মানুষের সন্তুষ্টির বদলে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টিকে লক্ষ্য বানানোর উপায় কি?

প্রশ্ন কিভাবে আমি আল্লাহর সন্তুষ্টিটাকে আমার লক্ষ্য বানাতে পারব এবং মানুষ কী বলে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করব না? এক্ষেত্রে কোন বইগুলো আমাকে সাহায্য করতে পারে? কিভাবে আমি আল্লাহর সন্তুষ্টিটাকে আমার লক্ষ্য বানাতে পারব এবং মানুষ কী বলে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করব না? এক্ষেত্রে কোন বইগুলো আমাকে সাহায্য করতে পারে? আলহামদু লিল্লাহ।. একজন মুমিন ব্যক্তির মহান লক্ষ্য হবে…

প্রশ্ন

কিভাবে আমি আল্লাহর সন্তুষ্টিটাকে আমার লক্ষ্য বানাতে পারব এবং মানুষ কী বলে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করব না? এক্ষেত্রে কোন বইগুলো আমাকে সাহায্য করতে পারে?

কিভাবে আমি আল্লাহর সন্তুষ্টিটাকে আমার লক্ষ্য বানাতে পারব এবং মানুষ কী বলে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করব না? এক্ষেত্রে কোন বইগুলো আমাকে সাহায্য করতে পারে?

আলহামদু লিল্লাহ।.

একজন মুমিন ব্যক্তির মহান লক্ষ্য হবে রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি।

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “আল্লাহ্‌ মুমিন নর ও নারীদেরকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন— এমন জান্নাতসমূহের যেগুলোর নিম্নদেশে নহর প্রবাহিত, যেখানে তারা অনন্তকাল থাকবে। আর (ওয়াদা দিয়েছেন) উত্তম বাসস্থানসমূহের ঐ স্থায়ী জান্নাতে। আর আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি হচ্ছে সর্বাপেক্ষা বড় নেয়ামত। এটাই মহাসফলতা।”[সূরা তাওবা, আয়াত: ৭২]

সহিহ বুখারী (৬৫৪৯) ও সহিহ মুসলিমে (২৮২৯) আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তাআলা জান্নাতবাসীদেরকে বলবেন: ওহে জান্নাতীরা! তারা বলবে: ও আমাদের প্রভু লাব্বাইক (হাযির)। তখন তিনি বলবেন: তোমরা কি সন্তুষ্ট হয়েছ? তখন তারা বলবে: আমরা কেন সন্তুষ্ট হব না; আপনি আমাদেরকে যা দিয়েছেন আপনার অন্য কোন সৃষ্টিকে তা দেননি। তখন তিনি বলবেন: আমি তোমাদেরকে এর চেয়ে উত্তম নেয়ামত দিব। তারা বলবে: হে আমাদের প্রভু! এর চেয়ে উত্তম নেয়ামত কী? তখন তিনি বলবেন: আমি তোমাদের উপর আমার সন্তুষ্টি নাযিল করব; এরপর আর কখনও আমি তোমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হব না।”

একজন মুমিনের জীবনের নিশানা হওয়া উচিত এক আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি যার কোন শরীক নাই; এমন কি এতে যদি মানুষ অসন্তুষ্ট হয় তবুও। আর মুনাফিকের আলামত হচ্ছে মাখলুকের সন্তুষ্টি; এমনকি এতে যদি রাব্বুল আলামীন অসন্তুষ্ট হয় তবুও।

আল্লাহ্‌ তাআলা মুনাফিকদের ব্যাপারে বলেন: “তারা তোমাদের কাছে আল্লাহর কসম করে; যাতে তোমাদেরকে সন্তুষ্ট করতে পারে। অথচ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক হকদার যে, তারা তাঁকে সন্তুষ্ট করবে, যদি তারা ঈমানদার হয়ে থাকে।”[সূরা তাওবা, আয়াত: ৬২]

যে বিষয়গুলো বান্দাকে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অনুসন্ধানে সহযোগিতা করবে তা নিম্নরূপ:

এক:

