যে সব ওজর বা অজুহাতের কারণে রমযানের রোযা না-রাখা বৈধ

প্রশ্ন রমযানের রোযা না-রাখাকে বৈধকারী অজুহাতগুলো কি কি? রমযানের রোযা না-রাখাকে বৈধকারী অজুহাতগুলো কি কি? আলহামদু লিল্লাহ।. নিঃসন্দেহে আল্লাহ্‌ তাআলার পক্ষ থেকে বান্দার জন্য সহজীকরণ হচ্ছে, তিনি শুধুমাত্র তাদের উপর রোযা রাখা ফরয করেছেন যাদের রোযা রাখার সক্ষমতা আছে এবং শরিয়ত অনুমোদিত ওজরের ভিত্তিতে রোযা না-রাখাকেও বৈধ করেছেন। যেসব শরয়ি ওজরের কারণে রোযা না-রাখা বৈধ…

প্রশ্ন

রমযানের রোযা না-রাখাকে বৈধকারী অজুহাতগুলো কি কি?

রমযানের রোযা না-রাখাকে বৈধকারী অজুহাতগুলো কি কি?

আলহামদু লিল্লাহ।.

নিঃসন্দেহে আল্লাহ্‌ তাআলার পক্ষ থেকে বান্দার জন্য সহজীকরণ হচ্ছে, তিনি শুধুমাত্র তাদের উপর রোযা রাখা ফরয করেছেন যাদের রোযা রাখার সক্ষমতা আছে এবং শরিয়ত অনুমোদিত ওজরের ভিত্তিতে রোযা না-রাখাকেও বৈধ করেছেন। যেসব শরয়ি ওজরের কারণে রোযা না-রাখা বৈধ সেগুলো হচ্ছে:

এক: রোগ:

রোগ মানে হচ্ছে, এমন সব অবস্থা যার কারণে ব্যক্তি সুস্থতার গণ্ডি থেকে বেরিয়ে যায়।

ইবনে কুদামা বলেন: রোগের কারণে রোযা না-রাখা বৈধ হওয়া মর্মে আলেমগণের ইজমা সংঘটিত হয়েছে। দলিল হচ্ছে আল্লাহ্‌র বাণী: “আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অসুস্থ থাকবে অথবা সফরে থাকবে সে অন্য দিনগুলোতে এ সংখ্যা পূর্ণ করবে।”[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫] সালামা বিন আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: যখন وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ (অর্থ- আর যাদের জন্য সিয়াম কষ্টসাধ্য তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদিয়া দেয়া তথা একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করা।) শীর্ষক আয়াতটি নাযিল হয়, তখন আমাদেরকে এ মর্মে ইখতিয়ার দেয়া হয়েছিল যে, যার ইচ্ছা হয় সে রোযা রাখতে পারে, আর কেউ রোযা রাখতে না চাইলে সে ফিদিয়া দিবে। এরপর যখন পরবর্তী আয়াত: شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَنْ كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ (অর্থ- রমযান মাস, এতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের হেদায়াতের জন্য এবং হেদায়াতের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে এ মাস পাবে সে যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে। তবে তোমাদের কেউ অসুস্থ থাকলে বা সফরে থাকলে অন্য দিনগুলোতে এ সংখ্যা পূরণ করবে।) নাযিল হল, তখন ফিদিয়া দেয়ার ইখ্‌তিয়ার রহিত হয়ে সুস্থ-সক্ষম লোকদের ওপর শুধুমাত্র রোযা রাখা জরুরী সাব্যস্ত হয়ে যায়। এ আয়াত পূর্বের আয়াতটিকে রহিত করে দেয়। সুতরাং রোযা রাখার কারণে যে অসুস্থ ব্যক্তি তার রোগ বেড়ে যাওয়া, কিংবা আরোগ্য লাভ বিলম্বিত হওয়া কিংবা কোন অঙ্গহানি ঘটার আশংকা করে তার জন্য রোযা না-রাখা বৈধ। বরং রোযা না-রাখাই সুন্নত; রোযা রাখা মাকরূহ। কেননা কোন কোন ক্ষেত্রে রোযা রাখার পরিণতি মৃত্যুও হতে পারে। সুতরাং এর থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক। অতএব, জেনে রাখুন, রোগের কষ্ট ব্যক্তিকে রোযা না-রাখার বৈধতা দেয়। পক্ষান্তরে, সুস্থ ব্যক্তি যদি কষ্ট ও ক্লান্তি অনুভব করেন, তদুপরি তার জন্য রোযা ভাঙ্গা জায়েয নয়। অর্থাৎ যদি রোযা রাখার কারণে শুধু ক্লান্তির কষ্ট হয় সেক্ষেত্রে।

