যে সব জায়নামাযে কাবার ছবি কিংবা পবিত্র স্থানসমূহের ছবি আছে সে সব জায়নামাযে নামায পড়ার বিধান

প্রশ্ন নামাযের জায়নামাযে কাবার ছবি ও পবিত্র স্থানগুলোর ছবি মাড়ানো কি হারাম? যে সকল জায়নামাযে পবিত্র স্থানগুলোর ছবি আছে সে সকল জায়নামায বর্জন করার একটি প্রচারণা রয়েছে; যাতে করে সে ছবিগুলো পা দিয়ে মাড়ানো না হয়। এ বিষয়ে শরিয়তের বিধান কি? ইসলাম ও মুসলমানদের পক্ষ থেকে আল্লাহ্‌আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিন। নামাযের জায়নামাযে কাবার ছবি ও…

প্রশ্ন

নামাযের জায়নামাযে কাবার ছবি ও পবিত্র স্থানগুলোর ছবি মাড়ানো কি হারাম? যে সকল জায়নামাযে পবিত্র স্থানগুলোর ছবি আছে সে সকল জায়নামায বর্জন করার একটি প্রচারণা রয়েছে; যাতে করে সে ছবিগুলো পা দিয়ে মাড়ানো না হয়। এ বিষয়ে শরিয়তের বিধান কি? ইসলাম ও মুসলমানদের পক্ষ থেকে আল্লাহ্‌আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিন।

নামাযের জায়নামাযে কাবার ছবি ও পবিত্র স্থানগুলোর ছবি মাড়ানো কি হারাম? যে সকল জায়নামাযে পবিত্র স্থানগুলোর ছবি আছে সে সকল জায়নামায বর্জন করার একটি প্রচারণা রয়েছে; যাতে করে সে ছবিগুলো পা দিয়ে মাড়ানো না হয়। এ বিষয়ে শরিয়তের বিধান কি? ইসলাম ও মুসলমানদের পক্ষ থেকে আল্লাহ্‌আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিন।

আলহামদু লিল্লাহ।.

যে সব জিনিসের প্রাণ নাই; যেমন: জড়বস্তু ও উদ্ভিদ ইত্যাদি; সেগুলোর ছবি আঁকায় কোন গুনাহ নেই। কাবা ও পবিত্র স্থানগুলোর ছবি আঁকা এর মধ্যে পড়বে; যদি এতে মানুষের ছবি না থাকে।

তবে কোন নামাযীর সামনে বা তার জায়নামাযে কোন প্রকার ছবি না থাকাই বাঞ্ছনীয়; যাতে করে ছবিগুলো তার মনোযোগ বিঘ্নিত না করে। ইমাম বুখারী (৩৭৩) ও ইমাম মুসলিম (৫৫৬) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কারুকাজ বিশিষ্ট একটি কাপড়ে নামায পড়লেন এবং একবার কারুকাজের দিকে তাঁর দৃষ্টি গেল। নামায শেষে তিনি বললেন: আমার এ কাপড়টি আবু জাহমের কাছে নিয়ে যাও এবং আবু জাহমের আনবিজানী (শামের একটি স্থানে উৎপাদিত) কাপড়টি নিয়ে আস। কারণ একটু আগে এ কাপড়টি আমার নামাযে মনোযোগ নষ্ট করতে যাচ্ছিল। হিশাম বিন উরওয়া তাঁর পিতা থেকে তিনি আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: নামাযে কারুকাজগুলোর উপর আমার দৃষ্টি যাচ্ছিল। তাই আমার আশংকা হচ্ছিল এটি আমাকে ফিতনায় ফেলে দিবে।

আনবিজানী: এমন মোটা কাপড় যাতে কোন নকশা বা কারুকাজ নাই।

নকশাকৃত ও কারুকাজ খচিত এসব জায়নামাযে নামায পড়া মাকরুহ হওয়ার কারণ হল যেহেতু এগুলো নামাযীর মনোযোগ নষ্ট করে। এজন্য নয় যে, এতে পবিত্র স্থানগুলোকে পা দিয়ে মাড়িয়ে অসম্মানিত করা হচ্ছে; যেমনটি প্রশ্নে উল্লেখ করা হয়েছে। আমাদের দৃষ্টিতে এতে কোন অসম্মান হচ্ছে না। বরং এ ধরণের জায়নামাযের মালিকেরা সাধারণত সচেতন থাকেন এবং জায়নামাযের যে অংশে পবিত্র স্থানগুলোর ছবি নাই সে অংশে তারা পা রাখেন।

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) কে এমন জায়নামাযে নামায পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় যেগুলোতে মসজিদের ছবি আছে। জবাবে তিনি বলেন: আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে ইমামের জায়নামাযে মসজিদের ছবি থাকা বাঞ্ছনীয় নয়। যেহেতু হতে পারে এটি ইমামের মনোযোগ বিঘ্নিত করবে, তার দৃষ্টিকে আকর্ষণ করবে। এভাবে নামাযে ত্রুটি ঘটাবে। এ কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নকশাবিশিষ্ট কাপড়ে নামায পড়েছিলেন এবং একবার নকশার দিকে তাঁর দৃষ্টি পড়ে যায় তখন নামায শেষে তিনি বলেন: “আমার এ কাপড়টি আবু জাহমের কাছে নিয়ে যাও এবং আবু জাহমের আনবিজানী (শামের একটি স্থানে উৎপাদিত) কাপড়টি নিয়ে আস। কারণ একটু আগে এ কাপড়টি আমার নামাযে মনোযোগ নষ্ট করতে যাচ্ছিল।” আয়েশা (রাঃ) এর হাদিস হিসেবে সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমে বর্ণিত।