বান্দা তার প্রভুকে চেনা এবং এই একীন রাখা যে, সবকিছু তাঁর হাতে। তিনিই এককভাবে সবকিছু পরিচালনা করেন। এককভাবে তিনিই উপরে উঠান ও নীচে নামান। তিনিই সম্মানিত করেন ও লাঞ্ছিত করেন। তিনি যা দেন তা প্রতিরোধ করার কেউ নেই। তিনি যা দেন না তা দেয়ার কেউ নেই। সকল মানুষ আল্লাহ্‌র জন্য বা তাদের নিজেদের জন্য কোন উপকার বা ক্ষতির মালিক নয়; মৃত্যু বা জীবনের বা অন্য কিছুর মালিক নয়।

যদি বান্দা এ একীন রাখতে পারে তাহলে তার অন্তর তার প্রভুর সাথে সম্পৃক্ত হয়। এ ঈমানের কারণে যে, মানুষ তার প্রভুর অনুমতি ছাড়া তার উপকার করতে পারবে না এবং তাঁর অনুমতি ছাড়া কোন ক্ষতি করতে পারবে না।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “জেনে রাখ! সমস্ত মানুষ যদি তোমার উপকার করার জন্য একত্রিত হয় তদুপরি তারা তোমার কোন উপকার করতে পারবে না; আল্লাহ্‌ যা লিখে রেখেছেন সেটা ছাড়া। অনুরূপভাবে তারা যদি তোমার ক্ষতি করার জন্য একত্রিত হয় তারা তোমার কোন ক্ষতিও করতে পারবে না; আল্লাহ্‌ যা লিখে রেখেছেন সেটা ছাড়া।”[সুনানে তিরমিযি (২৫১৬), আলবানী ‘সিলসিলা সহিহা’-তে (৫/৪৯৭) হাদিসটিকে ‘সহিহ’ বলেছেন]

দুই:

বান্দা এই একীন রাখা যে, তার প্রতি মানুষের ভালোবাসা ও সন্তুষ্টি তার প্রভু ও তার মাওলার অনুমতিক্রমেই। যদি সে তার প্রভুকে সন্তুষ্ট করে তাহলে তিনি মুমিন বান্দাদের অন্তরে তার ভালোবাসা ঢেলে দিবেন।

সুনানে তিরমিযিতে (৩২৬৭) বারা বিন আযেব (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: “এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল: ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! নিশ্চয় আমার পক্ষ থেকে প্রশংসা সুনাম এবং নিশ্চয় আমার পক্ষ থেকে নিন্দা দুর্নাম। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: এটা আল্লাহ্‌ তাআলার অধিকার।”[হাদিসটিকে আলবানী ‘সহিহুত তিরমিযি’-তে সহিহ বলেছেন]

একমাত্র আল্লাহ্‌ যদি কোন বান্দার স্তুতি বা প্রশংসা করেন তাহলে সেটা তার সুনাম। আর তিনি যদি বান্দার প্রতি অসন্তুষ্ট হন ও নিন্দা করেন তাহলে সেটা বান্দার কলঙ্ক। আর তিনি ছাড়া অন্য মানুষ তাঁর অনুমতি ছাড়া এই অধিকার রাখে না। হাদিসে এসেছে যে, আল্লাহ্‌ই মানুষের অন্তরে বান্দার প্রতি ভালোবাসা বা ঘৃণা সৃষ্টি করেন।