দুই: সফর:

যে সফরে রোযা না-রাখা বৈধ সে সফরের ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে:

ক. এমন দীর্ঘ সফর হওয়া, যে সফরে নামায কসর করা যায়।

খ. সফরকালীন সময়ের মধ্যে মুকীম হয়ে যাওয়ার সংকল্প না করা।

গ. এ সফর কোন গুনার কাজে না হওয়া। বরং জমহুর আলেমের নিকট স্বীকৃত কোন উদ্দেশ্য সফর করা। কেননা, রোযা না-রাখার অনুমতি একটি রুখসত (ছাড়) ও সহজীকরণ। তাই পাপে লিপ্ত ব্যক্তি এ সুযোগ পেতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ: কারো ভ্রমণের ভিত্তি যদি গুনার উপর হয়; যেমন- ডাকাতি করার জন্য সফর করা।

(কোন ক্ষেত্রে সফরের অনুমোদিত রুখসত (ছাড়) প্রযোজ্য হবে না)

সর্বসম্মতিক্রমে দুইটি কারণে সফর অবস্থার ছাড় প্রযোজ্য হবে না:

১। যদি মুসাফির তার নিজ দেশে ফেরত আসে ও নিজ এলাকায় প্রবেশ করে; যে এলাকায় সে স্থায়ীভাবে বসবাস করে।

২। যদি মুসাফির ব্যক্তি কোন স্থানে সাধারণভাবে স্থায়ীভাবে থাকার নিয়ত করে, কিংবা মুকীম সাব্যস্ত হয়ে যাওয়ার মত সময়কাল অবস্থান করার নিয়ত করেন এবং সে স্থানটি অবস্থান করার উপযুক্ত স্থান হয় তাহলে সেক্ষেত্রে তিনি মুকীম হয়ে যাবেন। তখন তিনি নামাযগুলো পরিপূর্ণ সংখ্যায় আদায় করবেন, রোযা রাখবেন; রোযা ছাড়বেন না; যেহেতু তার সফরের হুকুম শেষ হয়ে গেছে।

তিন: গর্ভধারণ ও দুধ পান করানো

ফিকাহ শাস্ত্রে বিশেষজ্ঞ আলেমগণ একমত যে, গর্ভবতী ও দুগ্ধ-দানকারিনী নারীর জন্য রমযানের রোযা না-রাখা বৈধ; এই শর্তে যে তারা নিজেদের কিংবা সন্তানের অসুস্থতার কিংবা রোগ বৃদ্ধির, কিংবা ক্ষতির কিংবা মৃত্যুর আশংকা করে। এই রুখসত বা ছাড়ের পক্ষে দলিল হচ্ছে আল্লাহ্‌র বাণী: “আর যে ব্যক্তি অসুস্থ থাকবে কিংবা সফরে থাকবে সে অন্য দিনগুলোতে এ সংখ্যা পূর্ণ করবে।” এখানে রোগ দ্বারা যে কোন রোগ উদ্দেশ্য নয়; কেননা যে রোগের কারণে রোযা রাখতে অসুবিধা হয় না সে রোগের কারণে রোযা ভাঙ্গার অবকাশ নেই। এখানে রোগ রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে, যে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রোযা রাখলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। রোগ দ্বারা এটাই উদ্দেশ্য। এখানে এ অর্থ পাওয়া গেছে। তাই এ বিষয়দ্বয় রোযা না-রাখার অবকাশের আওতায় পড়বে। আরেকটি দলিল হচ্ছে আনাস বিন মালিক আল-কা’বি (রাঃ) এর হাদিস: রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ্‌ মুসাফিরের উপর থেকে রোযা ও অর্ধেক নামায মওকুফ করেছেন এবং গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিনী নারীর উপর থেকে রোযা মওকুফ করেছেন। হাদিসের অন্য একটি রেওয়ায়েতে الحامل أو المرضع শব্দের পরিবর্তে الحبلى والمرضع শব্দদ্বয় এসেছে।

