সেজদার মধ্যে কি যয়ীফ হাদিস দিয়ে দোয়া করতে পারবে?

প্রশ্ন আমি জানতে চাই নিম্নোক্ত হা দিস ও দোয়াটি কি সহিহ; নাকি সহিহ না? যদি সহিহ হয় তাহলে এ দোয়াটি কি আমি সেজদাতে বা তাশাহ্‌হুদে পড়তে পারব? আর যদি সহিহ না হয় এ দোয়াটি তাশাহ্‌হুদে কিংবা সেজদাতে পড়া হলে সেটা কি বিদাত হবে? হাদিসটি হচ্ছে: আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি…

প্রশ্ন

আমি জানতে চাই নিম্নোক্ত হা দিস ও দোয়াটি কি সহিহ; নাকি সহিহ না? যদি সহিহ হয় তাহলে এ দোয়াটি কি আমি সেজদাতে বা তাশাহ্‌হুদে পড়তে পারব? আর যদি সহিহ না হয় এ দোয়াটি তাশাহ্‌হুদে কিংবা সেজদাতে পড়া হলে সেটা কি বিদাত হবে? হাদিসটি হচ্ছে: আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক দোয়া করেছেন। আমরা সেগুলোর কোনটি মুখস্ত করিনি। তাই রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললাম: ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আপনি অনেক দোয়া করেছেন অথচ আমরা এর কোনটি মুখস্ত পারি না। তখন তিনি বললেন: আমি কি তোমাদেরকে এমন কোন দোয়া বলে দিব না যা সকল দোয়াকে শামিল করবে? তোমরা বলবে:اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُك مِن خَيرِ ما سأَلَكَ مِنْهُ نبيُّكَ مُحَمَّدٌ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم ، وأَعُوذُ بِكَ من شَرِّ ما اسْتَعاذَ مِنْهُ نَبيُّكَ مُحمَّدٌ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم ، وَأَنْتَ المُسْتَعَانُ ، وعليْكَ البلاغُ ، ولا حَوْلَ ولا قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ(হে আল্লাহ্! আপনার নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার কাছে যে কল্যাণগুলো প্রার্থনা করেছেন আমিও আপনার কাছে সেগুলো প্রার্থনা করি। আপনার নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার কাছে যে অকল্যাণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন আমিও আপনার কাছে সেসব অকল্যাণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি। আপনিই সাহায্যস্থল। পৌঁছানোর দায়িত্ব আপনার। কোন উপায়-সামর্থ্য নেই, কোন শক্তি নেই আল্লাহ ছাড়া।)[সুনানে তিরমিযি]

আমি জানতে চাই নিম্নোক্ত হা দিস ও দোয়াটি কি সহিহ; নাকি সহিহ না? যদি সহিহ হয় তাহলে এ দোয়াটি কি আমি সেজদাতে বা তাশাহ্‌হুদে পড়তে পারব? আর যদি সহিহ না হয় এ দোয়াটি তাশাহ্‌হুদে কিংবা সেজদাতে পড়া হলে সেটা কি বিদাত হবে? হাদিসটি হচ্ছে: আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক দোয়া করেছেন। আমরা সেগুলোর কোনটি মুখস্ত করিনি। তাই রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললাম: ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আপনি অনেক দোয়া করেছেন অথচ আমরা এর কোনটি মুখস্ত পারি না। তখন তিনি বললেন: আমি কি তোমাদেরকে এমন কোন দোয়া বলে দিব না যা সকল দোয়াকে শামিল করবে? তোমরা বলবে:

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُك مِن خَيرِ ما سأَلَكَ مِنْهُ نبيُّكَ مُحَمَّدٌ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم ، وأَعُوذُ بِكَ من شَرِّ ما اسْتَعاذَ مِنْهُ نَبيُّكَ مُحمَّدٌ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم ، وَأَنْتَ المُسْتَعَانُ ، وعليْكَ البلاغُ ، ولا حَوْلَ ولا قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ

(হে আল্লাহ্! আপনার নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার কাছে যে কল্যাণগুলো প্রার্থনা করেছেন আমিও আপনার কাছে সেগুলো প্রার্থনা করি। আপনার নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার কাছে যে অকল্যাণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন আমিও আপনার কাছে সেসব অকল্যাণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি। আপনিই সাহায্যস্থল। পৌঁছানোর দায়িত্ব আপনার। কোন উপায়-সামর্থ্য নেই, কোন শক্তি নেই আল্লাহ ছাড়া।)[সুনানে তিরমিযি]

আলহামদু লিল্লাহ।.