সহিহ বুখারী (৩২০৯) ও সহিহ মুসলিমে (২৬৩৭) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নিশ্চয় আল্লাহ্‌ যদি কোন বান্দাকে ভালোবাসেন তিনি জিব্রাইল (আঃ)কে ডেকে বলেন: নিশ্চয় আমি অমুককে ভালোবাসি; সুতরাং তুমিও তাকে ভালোবাস। তিনি বলেন: তখন জিব্রাইল (আঃ) তাকে ভালোবাসে। এরপর জিব্রাইল (আঃ) আসমানে ঘোষণা করে বলেন: নিশ্চয় আল্লাহ্‌ অমুককে ভালোবাসে; অতএব তোমরাও তাকে ভালোবাস। তখন আসমানবাসী তাকে ভালোবাসে। তিনি বলেন: এরপর তার জন্য জমিনেও গ্রহণযোগ্যতা তৈরী করে দেয়া হয়। আর যদি তিনি কোন বান্দাকে অপছন্দ করেন তিনি জিব্রাইলকে (আঃ) ডেকে বলেন: নিশ্চয় আমি অমুককে অপছন্দ করি; সুতরাং তুমিও তাকে অপছন্দ কর। তিনি বলেন: তখন জিব্রাইল (আঃ)ও তাকে অপছন্দ করে। এরপর সে আসমানবাসীদের মাঝে ঘোষণা দেয় যে, নিশ্চয় আল্লাহ্‌ অমুককে অপছন্দ করেন; অতএব তোমরাও তাকে অপছন্দ কর। তিনি বলেন: তখন তারাও তাকে অপছন্দ করে। এরপর জমিনও তার জন্য ঘৃণা তৈরী করে দেয়া হয়।”

তিন:

বান্দা এই একীন রাখবে যে, রাব্বুল আলামীনকে বাদ দিয়ে মানুষের সন্তুষ্টির দিকে ভ্রুক্ষেপ করাটা অবমাননাকর। এমন ব্যক্তি নিন্দিত; তার প্রশংসাকারী কেউ নেই। এমন ব্যক্তি লাঞ্ছিত; তাকে সাহায্যকারী কেউ নেই। আর যদি সে এক আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির তালাশ করে তাহলে মানুষকে সন্তুষ্ট করার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “আল্লাহ্‌র সাথে অন্য কোন উপাস্য সাব্যস্ত করো না। তাহলে তুমি নিন্দিত ও লাঞ্ছিত হয়ে পড়বে।”[সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত: ২২]

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি মানুষের অসন্তুষ্টি দিয়ে আল্লাহ্‌কে সন্তুষ্ট করে আল্লাহ্‌ মানুষকে তার প্রতি সন্তুষ্ট করে দেন। আর যে ব্যক্তি মানুষের সন্তুষ্টি দিয়ে আল্লাহ্‌কে অসন্তুষ্ট করে আল্লাহ্‌ তাকে মানুষের হাতে সোপর্দ করেন।”[সহিহ ইবনে হিব্বান (২৭৭); আলবানী ‘আস্‌সিলসিলা আস্‌-সাহিহা’ গ্রন্থে (২৩১১) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

কা’ব বিন মালেক (রাঃ) এর দিকে তাকান। কেমন ছিল তার সত্যবাদিতা ও এক আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির লক্ষ্য। যেহেতু তার এ ঈমান ছিল যে, তিনি যদি সত্য বলেন আল্লাহ্‌ তাকে রক্ষা করবেন। আর তার লক্ষ্য যদি হত মিথ্যা বলার মাধ্যমে মানুষের রোষানল থেকে বের হওয়া তাহলে হতে পারে আল্লাহ্‌ মানুষকে তার উপর ক্ষেপিয়ে তুলতেন।

কাব (রাঃ) তার তাওবার ঘটনায় বর্ণনা করেন যে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেন: আল্লাহ্‌র শপথ! নিশ্চয় আমি যদি দুনিয়াবাসী অন্য কারো কাছে বসতাম তাহলে আমি কোন একটা ওজর পেশ করে তার অসন্তুষ্টি থেকে বের হওয়াকে যৌক্তিক মনে করতাম; যেহেতু আমাকে বাদানুবাদ করার যোগ্যতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু আল্লাহ্‌র শপথ আমি জানি যে, আজ যদি আমি আপনার সাথে মিথ্যা কথা বলি তাহলে আপনি সে কথায় আমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন। কিন্তু আমার আশংকা হয় অচিরেই আল্লাহ্‌ আপনাকে আমার প্রতি অসন্তুষ্ট করে দিবেন। আর যদি আমি আপনার সাথে সত্য কথা বলি তাহলে আপনি আমার প্রতি রাগ করবেন। কিন্তু এর মাধ্যমে আমি আল্লাহ্‌র ক্ষমা পেতে চাই। না; আল্লাহ্‌র শপথ! আমার কোন ওজর ছিল না। আল্লাহ্‌র শপথ! আমি যে সময়ে যুদ্ধে যাইনি সে সময়ের চেয়ে অধিক শক্তিশালী ও স্বচ্ছল আমি আর কখনও ছিলাম না। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: এ লোক সত্য বলেছে। তুমি উঠে যাও; যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহ্‌ তোমার ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত দেন।”[সহিহ বুখারী (৪৪১৮) ও সহিহ মুসলিম (২৭৬৯)]