চার: বার্ধক্য ও জরাগ্রস্ততা:

বার্ধক্য ও জরাগ্রস্ততা নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করবে:

জ্বরাগ্রস্ত বৃদ্ধ: যার শক্তি নিঃশেষ হয়ে গেছে কিংবা তিনি নিজে মৃত্যুর উপক্রম, প্রতিদিন ক্ষয় হতে হতে তিনি মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।

এমন রুগ্ন ব্যক্তি যার সুস্থতার কোন আশা নেই; তার ব্যাপারে সবাই হতাশ।

এছাড়া বয়স্ক বৃদ্ধা।

উল্লেখিত ব্যক্তিবর্গের রোযা না-রাখার পক্ষে দলিল হচ্ছে আল্লাহ্‌র বাণী, “আর যাদের জন্য সিয়াম কষ্টসাধ্য তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদিয়া দেয়া তথা একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করা।”[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ১৮৪] ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, এ আয়াতে কারীমা রহিত হয়ে যায়নি। এ আয়াতে কারীমা (এর বিধান) বয়স্ক বৃদ্ধ ও বৃদ্ধার ক্ষেত্রে; যারা রোযা রাখতে পারেন না, তারা রোযার পরিবর্তে প্রতিদিন একজন মিসকীনকে খাদ্য দিবেন।

পাঁচ: ক্ষুধা ও তৃষ্ণার ফলে অস্বাভাবিক দুর্বলতা:

তীব্র ক্ষুধা কিংবা প্রচণ্ড তৃষ্ণা যাকে অস্বাভাবিক দুর্বল করে ফেলেছে; সেই ব্যক্তি তার জীবন বাঁচানোর পরিমাণ খাদ্য খাবে এবং সে দিনের অবশিষ্টাংশ উপবাস কাটাবে। আর এ রোযাটি কাযা পালন করবে।

ক্ষুধা ও তৃষ্ণার অস্বাভাবিক দুর্বলতার সাথে আলেমগণ শত্রুর সাথে সম্ভাব্য কিংবা সুনিশ্চিত মোকাবিলার ক্ষেত্রে দুর্বল হয়ে পড়াকেও অন্তর্ভুক্ত করেছেন; যেমন শত্রুর দ্বারা অবরুদ্ধ হলে: যদি গাজী (যোদ্ধা) ব্যক্তি সুনিশ্চিতভাবে কিংবা প্রবল ধারণার ভিত্তিতে যুদ্ধের বিষয়টি জানেন যেহেতু তিনি শত্রুর মোকাবিলাতে রত রয়েছেন এবং রোযা রাখার কারণে শারীরিক দুর্বলতার আশংকা করেন; অথচ তিনি মুসাফির নন এমতাবস্থায় তার জন্য যুদ্ধের পূর্বে রোযা ভেঙ্গে ফেলা জায়েয আছে।

ছয়: জবরদস্তির শিকার:

জবরদস্তি হচ্ছে: শাস্তির হুমকি দেওয়ার মাধ্যমে এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে কোন কাজ করতে কিংবা না- করতে বাধ্য করা; যে ব্যাপারে সে ব্যক্তি নিজে থেকে রাজি নয়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *