ভূমিকম্পের সময় পঠিতব্য শরিয়ত অনুমোদিত কোন দোয়া আছে কি?

প্রশ্ন ভূমিকম্পের সময় কোন দোয়াটি পড়া আবশ্যক?। ভূমিকম্পের সময় কোন দোয়াটি পড়া আবশ্যক?। আলহামদু লিল্লাহ।. এ পৃথিবীতে ভূমিকম্প আল্লাহর একটি মহা নিদর্শন। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে পরীক্ষা করেন; তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়া, ভয় প্রদর্শন করা কিংবা তাদেরকে শাস্তি দেয়ার মাধ্যমে। এই নিদর্শনগুলো সংঘটনকালে মানুষের কর্তব্য আল্লাহর সম্মুখে নিজের দুর্বলতা, অক্ষমতা, হীনতা ও মুখাপেক্ষিতাকে স্মরণ…

প্রশ্ন

ভূমিকম্পের সময় কোন দোয়াটি পড়া আবশ্যক?।

ভূমিকম্পের সময় কোন দোয়াটি পড়া আবশ্যক?।

আলহামদু লিল্লাহ।.

এ পৃথিবীতে ভূমিকম্প আল্লাহর একটি মহা নিদর্শন। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে পরীক্ষা করেন; তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়া, ভয় প্রদর্শন করা কিংবা তাদেরকে শাস্তি দেয়ার মাধ্যমে। এই নিদর্শনগুলো সংঘটনকালে মানুষের কর্তব্য আল্লাহর সম্মুখে নিজের দুর্বলতা, অক্ষমতা, হীনতা ও মুখাপেক্ষিতাকে স্মরণ করা। এগুলোকে স্মরণ করে দোয়া, রোনাজারি ও নত হওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া। যাতে করে আল্লাহ এই মহা বিপদ থেকে সকল মানুষকে মুক্তি দেন। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “আর অবশ্যই আপনার আগে আমারা বহু জাতির কাছে রাসূল পাঠিয়েছি; অতঃপর তাদেরকে অর্থসংকট ও দুঃখ-কষ্ট দিয়ে পাকড়াও করেছি, যাতে তারা রোনাজারি করে। তাদের কাছে যখন আমার শাস্তি এসেছিল তখন তারা রোনাজারি করল না কেন? বরং তাদের অন্তর কঠিন হয়েছিল এবং তারা যা করছিল শয়তান তা তাদের দৃষ্টিতে শোভাময় করেছিল। অতঃপর তাদেরকে যে উপদেশ করা হয়েছিল তারা যখন তা ভুলে গেল তখন আমারা তাদের জন্য প্রতিটি (আনন্দের) জিনিসের দরজা খুলে দিলাম। এভাবে তাদেরকে যা দেয়া হয়েছিল তারা যখন তা নিয়ে আনন্দিত তখন আমি অকস্মাৎ তাদেরকে পাকড়াও করি। তখনই তারা নিরাশ হয়ে যায়।”[সূরা আনআম, আয়াত: ৪২-৪৪]

এ কারণে ফিকাহবিদ আলেমগণ ভূমিকম্পের সময় বেশি বেশি ইস্তিগফার করা, দোয়া করা, আল্লাহর কাছে রোনাজারি করা ও দান করাকে মুস্তাহাব বলেন। যেমনি ভাবে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সময়ও এটি মুস্তাহাব।

আল্লামা যাকারিয়া আল-আনসারী (রহঃ) বলেন:

“ভূমিকম্প, বজ্রপাত ও তীব্র বাতাসের সময় প্রত্যেকের জন্য মুস্তাহাব হলো: দোয়াতে মশগুল হয়ে রোনাজারি করা, ঘরে একাকী নামায আদায় করা; যাতে করে গাফেল না হয়। কেননা যখন তীব্র বাতাস বইতো তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন:

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسأَلك خَيرهَا وَخير مَا فِيهَا وَخير مَا أرْسلت بِهِ وَأَعُوذ بك من شَرها وَشر مَا فِيهَا وَشر مَا أرْسلت بِهِ

