যে নারী রমযানের কাযা রোযার নিয়ত রাত থেকে না করে সকালে করত তার উপর কি করা আবশ্যকীয়?

প্রশ্ন আমার বান্ধবী প্রতি বছর রযমানের যে রোযাগুলো ভাঙ্গা পড়ত সেগুলোর কাযা পালন করত। কিন্তু রাত থেকে নিয়ত করত না। অর্থাৎ সে সকালে নিয়ত করত। সে জানত না যে, কাযা রোযার নিয়ত রাত থেকে করা ওয়াজিব। এভাবে রোযা পালনের হুকুম কী? তার উপর কি কাফ্‌ফারা পরিশোধের পাশাপাশি রোযাগুলো পুনরায় রাখতে হবে? নাকি অন্য কিছু? আমার…

প্রশ্ন

আমার বান্ধবী প্রতি বছর রযমানের যে রোযাগুলো ভাঙ্গা পড়ত সেগুলোর কাযা পালন করত। কিন্তু রাত থেকে নিয়ত করত না। অর্থাৎ সে সকালে নিয়ত করত। সে জানত না যে, কাযা রোযার নিয়ত রাত থেকে করা ওয়াজিব। এভাবে রোযা পালনের হুকুম কী? তার উপর কি কাফ্‌ফারা পরিশোধের পাশাপাশি রোযাগুলো পুনরায় রাখতে হবে? নাকি অন্য কিছু?

আমার বান্ধবী প্রতি বছর রযমানের যে রোযাগুলো ভাঙ্গা পড়ত সেগুলোর কাযা পালন করত। কিন্তু রাত থেকে নিয়ত করত না। অর্থাৎ সে সকালে নিয়ত করত। সে জানত না যে, কাযা রোযার নিয়ত রাত থেকে করা ওয়াজিব। এভাবে রোযা পালনের হুকুম কী? তার উপর কি কাফ্‌ফারা পরিশোধের পাশাপাশি রোযাগুলো পুনরায় রাখতে হবে? নাকি অন্য কিছু?

আলহামদু লিল্লাহ।.

প্রত্যেক ফরয রোযার জন্য রাত থেকে নিয়ত করা আবশ্যকীয়। এটি জমহুর আলেমের অভিমত। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি ফজরের পূর্ব থেকে রোযা রাখার নিয়ত পাকাপোক্ত করেনি তার রোযা নেই।”[সুনানে আবু দাউদ (২৪৫৪), সুনানে তিরমিযি (৭৩০), সুনানে নাসাঈ (২৩৩১)] সুনানে নাসাঈর ভাষ্যে রয়েছে: “যে ব্যক্তি ফজরের পূর্বে রাত থেকে রোযা রাখার নিয়তকে সুদৃঢ় করেনি তার রোযা নেই।”[আলবানী ‘সহিহু আবু দাউদ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

তিরমিযি (রহঃ) হাদিসটি উল্লেখ করার পর বলেন: “কোন কোন আলেমের নিকট এ হাদিসটির অর্থ হল: যে ব্যক্তি ফজর উদিত হওয়ার আগে রোযা রাখার দৃঢ় সংকল্প করেনি, রাত থেকে নিয়ত করেনি; সেটা রমযানের রোযা হোক কিংবা কাযা রোযা হোক কিংবা মানতের রোযা হোক; তার রোযা জায়েয হবে না।

আর নফল রোযা হলে সেটার নিয়ত সকালে করলেও জায়েয হবে। এটি শাফেয়ি, আহমাদ ও ইসহাকের অভিমত।”[সমাপ্ত]

ইবনে কুদামা (রহঃ) বলেন: “যদি ফরয রোযা হয়; যেমন রমযানের রোযা বা কাযা রোযা, মানতের রোযা, কাফ্‌ফারার রোযা; তাহলে রাত থেকে নিয়ত করা আমাদের ইমামের নিকট, মালেক ও শাফেয়ি…. এর নিকট শর্ত। এরপর তিনি পূর্বোক্ত হাদিসটি দিয়ে দলিল পেশ করেন।”[আল-মুগনী (৩/১০৯) থেকে সমাপ্ত]

ইমাম আবু হানিফা এ ক্ষেত্রে অধিকাংশ আলেমের সাথে মতভেদ করেছেন। তিনি রোযার কিছু প্রকারের ক্ষেত্রে দিনের বেলা থেকে নিয়ত করলে জায়েয হবে বলেছেন। তবে তিনি অধিকাংশ আলেমের সাথে এ ব্যাপারে একমত যে, রমযানের কাযা রোযার নিয়ত রাত থেকে না করলে সে রোযা শুদ্ধ হবে না। বরং হানাফি মাযহাবের কোন কোন আলেম এই মর্মে ইজমা উদ্ধৃত করেছেন।

আল-কাসানি আল-হানাফী ‘বাদায়িউস সানায়ি’ গ্রন্থে (২/৫৮৫) বলেন:

“সকল রোযার ক্ষেত্রে উত্তম হচ্ছে ফজর উদিত হওয়ার সময় নিয়ত করা; যদি সেটা সম্ভবপর হয় কিংবা রাত থেকে নিয়ত করা…। যদি ফজর উদিত হওয়ার পর নিয়ত করে এবং সে রোযাটি ঋণশ্রেণীয় হয়; তাহলে ইজমার ভিত্তিতে তা জায়েয হবে না।”[সমাপ্ত]

তিনি ইতিপূর্বে (২/৫৮৪) ঋণশ্রেণীয় রোযা দ্বারা হানাফী আলেমদের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেছেন যে, “তা হচ্ছে: কাযা রোযা, কাফ্‌ফারার রোযা ও সাধারণ মানতের রোযা।”[সমাপ্ত]

এর সাথে দেখুন: ইবনে আবেদীন-এর ‘রাদ্দুর মুহতার’ (২/৩৮০)।

আরও জানতে পড়ুন: 192428 নং প্রশ্নোত্তর।

পূর্বোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে আপনার বান্ধবী রমযানের কাযা রোযার নিয়ত দিনের বেলা থেকে করায় সকল ইমামের মতে তার রোযা শুদ্ধ হয়নি।

তার উপর ফরয হল ঐ দিনগুলোর রোযা পুনরায় রাখা। তবে তার উপর কোন কাফ্‌ফারা আবশ্যক নয়; যেমনটি ইতিপূর্বে 26865 নং প্রশ্নোত্তরে আলোচিত হয়েছে।

এই হুকুমটি তার সর্বশেষ বছরের রোযাগুলোর কাযা পালনের সাথে সংশ্লিষ্ট; যে রোযাগুলো পালনের সময় এখনও বাকী আছে। আর আগের বছরগুলোর রোযার ক্ষেত্রে ইবনে তাইমিয়ার মত কোন কোন আলেমের অভিমত হচ্ছে: অজ্ঞতাবশতঃ যে ইবাদত ভুলভাবে সম্পাদন করা হয়েছে এবং এর সময় পার হয়ে গেছে সে ইবাদতটি পুনরায় পালন করতে হবে না।

তাই যদি আপনার বান্ধবী এই অভিমতটিকে গ্রহণ করেন তাহলে আমরা আশা করছি যে, তার কোন গুনাহ হবে না।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.