চার:

এ কথা জানা যে, মানুষকে সন্তুষ্ট করার কোন উপায় নেই। কেননা মানুষের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে জুলুম ও অজ্ঞতা। মানুষকে সন্তুষ্ট করা এমন এক লক্ষ্যবস্তু যাতে পৌঁছা যায় না। কেননা মানুষ তাদের প্রভুর প্রতিই সন্তুষ্ট নয়। সুতরাং তারা কি আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে?!

ইমাম বাইহাকী তাঁর ‘আল-যুহদুল কাবির’ কিতাবে (১৮০) সহিহ সনদে হাসান বছরি (রহঃ) থেকে সংকলন করেছেন যে, তাকে জিজ্ঞেস করা হল: “কিছু লোক আপনার মজলিসে আসে আপনার কোন একটি অসংলগ্ন কথা নিয়ে আপনার বিরুদ্ধে বিষোদগার করার জন্য। তখন তিনি বললেন: বিষয়টিকে হাল্কাভাবে নিন! আমি নিজেকে আল্লাহ্‌র নৈকট্যের প্রতি আগ্রহী করেছি; আমার আত্মা আগ্রহী হয়েছে। আমি নিজেকে জান্নাতের প্রতি আগ্রহী করেছি; আমার আত্মা আগ্রহী হয়েছে। আমি নিজেকে আয়তলোচন হুরদের প্রতি আগ্রহী করেছি; আমার আত্মা আগ্রহী হয়েছে। আমি নিজেকে মানুষ থেকে নিরাপদ থাকার প্রতি আগ্রহী করেছি; কিন্তু এর জন্য কোন উপায় পাইনি। আমি যখন দেখলাম মানুষ তার সৃষ্টিকর্তার প্রতি সন্তুষ্ট হয় না; তখন জানতে পারলাম তারা তাদের সমতুল্য মাখলুকের প্রতিও সন্তুষ্ট হবে না।”

ইমাম শাফেয়ি (রহঃ) ইউনুস বিন আব্দুল আ’লাকে বলেন: “হে আবু মুসা! আপনি যদি সকল মানুষকে সন্তুষ্ট করার সব ধরণের চেষ্টা করেন তবুও এর কোন উপায় নেই। অতএব, আপনি আপনার আমল ও নিয়তকে আল্লাহ্‌ তাআলার জন্যই একনিষ্ঠ করুন।”[ইমাম বাইহাকীর ‘শুআবুল ঈমান’ (৬৫১৮)]

আর বইয়ের ব্যাপারে কথা হল: এ বিষয়ে বিশেষভাবে কোন বই রচিত হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। তবে আমি প্রশ্নকারী ভাই ও সকল মুসলিমকে আল্লাহ্‌কে অধিক জানার উপদেশ দিচ্ছি। যখনই বান্দা তার প্রভুকে চিনবে তখনই তার লক্ষ্য হবে তার প্রভুর সন্তুষ্টি; আর এটাই যথেষ্ট। মানুষের অসন্তুষ্টি তার কোন ক্ষতি করবে না।

এ বিষয়ক ভাল বইয়ের মধ্যে রয়েছে ড. মুহাম্মদ আল-হুমুদ আল-নাজদির রচিত ‘আন-নাহজুল আসমা ফি শারহি আসমায়ি আল্লাহ্‌ আল-হুসনা’।

অনুরূপভাবে ইবনে রজব আল-হাম্বলি, ইবনুল কাইয়্যের বইগুলো বেশি বেশি অধ্যয়নের উপদেশ দিচ্ছি। এ বিষয়ে তাদের কথাগুলো সবচেয়ে উপকারী।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.