(হে আল্লাহ্‌! আমি আপনার কাছে এই বাতাসের কল্যাণ চাই, এর মধ্যে যে কল্যাণ আছে সেটা চাই এবং যে কল্যাণ দিয়ে এটাকে পাঠানো হয়ে তা চাই এবং আমি আপনার কাছে বাতাসের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই, এর মধ্যে যে অনিষ্ট অন্তর্ভুক্ত আছে তা থেকে আশ্রয় চাই এবং যে অনিষ্টসহ এটাকে পাঠানো হয়েছে তা থেকে আশ্রয় চাই।)[সহিহ মুসলিম][সমাপ্ত][আসনাল মাতালিব শারহু রাওযুত তালিব (১/২৮৮), দেখুন: তুহফাতুল মুহতাজ (৩/৬৫)]

কিন্তু আমাদের জানামতে ভূমিকম্পের সময় বিশেষ কোন যিকির বা দোয়া পড়া মুস্তাহাব মর্মে সুন্নাহতে কোন দলিল নেই। বরঞ্চ ব্যক্তি তার ইচ্ছামত আল্লাহ্‌র রহমত ও সাহায্য চেয়ে দোয়া করবেন; যাতে করে আল্লাহ্‌ মানুষের উপর থেকে এই মুসিবত দূর করেন।

শাইখ বিন বায (রহঃ) বলেন: “ভূমিকম্প, চন্দ্রগ্রহণ, সূর্যগ্রহণ, প্রবল বাতাস ও বন্যা ইত্যাদি নিদর্শনাবালীর সময় আবশ্যক হলো আল্লাহ্‌র কাছে তাওবা করা, তাঁর কাছে রোনাজারি করা, তাঁর নিরাপত্তা প্রার্থনা করা, বেশি বেশি যিকির ও ইস্তিগফার করা। যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “কাজেই যখন তোমরা এর কিছু দেখতে পাবে, তখন ভীত বিহ্বল অবস্থায় আল্লাহর যিকির, দু’আ ও ইস্তিগফারে মগ্ন হবে।”[সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম] এ পরিস্থিতিতে গরীব-মিসকীনদের প্রতি অনুগ্রহ করা, সদকা করা মুস্তাহাব। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমরা দয়া কর; তাহলে তোমাদের প্রতি দয়া করা হবে”।[মুসনাদে আহমাদ] “দয়াশীলদের প্রতি দয়াবান দয়া করেন। জমিনে যারা আছে তোমরা তাদের প্রতি দয়া কর; তাহলে আসমানে যিনি আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।”[সুনানে তিরমিযি] তিনি আরও বলেন: “যে দয়া করে না; তার প্রতিও দয়া করা হয় না।”[সহিহ বুখারী] এবং উমর বিন আব্দুল আযিযের ব্যাপারে বর্ণিত আছে যে, ভূমিকম্প ঘটলে তিনি তাঁর গভর্নরদেরকে সদকা করার নির্দেশ দিতেন।”

তাছাড়া সব ধরণের অনিষ্ট থেকে নিরাপত্তা লাভ ও নিরাপদ থাকার অন্যতম উপায়: কর্তৃত্বশীলেরা অবিলম্বে মূর্খদেরকে (পাপীদের) সংযত করা, তাদেরকে সত্যের পথে চলতে বাধ্য করা, তাদের উপর আল্লাহ্‌র বিধান বাস্তবায়ন করা, সৎ কাজের আদেশ দেয়া ও অসৎ কাজের নিষেধ করা। যেমনটি আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী একে অপরের মিত্র, তারা সৎকাজের নির্দেশ দেয় ও অসৎকাজে নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। অচিরেই আল্লাহ্‌ তাদের প্রতি দয়া করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”[সূরা তাওবা, আয়াত: ৭১]

তিনি আরও বলেন: “আর নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তাকে সাহায্য করেন যে আল্লাহ্‌কে সাহায্য করে। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ শক্তিমান, পরাক্রমশালী। তারা এমন লোক যাদেরকে আমরা যমীনের বুকে ক্ষমতায়ন করলে সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং সৎকাজের নির্দেশ দেয় ও অসৎকাজে নিষেধ করে। আর সব বিষয়ের পরিণতি আল্লাহ্‌র কর্তৃত্বে।”[সূরা হাজ্জ, আয়াত: ৪০-৪১]

তিনি আরও বলেন: “আর যে কেউ আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে আল্লাহ তার জন্য (উত্তরণের) পথ করে দেবেন। এবং তিনি তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে রিযিক দান করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে তার জন্য আল্লাহ্‌ই যথেষ্ট।”[সূরা তালাক্ব, আয়াত: ২-৩] এই অর্থবোধক আয়াত অনেক।[সমাপ্ত]

[মাজমুউ ফাতাওয়া বিন বায (৯/১৫০-১৫২)]

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.