (রাঃ)
থেকে বর্ণিত
হাদিসের
কারণে। তাঁরা
বলেন: যে
ব্যক্তি
হাদির পশু সংগ্রহ
করতে পারে নাই
সে ব্যক্তি ব্যতীত
তাশরিকের
দিনগুলোতে
অন্য কাউকে
রোযা রাখার অবকাশ
দেয়া হয়নি।
অর্থাৎ
তামাত্তু
হজ্জকারী যদি
হাদির পশু
সংগ্রহ করতে
না পারে। এ
হাদিসটি
সহিহ।
হাদিসটি
বর্ণনা করেছেন
ইমাম বুখারী। এর
উপর অন্য ফরয
রোযাকে কিয়াস
করা
হবে।[সমাপ্ত]

হাম্বলি
মাযহাবের
নির্ভরযোগ্য
অভিমত হচ্ছে-
এ দিনগুলোতে
রমযানের কাযা
রোযা পালন বৈধ
হবে না।

[দেখুন:
কাশশাফুল
ক্বিনা (২/৩৪২)]

পক্ষান্তরে,
তামাত্তু ও
ক্বিরান
হজ্জকারী হাদির
(কোরবানীর)
পশু সংগ্রহ করতে
না পারলে তাশরিকের
দিনগুলোতে
রোযা থাকার
বৈধতা ইতিপূর্বে
উল্লেখিত
আয়েশা (রাঃ) ও
ইবনে উমর (রাঃ)
এর হাদিস
প্রমাণ করে।
এটি মালেকি ও
হাম্বলি
মাযহাবের
অভিমত এবং
ইমাম শাফেয়ির
প্রাচীন
অভিমতও এটাই।

তবে,
হানাফি ও
শাফেয়ি
মাযহাব মতে, তাশরিকের
দিনসমূহে এ
রোযাগুলো
রাখাও
নাজায়েয।

[আল-মাওসুআ
আল-ফিকহিয়্যা
(৭/৩২৩)]

অগ্রগণ্য
অভিমত: প্রথম
অভিমতটি। সেটি
হচ্ছে- যে
ব্যক্তি
হাদির
(কোরবানীর)
পশু সংগ্রহ
করতে পারেনি
তার জন্য এ
দিনগুলোতে
রোযা রাখা
জায়েয।

ইমাম
নববী (রহঃ)
‘আল-মাজমু
(৬/৪৮৬)
গ্রন্থে বলেন:

জেনে
রাখুন,
মাযহাবের
আলেমদের নিকট
অধিক শুদ্ধ
অভিমত হচ্ছে- শাফেয়ির
নতুন অভিমতটি
অর্থাৎ
তাশরিকের দিনগুলোতে
কোন রোযা রাখা
বৈধ নয়;
তামাত্তু
হজ্জকারীর
জন্যেও নয়,
অন্যদের
জন্যেও নয়।
তবে, দলিল
বিশ্লেষণে
অধিক
অগ্রগণ্য
অভিমতটি
হচ্ছে-
তামাত্তু
হজ্জকারীদের
জন্য এ
দিনগুলোতে
রোযা রাখা
বৈধ। কেননা যে
হাদিসে
তামাত্তু
হজ্জকারীকে রোযা
রাখার ছাড়
দেয়া হয়েছে সে
হাদিস সহিহ;
যেমনটি আমরা ইতিপূর্বে
উল্লেখ
করেছি। এ
হুকুমের
ব্যাপারে সে
হাদিসটির
বক্তব্য সুনির্দিষ্ট;
তাই অন্য কোন
ব্যাখ্যার
অবকাশ
নেই।[সমাপ্ত]

জবাবের
সারাংশ:
তাশরিকের
দিনগুলোতে
রোযা রাখা বৈধ
নয়; না নফল
রোযা, না ফরয
রোযা;
শুধুমাত্র তামাত্তু
হজ্জকারী ও
ক্বিরান
হজ্জকারী
হাদির
(কোরবানীর)
পশু সংগ্রহ
করতে না পারলে
তার জন্য রোযা
রাখা বৈধ।