উল্লেখিত হাদিসটি ইমাম তিরমিযি (৩৫২১) লাইছ বিন আবু সুলাইম এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন। হাফেয ইবনে হাজার (রহঃ) ‘তাকরিবুত তাহযীব’ গ্রন্থে (২/৪৬৪) বলেন: “সাদুক (সত্যবাদী), তার মুখস্তশক্তিতে মারাত্মক স্খলন ঘটেছে। এতে তার হাদিসগুলো নির্ণয় করা যায়নি বিধায় বর্জন করা হয়েছে।”[সমাপ্ত]

এ হাদিসটিকে শাইখ আলবানী (রহঃ) ‘যয়ীফুত তিরমিযি’ গ্রন্থে যয়ীফ (দুর্বল) বলেছেন।

তবে হাদিসে উল্লেখিত এ দোয়াটি অন্য এক হাদিসের মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়েছে। এখানে যে ভাষ্যে উদ্ধৃত হয়েছে এর চেয়ে দীর্ঘ ভাষ্যে। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে এ দোয়াটি শিখিয়েছেন।

اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنَ الْخَيْرِ كُلِّهِ عَاجِلِهِ وَآجِلِهِ، مَا عَلِمْتُ مِنْهُ وَمَا لَمْ أَعْلَمْ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الشَّرِّ كُلِّهِ، عَاجِلِهِ وَآَجِلِهِ مَا عَلِمْتُ مِنْهُ، وَمَا لَمْ أَعْلَمْ، اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ مَا سَأَلَكَ عَبْدُكَ وَنَبِيُّكَ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا عَاذَ مِنْهُ عَبْدُكَ وَنَبِيُّكَ، اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَمَا قَرَّبَ إِلَيْهَا مِنْ قَوْلٍ أَوْ عَمَلٍ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ وَمَا قَرَّبَ إِلَيْهَا مِنْ قَوْلٍ أَوْ عَمَلٍ ، وَأَسْأَلُكَ أَنْ تَجْعَلَ كُلَّ قَضَاءٍ تَقْضِيهِ لِي خَيْرًا

(অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে সকল কল্যাণ প্রার্থনা করছি সেটা আসন্ন হোক অথবা বিলম্বে হোক, সেটা আমার জানার ভিতরে হোক অথবা আমার অজানা হোক। আর আমি সকল অকল্যাণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। সেটা আসন্ন হোক অথবা বিলম্বে হোক। সেটা আমার জানার ভিতরে হোক অথবা আমার অজানা হোক। হে আল্লাহ! আপনার বান্দা ও আপনার নবী আপনার কাছে যেসব কল্যাণ প্রার্থনা করেছেন আমিও সেসব কল্যাণ প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আপনার বান্দা ও নবী আপনার কাছে যেসব অকল্যাণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন আমিও সেসব অকল্যাণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত প্রার্থনা করছি এবং জান্নাতের নৈকট্য অর্জন করিয়ে দিবে এমন কথা ও কাজের প্রার্থনা করছি। আর জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং জাহান্নামে নিয়ে যাবে এমন কথা ও আমল থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আরও প্রার্থনা করছি- আপনি আমার জন্য যে ভাগ্য নির্ধারণ করে রেখেছেন সেটা যেন ভাল হয়।)

তবে দোয়া যদি ভাল, উপযুক্ত ভাষ্যে হয় এবং ভাব সঠিক হয় তাহলে এমন কথা দিয়ে দোয়া করা জায়েয। এমনকি সেট যদি দুর্বল হাদিসে বর্ণিত হয় তবুও। বরং সেটা যদি মূলতই কোন হাদিস বা আছারে বর্ণিত না হয় তবুও। বান্দা তার নামাযে দোয়া করার জন্য তার কাছে পছন্দনীয় ও অবস্থার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণবহ যে কোন দোয়া নির্বাচন করতে পারে। তবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত দোয়া করা অধিক ভাল ও অধিক বরকতপ্রাপ্তির উপযুক্ত। তবে তা শর্ত নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “এরপর বান্দা তার পছন্দনীয় দোয়া বেছে নিয়ে দোয়া করবে।”[সহিহ বুখারী (৮৩৫) ও সহিহ মুসলিম (৪০২)] এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “আর সিজদাতে সাধ্যানুযায়ী দোয়া কর। কেননা তোমাদের সেজদার দোয়া কবুল হওয়ার অধিক উপযুক্ত।”[সহিহ মুসলিম (৪৭৯)]

আরও বেশি জানতে উন্মুক্ত দোয়া ও বিশেষিত দোয়ার হুকুম পড়ুন: 102600 নং প্রশ্নোত্তরে।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.