যদি ধরে নেয়া হয় যে, এর দ্বারা ইমামের মনোযোগ নষ্ট হবে না; যেহেতু ইমাম অন্ধ কিংবা বহুবার দেখতে দেখতে তার কাছে এটি উল্লেখযোগ্য কিছু নয় ও নজর দেয়ার মত কিছু নয়— সেক্ষেত্রে আমরা এতে নামায পড়ায় কোন অসুবিধা দেখছি না। আল্লাহ্‌ই তাওফিকদাতা।[মাজমুউ ফাতাওয়াস শাইখ বিন উছাইমীন (১২/৩৬২)]

স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্রে (৬/১৮১) এসেছে:

প্রশ্ন: যে কার্পেটগুলোর উপর ইসলামী স্থাপনার আকৃতি অংকিত আছে; ঠিক বর্তমানে মসজিদগুলোর কার্পেটগুলো যেমন— সেগুলোর উপর নামায পড়ার হুকুম কি? যদি কার্পেটের উপর ক্রশের ছবি থাকে এমন কার্পেটে নামায পড়ার হুকুম কি? ছবিটিকে ক্রশ হিসেবে সাব্যস্ত করার জন্য দুই পাশের রেখাদ্বয় সমান এবং নীচের রেখা লম্বা ও উপরের রেখা খাটো হতে হবে; নাকি ক্রস আকৃতির যে কোন রেখাদ্বয়ই ক্রশ। আশা করি আপনারা এ বিষয়টি আমাদেরকে অবহিত করবেন; যেহেতু এ মুসিবত ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। আল্লাহ্‌আপনাদেরকে হেফাযত করুন।

জবাব:

এক. মসজিদগুলো আল্লাহ্‌র ঘর। যে ঘরগুলো নামায আদায় করা এবং সকাল-সন্ধ্যায় মনোযোগ, অনুনয়-বিনয় ও আল্লাহর ভয়ভীতি নিয়ে তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করা (তাসবিহ পাঠ)-র জন্য নির্মিত। মসজিদের কার্পেট ও দেয়ালে নকশা করলে সেটা আল্লাহ্‌র স্মরণে বিঘ্ন ঘটায়, মুসল্লিদের মনোযোগের অনেকটুকু নষ্ট করে। তাই সলফে সালেহীনদের অনেকে নকশা করাকে অপছন্দ করতেন (মাকরুহ জানতেন)। তাই মুসলমানদের উচিত মহা পুরস্কার ও অধিক সওয়াব পাওয়ার আশায় এমন নকশা থেকে তাদের মসজিদগুলোকে মুক্ত রাখা; যাতে করে রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য অর্জনের স্থানসমূহ থেকে মনোযোগ নষ্টকারী জিনিসগুলো দূর করে পরিপূর্ণ ইবাদতের পরিবেশ বজায় রাখা যায়। তবে এ ধরণের কার্পেটের উপর নামায পড়া শুদ্ধ।

দুই. ক্রশ হচ্ছে খ্রিস্টানদের প্রতীক। তাদের উপাসনালয়ে তারা এ প্রতীকটি রাখে, এটাকে সম্মান করে এবং এ প্রতীককে একটি মিথ্যা ঘটনা ও বাতিল বিশ্বাসের চিহ্ণ গণ্য করে। সে বিশ্বাসটি হল: মরিয়ম তনয় ঈসা আলাইহিস সালামের ক্রশবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা। এ বিশ্বাসের ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌তাআলা ইহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে মিথ্যাবাদী ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন: “অথচ তারা তাকে হত্যা করেনি, ক্রশবিদ্ধও করেনি; বরং তারা ধাঁধায় পড়েছিল।” তাই মুসলমানদের জন্য তাদের নামাযের কার্পেটে বা এ ধরণের কিছুতে ক্রশ রাখা জায়েয নয়; ক্রশকে থাকতে দেয়া উচিত নয়। বরঞ্চ তাদের উপর আবশ্যক এটিকে মুছে ফেলে, এর রেখাগুলো নিশ্চিহ্ন করা; যাতে করে নিন্দনীয় বিষয় থেকে দূরে থাকা যায় এবং খ্রিস্টানদের সাথে সাধারণ সাদৃশ্য গ্রহণ থেকে; এবং তাদের সম্মানযোগ্য বিষয়গুলোর সাথে বিশেষ সাদৃশ্য গ্রহণ থেকে ঊর্ধ্বে থাকা যায়। এক্ষেত্রে আড়াআড়ি রেখাটি লম্বালম্বি রেখার চেয়ে দীর্ঘ হওয়া বা সমান হওয়া কিংবা উপরের অংশের রেখা নীচের অংশের রেখার চেয়ে খাটো হওয়া বা সমান হওয়ার মধ্যে কোন তফাৎ নাই।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.