শাইখ
বিন বায (রহঃ)
বলেন: ১৩ই
যিলহজ্জে নফল
রোযা কিংবা
ফরয রোযা
কোনটা রাখা
জায়েয নয়।
কেননা এ
দিনগুলো
পানাহার ও
আল্লাহর
যিকিরের দিন।
নবী
সাল্লাল্লাহু
আলাই ওয়া
সাল্লাম এ
দিনগুলোতে
রোযা রাখতে
বারণ করেছেন;
শুধুমাত্র
তামাত্তু
হজ্জকারী ও
ক্বিরান
হজ্জকারী
হাদির
(কোরবানীর)
পশু সংগ্রহ
করতে না পারলে
তার জন্য রোযা
রাখার ব্যাপারে
ছাড়
দিয়েছেন।[সমাপ্ত]

[মাজমুউ
ফাতাওয়া বিন
বায (১৫/৩৮১)]

শাইখ
উছাইমীন (রহঃ)
বলেন:

তাশরিকের
দিন হচ্ছে-
ঈদুল আযহার
পরের তিন দিন।
এ দিনগুলোকে
তাশরিকের দিন
বলা হয় যেহেতু
এ দিনগুলোতে
মানুষ রোদের
উত্তাপে গোশত
শুকিয়ে থাকে;
যাতে করে তারা
গোশতগুলো
মজুদ করলে
নষ্ট না যায়।
এ তিন দিনের
ব্যাপারে
রাসূল
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া
সাল্লাম
বলেছেন:
“তাশরিকের
দিনগুলো হচ্ছে-
পানাহার ও
আল্লাহর
যিকিরের দিন”।
এ দিনগুলোর
ক্ষেত্রে
শরিয়তের
উদ্দেশ্য
হচ্ছে-
পানাহার ও
আল্লাহর
যিকির করা।
তাই এ দিনগুলো
রোযা পালনের
উপযুক্ত সময়
নয়। এ কারণে
ইবনে উমর (রাঃ)
ও আয়েশা (রাঃ)
বলেন: “যে
ব্যক্তি হাদির
পশু সংগ্রহ
করতে পারে নাই
সে ব্যক্তি ছাড়া
তাশরিকের
দিনগুলোতে
অন্য কাউকে
রোযা রাখার
অবকাশ দেয়া
হয়নি।” অর্থাৎ
তামাত্তু হজ্জকারী
ও ক্বিরান
হজ্জকারী
হাদির
(কোরবানীর)
পশু সংগ্রহ
করতে না পারলে
হজ্জের সময় এ
তিনদিন রোযা
রাখবে এবং
হজ্জ থেকে
পরিবারের
কাছে ফিরে
সাতটি রোযা
রাখবে। তাই
তামাত্তু ও
ক্বিরান
হজ্জকারী
হাদির পশু না
পেলে তার জন্য
এ দিনগুলোতে
রোযা রাখা
জায়েয; যেন
রোযা রাখার পূর্বে
হজ্জের মৌসুম
শেষ হয়ে না
যায়। এ ছাড়া
অন্য কোন রোযা
এ দিনগুলোতে
রাখা
নাজায়েয।
এমনকি কোন
ব্যক্তির উপর
যদি দুই মাসের
লাগাতর রোযা রাখা
ফরয হয়ে থাকে
সে ব্যক্তিও
ঈদের দিন এবং
ঈদের পর আরও
তিনদিন রোযা
রাখবে না। এ
দিনগুলোর পর
পুনরায়
লাগাতর রোযা
থাকা শুরু
করবে।

[মাজমুউ
ফাতাওয়া ইবনে
উছাইমীন,
২০/প্রশ্ন নং: ৪১৯]

ইতিপূর্বের
আলোচনার
ভিত্তিতে বলা
যায় যে ব্যক্তি
তামাত্তু
হজ্জকারী
কিংবা
ক্বিরান হজ্জকারী
না হয়েও
তাশরিকের
দিনগুলোতে
রোযা রেখেছে
কিংবা
তাশরিকের কোন
কোন দিনে রোযা
রেখেছে তার
উপর ফরয
হচ্ছে-
আল্লাহর কাছে
ইস্তিগফার
করা। যেহেতু
সে নবী
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া
সাল্লাম
কর্তৃক
নিষিদ্ধ
বিষয়ে লিপ্ত
হয়েছে। যদি সে
ব্যক্তি
রমযানের কাযা
রোযা পালন করে
থাকেন সেটাও
জায়েয হবে না।
বরং পুনরায়
তাকে কাযা
পালন করতে
হবে।

আল্লাহই
ভাল জানেন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.