পরিবারের সদস্য নির্ধারণের নীতিমালা যাদের পক্ষ থেকে একটি পশু যবেহ করাই যথেষ্ট

প্রশ্ন প্রশ্ন: আমি চাকুরীজীবী। বিয়ে করিনি। আমি আমার বাবার সাথে থাকি। আমার বাবার পরিবর্তে আমি যদি একটি কোরবানীর পশু খরিদ করি সেটা কি জায়েয হবে? নাকি আমার পিতাকে তার নিজস্ব সম্পদ থেকে কোরবানীর পশুটি কিনতে হবে? আমি যদি কোরবানীর পশু খরিদ করার জন্য সহযোগিতাস্বরূপ আমার বাবাকে কিছু অর্থ দেই সেটা কেমন হবে? আমি এখন –আলহামদুলিল্লাহ-…

প্রশ্ন

প্রশ্ন: আমি চাকুরীজীবী। বিয়ে করিনি। আমি আমার বাবার সাথে থাকি। আমার বাবার পরিবর্তে আমি যদি একটি কোরবানীর পশু খরিদ করি সেটা কি জায়েয হবে? নাকি আমার পিতাকে তার নিজস্ব সম্পদ থেকে কোরবানীর পশুটি কিনতে হবে? আমি যদি কোরবানীর পশু খরিদ করার জন্য সহযোগিতাস্বরূপ আমার বাবাকে কিছু অর্থ দেই সেটা কেমন হবে? আমি এখন –আলহামদুলিল্লাহ- নিজেই কোরবানীর পশু কেনার সামর্থ্য রাখি। এমতাবস্থায়, আমার নিজের পক্ষ থেকে কোরবানী দেয়া কি আমার উপর ওয়াজিব; উল্লেখ্য আমি এখনও বিয়ে করিনি? এ প্রশ্নগুলো একটি অপরটির সাথে সম্পৃক্ত। আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিন এবং আপনাদেরকে ইসলাম ও মুসলমানদের খেদমত করার তাওফিক দিন।

প্রশ্ন: আমি চাকুরীজীবী। বিয়ে করিনি। আমি আমার বাবার সাথে থাকি। আমার বাবার পরিবর্তে আমি যদি একটি কোরবানীর পশু খরিদ করি সেটা কি জায়েয হবে? নাকি আমার পিতাকে তার নিজস্ব সম্পদ থেকে কোরবানীর পশুটি কিনতে হবে? আমি যদি কোরবানীর পশু খরিদ করার জন্য সহযোগিতাস্বরূপ আমার বাবাকে কিছু অর্থ দেই সেটা কেমন হবে? আমি এখন –আলহামদুলিল্লাহ- নিজেই কোরবানীর পশু কেনার সামর্থ্য রাখি। এমতাবস্থায়, আমার নিজের পক্ষ থেকে কোরবানী দেয়া কি আমার উপর ওয়াজিব; উল্লেখ্য আমি এখনও বিয়ে করিনি? এ প্রশ্নগুলো একটি অপরটির সাথে সম্পৃক্ত। আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিন এবং আপনাদেরকে ইসলাম ও মুসলমানদের খেদমত করার তাওফিক দিন।

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

হানাফি আলেমগণ ছাড়া অন্য সকল আলেম একমত যে, ব্যক্তি নিজের পক্ষ থেকে ও নিজের পরিবারের পক্ষ থেকে কোরবানী দিলে তাতে সুন্নতে কিফায়া আদায় হবে। দলিল হচ্ছে- আবু আইয়ুব আনসারীর হাদিস। তাঁকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় যে, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি এর যামানায় কোরবানীর পশু কেমন ছিল। তিনি বলেন: একজন লোক তার নিজের পক্ষ থেকে ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে একটি ছাগল দিয়ে কোরবানী দিত। তারা নিজেরাও খেত, অন্যদেরকেও খাওয়াত। এক পর্যায়ে মানুষ বাহাদুরি করা শুরু করল; এখনকার অবস্থাতো দেখতেই পাচ্ছেন।”।[তিরমিযি সুনান গ্রন্থে (১৫০৫) হাদিসটি বর্ণনা করেন এবং বলেন: হাসান সহিহ]

এ মাসয়ালাটি আমাদের ওয়েব সাইটের কয়েকটি প্রশ্নোত্তরে আলোচনা করা হয়েছে; যেমন- 45916 নং ও 96741 নং প্রশ্নোত্তরে।

দুই:

পরিবারের সদস্য নির্ধারণের নীতি কি হবে, যে পরিবারের পক্ষ থেকে একটি পশু কোরবানী দিলে চলবে। এ ব্যাপারে আলেমগণ চারটি অভিমতের উপর মত পার্থক্য করেছেন:

প্রথম অভিমত: যাদের মধ্যে তিনটি শর্ত পূর্ণ হবে: কোরবানীকারী তাদের খরচ চালানো, কোরবানীকারীর আত্মীয় হওয়া ও তার সাথে তারা একত্রে বসবাস করা। এটি মালেকী মাযহাব।

মালেকি মাযহাবের গ্রন্থ ‘আল-তাজ ওয়াল ইকলিল’ (৪/৩৬৪) তে এসেছে- “যদি তার সাথে বসবাস করে, তার আত্মীয় হয় এবং সে তার জন্য খরচ করে; এমনকি সে খরচ যদি দান হিসেবেও হয়”। তিনি তিন কারণে এর বৈধতা দিয়েছেন: আত্মীয়তা, একত্রে বসবাস করা এবং তার জন্য খরচ করা[সংক্ষেপিত ও সমাপ্ত]

দ্বিতীয় অভিমত: যাদের সকলের খরচদাতা একজন। এটি শাফেয়ি মাযহাবের পরবর্তী কিছু কিছু আলেমদের অভিমত।

তৃতীয় অভিমত: কোরবানকারীর সকল আত্মীয়-স্বজন; এমনকি তিনি যদি তাদের জন্য খরচ না করেন তারপরেও।

চতুর্থ অভিমত: যারা কোরবানীকারীর সাথে একত্রে বসবাস করে; যদিও তারা তার আত্মীয় না। খতিব আল-শারবিনী, শিহাব আল-রমলি, তাবলাওয়ি প্রমুখ পরবর্তী যামানার শাফেয়ি আলেম এ অভিমত অনুযায়ী আমল করেন। তবে আল্লামা ইবনে হাজার আল-হাইতামী এ অভিমতকে অসম্ভব জ্ঞান করেছেন।

শিহাব আল-রমলিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:

কোরবানীর সুন্নত কি একটিমাত্র পশু জবাই করার মাধ্যমে এমন একদল লোকের পক্ষ থেকে আদায় হতে পারে যারা এক বাড়ীতে বসবাস করেন; কিন্তু তাদের মাঝে কোন আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই?

জবাবে তিনি বলেন: হ্যাঁ; আদায় হতে পারে। পরবর্তী যামানার কিছু আলেম বলেন: যাদের জন্য তিনি খরচ করেন তাদের পক্ষ থেকে আদায় হওয়ার মতটি অগ্রগণ্য।[ফাতাওয়ার রমলি (৪/৬৭)]

ইবনে হাজার আল-হাইতামী বলেন:

এখানে এ উদ্দেশ্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যে, তার পুরুষ ও নারী আত্মীয়।

আবার এ সম্ভাবনাও রয়েছে যে, এখানে পরিবারের সদস্য দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে- যাদের সকলের খরচদাতা একজন; যদিও সে খরচ সদকা হিসেবে দেয়া হোক না কেন।

আবু আইয়ুব আনসারীর উক্তি: “ব্যক্তি তার নিজের পক্ষ থেকে ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে জবাই করবে” এ দুটো অর্থের সম্ভাবনা রাখে। আবার এ সম্ভাবনাও রয়েছে যে, এখানে বাহ্যিক অর্থই উদ্দেশ্য। অর্থাৎ সবাই একই ঘরে বসবাস করে। যদিও তাদের মাঝে কোন আত্মীয়তা নেই; কিন্তু তারা সকলে একই ঘরের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে। কোন কোন আলেম এ মতের পক্ষে দৃঢ়তা জ্ঞাপন করেছেন। কিন্তু এটি দূরবর্তী।[‘তুহফাতুল মুহতাজ’ (৯/৩৪৫) থেকে সংক্ষেপিত ও সমাপ্ত]

মোদ্দাকথা হচ্ছে- যে সন্তান বড় হয়ে বাবা থেকে আলাদা হয়ে স্বতন্ত্র বাড়িতে থাকে তার জন্য নিজের পক্ষ থেকে স্বতন্ত্র কোরবানী করার বিধান রয়েছে। পিতার কোরবানী তার জন্য যথেষ্ট হবে না। কারণ বর্তমানে সে তার পিতার পরিবারের সদস্য নয়; বরং সে স্বতন্ত্র পরিবারের কর্তা। আর সন্তান যদি কোরবানীর পশু কেনার অর্থ দিয়ে পিতাকে সহযোগিতা করে এর জন্য সে ইনশাআল্লাহ সওয়াব পাবে। কিন্তু, এটি হবে দান করার সওয়াব; কোরবানী করার সওয়াব নয়। আরও জানতে দেখুন: 41766 নং প্রশ্নোত্তর।

আল্লাহই ভাল জানেন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.